দিল্লির তাবলিগ থেকে ৯ হাজার মানুষ করোনার ঝুঁকিতে

ভারতের রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদে তাবলিগ জামায়াতে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশের ঘটনায় অন্তত নয় হাজার মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় রয়েছেন। 

দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের হিসেবে, অন্ততপক্ষে ৭ হাজার ৬০০ ভারতীয় ও এক হাজার ৩০০ জন বিদেশি মার্চের প্রথম দিকে আয়োজিত ওই ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে ওই মারণ ভাইরাস। ইতোমধ্যেই ধর্মীয় সমাবেশে অংশ নেয়া সাতজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে, আরো বহু মানুষের শরীরেও ওই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। 

তাবলিগ জামাতের কর্তৃপক্ষ বলেছে, কয়েকদিনের ওই জমায়েত শেষ হওয়ার পর অনেকেই দিল্লি ছেড়ে গেলেও ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ায় ও সব ধরনের পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার লোক তাদের মার্কায নিজামুদ্দিনে আটকা পড়ে।

কেন্দ্রের আশঙ্কা, জামায়েতে উপস্থিত সদস্যদের থেকেই এবার দেশে বহু মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনাভাইরাস। দেশের ২৪টি রাজ্য ও চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ওই তাবলিগ সদস্যদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চলছে।

১ এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নিজস্ব পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এর মধ্যেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় এক হাজার ৫১ জন তাবলিগ সদস্যকে পৃথক করে রাখা হয়েছে। আরো ২১ জনের শরীরে ইতোমধ্যেই করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে ও তাদের মধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাবলিগ জামাতের সাত হাজার ৬৮৮ জন স্থানীয় কর্মী ও তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করা গেছে। এছাড়াও এক হাজার ৩০৬ জন বিদেশিকেও কোয়ারেন্টিন করা হবে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দিল্লির ধর্মীয় জামায়েতে যোগ দেয়া যাদের শরীরে করোনা সংক্রমণের খোঁজ মিলেছে, তাদের মধ্যে ১৯০ জন রয়েছেন শুধু তামিলনাড়ুতেই। এছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশে রয়েছেন ৭১ জন, দিল্লিতে ৫৩ জন, তেলেঙ্গানাতে ২৮ জন, আন্দামানে ১০, আসামে ১৩, মহারাষ্ট্রে ১২, পুদুচেরিতে দুইজন, জম্মু ও কাশ্মীরে ছয়জন ও গুজরাটে দুইজন।

গতকাল বুধবার দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া বলেন, তাবলিগের নিজামুদ্দিন এলাকাটি থেকে গত ৩৬ ঘণ্টায় দুই হাজার ৩৬১ জনকে অন্য এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ওই মসজিদের সমাবেশে যোগদানকারীদের মধ্যে কমপক্ষে ১২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গত মঙ্গলবারই মার্কাজ নিজামুদ্দিন সিল করে দেয়া হয় এবং সেখানে থাকা অসংখ্য মানুষকে বের করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যে সব রাজ্যের মানুষ ওই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ উপেক্ষা করেই অসংখ্য মানুষ ৮ মার্চ থেকে ১০০ বছরের ওই পুরনো মসজিদ কমপ্লেক্সে জড়ো হয়। গত ২১ মার্চ সেখানে মোট এক হাজার ৭৪৬ জন মানুষ ছিলেন, যার মধ্যে ২১৬ জন বিদেশিও ছিলেন। ওই বিদেশিদের থেকেও রাজ্যগুলোর পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।

ওই মসজিদের মওলানা সাদ, জিশান, মুফতি শেহজাদ, এম সাইফি, ইউনুস, মোহাম্মদ সালমান ও মোহাম্মদ আশরাফ–এই সাতজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, পুলিশ নোটিশ দেয়া সাথে সাথেই মওলানা সাদ ২৮ মার্চ থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছে।

দিল্লির ওই মসজিদের ধর্মীয় সমাবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমান মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষজন। এমনকী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও বহু মুসলমান ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিজামুদ্দিনে আসেন। ইতোমধ্যেই প্রমাণ মিলেছে, মসজিদের ওই সমাবেশ থেকেই ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। -এনডিটিভি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //