ভারত-চীন: সেনা সরানোর কোনো ইঙ্গিত নেই লাদাখে

লাদাখের বিতর্কিত পোস্টে ভারত ও চীনের সেনা মুখোমুখি অবস্থানে। উত্তেজনা বাড়ছে। চীন সেখানে প্রচুর কাঠামো তৈরি করে ফেলেছে। ভারতও সমানে সেনা সমাবেশ করছে। 

দিল্লির সাউথ ব্লক (ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়) থেকে সেনা সরানো নিয়ে যতই দুই দেশের মতৈক্যের কথা বলা হোক না কেন, লাদাখে তার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। 

লেহ থেকে একের পর এক সেনা কনভয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে যাচ্ছে। ঘনঘন উড়ছে যুদ্ধবিমান, সেনা হেলিকপ্টার। ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নরবণে লেহ’তে দুইদিন ছিলেন। গতকাল বুধবার (২৪ জুন) তিনি ফরোয়ার্ড পোস্টে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সেনাদের বলে এসেছেন, তারা যেন বিন্দুমাত্র মনোবল না হারান ও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকেন।

সেনাপ্রধানও সৈন্যদের পিছিয়ে নেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেননি। এদিকে চীনের সাথে সেনা সরানো নিয়ে সাধারণ মতৈক্য হলেও কীভাবে সরবে, কবে সরবে, কোন জায়গা থেকে আগে সরবে, কারা আগে সেনা সরাবে সে সব নিয়ে কোনো মতৈক্য হয়নি। পরবর্তী আলোচনায় তা ঠিক হওয়ার কথা। 

আর ভারতীয় সেনাদের অভিযোগ, ৬ জুন সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্য হওয়ার পর ভারতীয় সেনা সরে আসে, চীনা সেনা একচুলও পিছনে যায়নি।

তাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে বই কমছে না। ভারতীয় সেনার দাবি, সাম্প্রতিকতম উপগ্রহ ছবিতে দেখা যাচ্ছে-গালওয়ানে চীনা সৈন্যের যেখান থেকে ফিরে যাওয়ার কথা, সেখানে তারা প্রচুর কাঠামো তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়, আগের তুলনায় তা অনেক বেড়েছে। সেনার থাকার, খাওয়ার জায়গা, বাঙ্কার বানানো হয়েছে। রাস্তা চওড়া করা হয়েছে। সেনা পিছিয়ে নেয়ার কোনো ইঙ্গিতও সেখানে নেই। 

২২ মে-র উপগ্রহ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গালওয়ানের ১৪ নম্বর পোস্টে কেবল একটি চীনা তাঁবু রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ১৪ নম্বর পোস্টের আশেপাশে চীনের কাঠামো গিজগিজ করছে। মেজর জেনারেল রমেশ পাড়হি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এ সবই হলো ভারতীয় এলাকায় চীনের দখলদারীর ছবি। এই অবস্থায় ভারতীয় সেনাও পিছিয়ে আসার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। বরং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনার সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে। 

সেনা সূত্র জানাচ্ছে, যে ১৪ নম্বর পোস্টে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়েছিল, সেখানে প্রথম সারিতে ৩০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পালা করে তারা প্রহরা দিচ্ছেন। তারা ও চীনা সেনা একেবারে মুখোমুখি রয়েছে। তাদের পেছনে ও আশপাশের এলাকায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের মনোবল বাড়াবার জন্য বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান সেখানে উড়ছে।

ভারতের দাবি, শুধু গালওয়ান নয়, প্যাংগং সো এবং ফিঙ্গার পয়েন্ট চার থেকে আট পর্যন্ত এলাকা থেকেও চীনা সেনা সরাতে হবে। সেনার দাবি, ফিঙ্গার পয়েন্ট চার থেকে আট পর্যন্ত এলাকাতেও চীন বাঙ্কার তৈরি করেছে এবং ভারতীয় ভূখণ্ডের ভিতরে এসে বসে আছে ও নির্মাণকাজ চালাচ্ছে।

লাদাখের রাজনীতিকদের একাংশ ও দিল্লির বিশেষজ্ঞদের দাবি, চীন যেভাবে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে বসে আছে ও নির্মাণকাজ চালাচ্ছে, তাতে তারা সহজে পেছনে যাবে এটা মনে করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তারা বরং ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর নিজেদের দাবি পোক্ত করার চেষ্টা করবে। তাই লাদাখে এখন ঝড়ের আগের থমথমে অবস্থা হয়ে আছে। যেকোনো সময় এই উত্তেজনা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যাওয়াটা আশ্চর্যের নয়। এমনকী বুধবারও দুই তরফের মধ্যে পাথরবৃষ্টি হয়েছে বলে খবর আসছে। যদিও তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

এ হেন পরিস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমনের দাবি হালে পানি পাচ্ছে না। লেহ-র লোকেরাও সন্ত্রস্ত। তারাও মনে করছেন, যেরকম পরিস্থিতি, তাতে সামান্য ফুলকিতেই আবার আগুন জ্বলতে পারে। -ডয়চে ভেলে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //