রবীন্দ্রনাথের হাস্যরস

দিদার মিয়া

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২০, ০২:৩৯ পিএম

সেদিন শান্তিনিকেতনের কর্মীদের এক সভা। সভায় কবিও এসেছেন। সভা আরম্ভ হতে তখন সামান্য দেরি। যে ঘরটিতে সভা বসেছে, সে ঘরটি ছিল খুব প্রশস্ত ও বেশ আলোবাতাসযুক্ত। তাই একপাশে কয়েকজন কর্মী, ঘরটি যে বেশ- সে সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন। কবি চুপ করেই বসেছিলেন। হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলে উঠলেন- এই ঘরটিতে একটি বাঁদোর আছে। কবির কথা শুনে সকলেই চমকে উঠলেন এবং পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলেন। আবার যাঁরা কথা কইছিলেন, তাঁরা তো ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে পড়লেন। কর্মীদের এই অবস্থা দেখে কবি এবার বললেন- বাঁদর নয়, বাঁদর নয়, বাঁ-দোর। দেখছ না ঘরটার এই দিকে যেমন একটা ডান-দোর আছে, ওদিকটায় তেমনি একটা বাঁ-দোরও রয়েছে। কবির কথা শুনে এবারে সবাই হেসে উঠলেন।

শান্তিনিকেতনে সেবার নতুন ওজনের মেশিন এসেছে। ছেলেমেয়েরা একে একে ওজন হচ্ছে। কবি এই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং বসে ছেলেমেয়েদের এই ওজন লক্ষ্য করছিলেন। এক এক জনের ওজন শেষ হলেই কবি তাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন- কিরে তুই কত হলি। কবির প্রশ্নে সবাই যে যার ওজনের মাপ বলতে লাগল। এমন সময় ওজন হলো কবির বিশেষ পরিচিত একটি মেয়ের। সে একটু স্থূলাঙ্গী ছিল। সে ওজনের যন্ত্রটি থেকে নেমে দাঁড়াতেই কবি তাকে বললেন- তুই কত হলি বল?

মেয়েটি হেসে কবিকে বলল- দু’মণ।

এই মেয়েটির সেই সময় এক জায়গায় বিয়ের কথাবার্তা ও দেখাশোনা চলছিল। কবি একথা জানতেন। তাই তিনি তাকে পরিহাস করে বললেন- তুই এখনো দু’মন, এখনো এক মন হলি না?

মেয়েটি কবির কথা বুঝতে পেরে, সলজ্জভাবে হাসতে লাগল।

কবির ঘনিষ্ঠ পরিচিত এক যুবক ভদ্রলোক কবিকে পিতামহ স্থানীয় ভেবে তাঁর সঙ্গে সেইরূপ ব্যবহার করতেন।

কবিও তাঁকে নাতির ন্যায়ই দেখতেন এবং সেই সম্পর্কেই মাঝে মাঝে তাঁর সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশাও করতেন।

একবার এই ভদ্রলোক সস্ত্রীক শান্তিনিকেতনে গিয়ে কবিকে প্রণাম করতে গেলেন।

কবিকে কে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর ওই নাতিস্থানীয় যুবকটির স্ত্রী কয়েক মাসের গর্ভবতী। তাই যুবক ও তাঁর স্ত্রী কবিকে প্রণাম করলে, কবি তাঁদের আশীর্বাদ করে যুবকটিকে জিজ্ঞাস করলেন- কি হে, কুমার-কত দিনে হচ্ছে। কবির কথা প্রথমে যুবকটি বুঝতে পারেননি। তারপর বুঝতে পেরে হাসতে লাগলেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh