ক্রীড়াঙ্গনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ভূমিকা

২০২০ সালটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকীর নানা আয়োজন চলছে চলতি বছরজুড়ে। এ কারণে এ বছর খেলাধুলার অনেক আয়োজন ছিল। 

২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ মার্চ পর্যন্ত জন্মশতবর্ষ ঘোষণা করা হয়; কিন্তু এক করোনাভাইরাস সব ধরনের পরিকল্পনা ওলট-পালট করে দিয়েছে। 

তবে আগস্ট মাস এলেই জাতির পিতার পরিবার নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ক্রীড়াঙ্গনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অবদানের নানা বিষয় নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ফুটবলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন ফুটবলে পারদর্শী। রাজনীতির বাইরে পরিপূর্ণ একজন ক্রীড়ামনস্ক মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফুটবলার হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে। রাজনীতিবিদের আড়ালে জাতির পিতার খেলোয়াড়ি পরিচয়টা বড় না হলেও তিনি যে একজন ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ মানুষ ছিলেন, সেটি একরকম স্বীকৃত। সে কারণে চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে ফুটবলার হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ওয়ান্ডারার্সের হয়ে ঢাকার মাঠ মাতিয়েছেন। 

১৯৩৭ সালে তার উদ্যোগেই নিজ জেলা গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে ফুটবল ও ভলিবল দল গঠন করেছিলেন। দুটি খেলাতেই নিয়মিত খেলেছেন বঙ্গবন্ধু। 

কলকাতায় চলে যাওয়ার পর ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় এরিয়ান্স ও মোহামেডানে খেলার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন। আর মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে প্রায়শই সময় কাটাতে ওয়ান্ডারার্সে চলে আসতেন। ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। এই সময়ে ১৯৪৩-৪৪ সালে বগুড়ায় একটি গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়ান্ডারার্স। ওই ম্যাচে ফাইনালে ওয়ান্ডারার্স ৫-০ গোলে জয়ী হয়। টুর্নামেন্টে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান বঙ্গবন্ধু।

ক্রিকেট ও বাস্কেটবল খেলতেন শেখ কামাল

ফুটবলের প্রতি সেভাবে কোনো টান ছিল না শেখ কামালের। ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস ও বাস্কেটবল খেলে দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছেন। ওয়ান্ডারার্সের তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে ওয়ান্ডারার্স লিগ জয়ের পেছনে কামালের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। এছাড়া মহসীন স্মৃতি ট্রফি জেতে কামালের নেতৃত্বে। 

ক্রিকেটে অফ স্পিনার হিসেবে সত্তর দশকে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ক্রীড়াঙ্গনে। খেলেছেন কলাবাগান ও আবাহনীতে। আবাহনী সমাজকল্যাণ সমিতি নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজকের আবাহনী লিমিটেড হয়েছে।

চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলেট সুলতানা কামাল

১৯৭৩ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা গ্রামীণ ক্রীড়ায় অংশ নিতে ভারতে গিয়েছিল। বিদায় নেয়ার আগে সুলতানা কামালকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাঙালির মান রাখতে পারবি তো?’ মাঠে জাতির পিতাকে দেয়া কথা রেখেছিলেন তিনি। জয় বাংলা বলে লং জাম্পে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় হয়ে রৌপ্যপদক জিতেছিলেন। পরে এটাই হয়ে যায় ইতিহাস, বিদেশে প্রথম জয় করা পদক। মৃত্যুর কিছুদিন আগে ১৯৭৫ সালে হার্ডলসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। 

১৯৬৬ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের লংজাম্পে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে লংজাম্পে নতুন রেকর্ড গড়ে চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর ১৯৭০ সালে অল পাকিস্তান উইমেন্স অ্যাথলেটিকস এ মেয়েদের মধ্যে সেরা হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ব্লু এই ক্রীড়াবিদ ১৯৭৩ সালে ১০০ মিটার হার্ডলসেও প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন সদা হাস্যজ্জ্বল এ মেয়েটি।

শেখ জামাল ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসে পারদর্শী ছিলেন

বড় ভাই শেখ কামালের দেখিয়ে দেয়া পথে হেঁটেছিলেন শেখ জামালও। খেলেছেন ফুটবল, অ্যাথলেটিকস। ক্রীড়াঙ্গনে দুই ভাইয়ের ছিল অসম্ভব রকম প্রতিযোগিতা। শেখ কামাল আবাহনী গড়ার পর শেখ জামাল ১৯৭৪ সালে ঐতিহ্যবাহী আজাদ স্পোর্টিংয়ের ফুটবলে শক্তিশালী দল গড়েন। জামালের ডাকে সাড়া দিয়ে অসংখ্য তারকা ফুটবলার সেবার যোগ দিয়েছিলেন আজাদে। তার গড়া ক্লাব ২০১১ সালে পেশাদার লিগের শিরোপা জয় করে।



সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //