বেনাপোলে ৭৫ দিন পর আমদানি-রফতানি শুরু আজ

যশোরের বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আজ শনিবার (৫ জুন) সকাল থেকে আমদানি-রফতানি চালু হয়েছে।

৭৫ দিন বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে এক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দুই দেশের প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের মাঝে এ বৈঠক হয়।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৩ মার্চ থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দুইদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ২৪ এপ্রিল আমদানি-রফতানি চালুর অনুমোদন দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি না থাকায় দীর্ঘদিন সড়কপথে বন্ধ ছিল ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বারবার চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্থলবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরুর অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। 

এছাড়াও বনগাঁর সিন্ডিকেটের কারণেও বাণিজ্যে জটিলতা দেখা দেয়। পরে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়ায় স্থলপথে আমদানি-রফতানির ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকার শ্রমিকসহ ট্রাক মালিক ও চালকরা। বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে বৈঠকে বসে আমদানি-রফতানি চালু করতে রাজি হয় ভারতের প্রশাসনসহ বনগাঁ সিন্ডিকেট।

করোনার সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কা থাকায় সীমান্ত অতিক্রমের আগেই গাড়ি চালকদের শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা করা হবে। এছাড়াও ট্রাকগুলো উভয় দেশে স্যানিটাইজ করা হবে। ফেরার সময়ও চালকদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। সেই সাথে দ্রুত পণ্য খালাস করে দিনে দিনে ট্রাকগুলো ফিরে যাবে।

বৈঠকে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, বনগাঁ পৌর সভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকুসহ কাস্টমস, পুলিশ, বিএসএফ ও পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস, ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষে বেনাপোল বন্দর, কাস্টমস, বিজিবি ও সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন, সিএন্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশন ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ। করোনার ক্রান্তি সময়ে স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য নির্দেশনা মেনে আজ শনিবার থেকে আমদানি-রফতানি শুরু করতে দু‘দেশের নেতৃবৃন্দ একমত পোষণ করেছেন। 

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমদানি-রফতানির জন্য ৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক দিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সম্মতি দিয়েছেন। পরে পরিস্থিতি দেখে ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

এদিকে বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে বন্দর কর্তৃপক্ষের থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় চালককরা যাতে পোর্টের বাইরে যেতে না পারে সে ব্যাপারে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।

দেশের সরকার অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১২টি বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। মাত্র তিন ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। 

যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিকটন পণ্য আমদানি হচ্ছে। যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। 

আমদানি পণ্যের মধ্যে গার্মেন্টস সামগ্রী, তৈরি পোশাক, শিল্পকারখানা ও ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, খাদ্যদ্রব্য, চাল, পিয়াজ, তুলা, বাস, ট্রাক ট্যাসিস, মটর সাইকেল এবং পার্টস ও টায়ার রয়েছে। 

রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, সাদা মাছ, ব্যাটারি, ওভেন গামেন্টস, নিটেড গামেন্টস, নিটেড ফেব্রিকস, কর্টন র‌্যাগস (বর্জ কাপড়) উল্লেখযোগ্য।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //