সুন্নত ও নফল নামাজে রয়েছে ইহ-পরকালীন কল্যাণ

হাশরের দিন মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নিবেন। মুসলিম উম্মাহর জন্য তা পালনে রয়েছে দুনিয়ার কল্যাণ এবং আখেরাতের মুক্তি। 

এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা:) বলেন, শেষ দিবসের বিচারে সালাত যদি সঠিক ও বিশুদ্ধ হয়, তাহলে সে সফল ও কৃতকার্য হবে। এবং যদি তার সালাত সঠিক ও বিশুদ্ধ না হয় তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (তিরমিযী)

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (আল ইমরান: ৩১)

আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে-পরে যে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করি, এগুলোর ফজিলতও অনেক। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হলো জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত। (তিরমিযী : ৪১৪)

এ কারণে রাসূল (সা:) ফরজ নামাজ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি সুন্নত ও নফল নামাজ এবং এ নামাজের মাধ্যমে বেশি বেশি সেজদা আদায়ের নসিহত পেশ করেছেন।

দুনিয়ার কল্যাণ এবং পরকালের মুক্তিতে সুন্নত নফল নামাজ আদায়ের বিকল্প নেই। হাদিসে এসেছে- জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন,‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে (ফরজ) নামাজ সম্পন্ন করে তখন তার উচিত সে যেন তার নামাজের কিছু অংশ (সুন্নাত নামাজ) নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে আদায় করা কিছু নামাজের মধ্যে আল্লাহ তাআলা কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’ (মুসলিম)

যায়েদ বিন সাবেত (রা:) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা:) বলেছেন, হে মানবমন্ডলী! তোমরা নিজ ঘরে নামাজ আদায় কর। যেহেতু ফরজ নামাজ ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামাজ হলো নিজ ঘরে আদায় করা নামাজ।’ (নাসাঈ, ইবনে খুজাইমা, তারগীব)

নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধের অন্যতম মাধ্যম। ফরজ নামাজ ছাড়া অন্যান্য সুন্নাত ও নফল নামাজ নিজ ঘরে লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়াই উত্তম। এ কারণেই হাদিসে পাকে সুন্নাত ও নফল নামাজ নিজ ঘরে আদায়ের ব্যাপারে তাগিদ প্রদান করেছেন। 

নফল: নফলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অধিকতর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করে। আর নফল ইবাদতের মধ্যে নফল নামাজ আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। রাসূল (সা:) কে এক সাহাবি প্রশ্ন করেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কী? উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন: ‘তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদা করবে (বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বে); কারণ তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করো তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন।’ (মুসলিম: ৩৫৩)

তাহাজ্জুদ: ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা : সিজদা, আয়াত : ১৬)

মহানবী (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ। (মুসলিম,: ১১৬৩)

ইশরাক : সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করতেন। এ সময় দোয়া, তাসবিহ পাঠ ও দ্বিনি আলোচনা করতেন। 

সূর্যোদয়ের পর তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এই আমলের প্রতি রাসুল (সা.) অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)

দুহা: সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগ মুহূর্তে ‘দুহা’র নামাজ আদায় করা হয়। পৃথকভাবে আদায় করার অবকাশ থাকলেও অনেকেই এটাকে ইশরাকের নামাজ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সময়ের শুরুতে আদায় করলে সেটা ইশরাক আর সময়ের শেষে আদায় করলে দুহা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয়তম (রাসুল সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুহার নামাজ ও ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৭৮)

আউয়াবিন: মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ ‘আউয়াবিন’ নামে পরিচিত। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার আমলনামায় বারো বছর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে। (ইবনে মাজাহ,: ১১৬৭)

তাহিয়্যাতুল অজু: অজুর মাধ্যমে অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজকে বলা হয় তাহিয়্যাতুল অজু। নিষিদ্ধ সময়ের বাইরে যেকোনো সময় এই নামাজ আদায়ের অবকাশ রয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করল এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করল তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (মুসলিম : ২৩৪)

তাহিয়্যাতুল মসজিদ: মসজিদে প্রবেশ করার পর আদায় করার নামাজ। নিষিদ্ধ সময় ছাড়া অন্য সময়ে মসজিদে প্রবেশের পর তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া যায়। তবে নামাজের জামাত ও ওয়াক্তের নির্ধারিত সুন্নত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বে না। মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর বসে। (বুখারি: ১১৬৭)

তাওবা: আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা: ) বলেন, যখন কোনো বান্দা পাপ করে ফেলে, এরপর সে ভালোভাবে অজু করে এবং দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।’ (আবু দাউদ: ১৫২১)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //