বাংলাদেশি ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় বিশেষজ্ঞরা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২০, ০৮:২৯ পিএম

মহামারি করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মোকাবেলায় ভ্যাকসিনকেই সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশ্বে শতাধিক ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে অল্প কয়েকটি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে। বাংলাদেশেও গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। 

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দেশের বিশেষজ্ঞ এবং ড্রাগ নিয়ন্ত্রকরা বলেছেন, তারা গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সম্ভাব্য কভিড -১৯ ভ্যাকসিনের পরবর্তী পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের টিকাটি প্রাণীর ওপর প্রাথমিক পরীক্ষায় উৎসাহব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছে।

কভিড -১৯-এর জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা পরবর্তী ধাপের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছি। যদি তারা সফল হয়, তবে, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা হবে।

তিনি বলেন, সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি কয়েক কোটি বাংলাদেশিকে মারাত্মক ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে এটি একটি বিশাল কাজ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সংস্থাটি পাঁচটি খরগোশের ওপর টিকাটির প্রাথমিক পরীক্ষা চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং উৎসাহব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছে জানানোর পর ড, শহীদুল্লাহর এ মন্তব্য এলো।

গ্লোব বায়োটেকের মুখপাত্র ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি যে খরগোশের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং আমরা রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করছি এবং এই অ্যান্টিবডিগুলো তাদের অ্যান্টিজেনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে তুলবে।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বহুজাতিক ওষুধ সংস্থার প্রতিযোগিতার ভেতর এই মাসের শুরুর দিকে সংস্থাটি একটি সম্ভাব্য কভিড -১৯ ভ্যাকসিন নির্মাতা হিসাবে আত্মপ্রকাশের দাবি করে।

গ্লোব বায়োটেক বলেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তারা ২০২০ সালের মধ্যে একটি কার্যকর টিকা তৈরির এবং পরবর্তী তৃতীয় ধাপে মানুষের ওপর পরীক্ষা সম্পন্ন করার আশা করে।

কোম্পানির গবেষণা শাখার দায়িত্বে থাকা মাহমুদ বলেন, ৮ মার্চ দেশে কভিড-১৯ সংক্রমণের প্রথম ঘটনার পরপরই গ্লোব বায়োটেক প্রথম বাংলাদেশি সংস্থা হিসাবে কাজ শুরু করে।

মেডিকেল রিসার্চ ওয়াচডগস-এর রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বজুড়ে ১০০ টিরও বেশি সংস্থা এখন পর্যন্ত ১৪০ টি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন তৈরির একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

এর মধ্যে ১১ টি সংস্থা মানুষের ওপর পরীক্ষার প্রথম ধাপে, আটটি দ্বিতীয় এবং তিনটি তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এখন পর্যন্ত একটি চীনা সংস্থা নির্দিষ্ট শর্তে রোগীদের ওপর তাদের টিকা প্রয়োগে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।

মাহমুদ বলেন, পাঁচটি খরগোশের ওপর সফল প্রাথমিক পরীক্ষার পরে তারা মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানোর আগে ইঁদুর এবং আরো খরগোশের ওপর পরীক্ষা চালাবেন। আমরা অ্যান্টিবডিটির সত্যতা নিরূপণ করতে খরগোশের পাশাপাশি ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করবো এবং এই ট্রায়ালটি সম্পন্ন করার জন্য আমাদের ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন সমীক্ষা সাধারণত কভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনভাইরাস ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তাদের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরির চেষ্টা করে। আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী কারণ আমরা প্রাণীর মডেলের প্রাথমিক পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।

তবে, শহীদুল্লাহ বলেন, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডকে অবশ্যই যথাযথ গবেষণা প্রোটোকল অনুসরণ করতে হবে। কেননা, কোনো ভ্যাকসিন তৈরির জন্য মানুষের ওপর পরীক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। ভ্যাকসিন তৈরি সাধারণত দীর্ঘ সময় নেয়। যদিও বিশ্ব এখন জীবন ও জীবিকার ওপর বিধ্বংসী প্রভাবসহ বিশ্বব্যাপী মহামারিকে সামনে রেখে দ্রুক কার্যকর টিকা তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে।

গ্লোব বায়োটেকের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশীদ বলেছেন, তাদের সংস্থা উন্নত প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী’-সজ্জিত এবং আমরা আশা করি, এই বছরের ডিসেম্বর নাগাদ সমস্ত প্রয়োজনীয় গবেষণা প্রোটোকল সমাপ্ত করে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে।

জাতীয় ও কর্পোরেট লাভের তুলনায় বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান সত্ত্বেও ধনী দেশগুলো অনুমোদনের আগেই সম্ভাব্য টিকার জন্য আদেশ দিচ্ছে। তাই, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কখন জীবন রক্ষাকারী টিকা পাওয়া যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

চীন তাদের বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা গবেষণার চূড়ান্ত পর্যায়ের কাছাকাছি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তাদের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি সর্বজনীন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেইজিংয়ের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে।

চীনের নিজস্ব জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১ শ’ ৪০ কোটি। নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে চীন কীভাবে দ্রুত অন্য দেশগুলোকে টিকা সরবরাহ করবে তা নিশ্চিত হওয়া বেশ কঠিন বলেই মনে হয়।

গ্লোব বায়োটেকের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ যদি অন্য দেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষায় থাকে তবে আমাদের সমস্ত জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ আমদানি করতে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। সুতরাং, স্বল্প সময়ের মধ্যে সমস্ত লোককে টিকা দেয়ার জন্য আমাদের স্থানীয়ভাবে তৈরি ভ্যাকসিন দরকার।

আইইডিসিআর উপদেষ্টা মোস্তাক হোসেন কোম্পানির এ উদ্যোগটিকে ‘বাংলাদেশের জন্য উৎসাহজনক’ বলে অভিহিত করেন। তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী এবং গবেষণা সংস্থা এখনই প্রাণী ও মানুষ উভয়ের ওপরই সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক মডার্না, চীনের সিনোভাক বায়োটেক ও ভারতের ভারত বায়োটেকের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে তাদের কেউই এখনো শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিদফতরের জেনারেল (ডিজিএইচএস) কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা গ্লোব বায়োটেকের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে সাফল্যের কোম্পানির দাবি স্বীকার করেছেন।

ডিজিএইচএসের সহকারি পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, তবে তাদের (গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড) মানুষের ওপর পরীক্ষার অনুমতির জন্য যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাতে তাদের গবেষণা তথ্য জমা দিতে হবে।

গ্লোব বায়োটেক সূত্র জানিয়েছ, সিইও কাকন নাগ এবং সিওও নাজনিন সুলতানার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি বৈজ্ঞানিক দল এই গবেষণা করছেন।

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ ৩৬ হাজার ৬১০। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭৫ লাখ ৮২ হাজার ৪২৬ জন।-বাসস

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh