সুন্দরবনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে গড়ে ওঠা অপরূপ সুন্দরবন পর্যটকদের আকৃষ্ট করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।

বছরজুড়ে সুন্দরবনে পর্যটকদের আসা-যাওয়া থাকলেও বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এলাকায় এই মুহূর্তে চলছে পর্যটকদের ভরা মৌসুম।

বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এ বনে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাসস্থান।

দিন দিন বাড়তে থাকা পর্যটকদের চাপ সামলাতে সুন্দরবনে নতুন করে আরো চারটি ট্যুরিজম সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন কি পরিমাণ পর্যটক ধারণ করতে পারে তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হওয়া দরকার।

এদিকে এবছর সুন্দরবনে পর্যটকদের আনাগোনা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন ট্যুর অপারেটররা।

দেশের অন্য দর্শনীয়স্থানগুলোর চেয়ে সুন্দরবন ভ্রমন একটু আলাদা। পর্যটকরা সাধারণত লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ও দেশি নৌকায় করে সুন্দরবন ভ্রমন করে থাকেন। বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও সাতক্ষীরা জেলার নলিয়ান হয়ে নৌ-পথে সুন্দরবন ভ্রমণে যান পর্যটকেরা। সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করতে হলে দেশি-বিদেশি সব ধরনের পর্যটকদের বন বিভাগ থেকে সরকারের রাজস্ব খাতে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে অনুমতি নিতে হয়।

পর্যটন স্থান: 

গোটা সুন্দরবন জুড়েই পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন। তবে এরমধ্যে করমজল, কটকা, কচিখালী, দুবলারচর, হিরণপয়েন্ট, কলাগাছিয়া, মানিকখালী, আন্দারমানিক ও দোবেকী এলাকায় পর্যটকরা বেশি ভ্রমণ করে থাকেন।

সুন্দরবনে পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের সুন্দরবনে রাত্রিযাপন করতে চাইলে তাদের বহনকারী নৌযানেই ব্যবস্থা করতে হয়। সুন্দরবনের ভেতরে তিন-চারটি বিশ্রামাগার রয়েছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।

সুন্দরবন ভ্রমণে খরচ: 

ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় তিনদিন-দুইরাত সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়। ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে যেসব পর্যটকরা সুন্দবন ভ্রমণ করতে চান তারা সাধারণত বাগেরহাট অথবা খুলনায় আসার পর পর্যটক বহরে যুক্ত হন। ভ্রমণকারীদের অনেকে আবার ট্যুর কোম্পানি ছাড়া নিজেরা নৌযান ভাড়া নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন।

কীভাবে যাবেন সুন্দরবনে: 

সুন্দরবন ভ্রমনে যেতে চাইলে পর্যটকদের ঢাকা থেকে বাসে করে বাগেরহাটে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে নন-এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। বাগেরহাটে থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক পথে পাড়ি দেয়ার পর মোংলা থেকে নৌযানে করে কিছুদুর যাওয়ার পরেই সুন্দরবনের দেখা মিলবে।

সুন্দরবন বিভাগ জানান, সুন্দরবনের ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী অভয়ারণ্য ছাড়া জনপ্রতি প্রতিদিন দেশি পর্যটকদের রাজস্ব দিতে হয় ৭০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের (১২ বছরের নিচে) ১৫ টাকা ও বিদেশিদের জন্য এক হাজার টাকা। অভয়ারণ্য এলাকার জন্য দেশি পর্যটকদের ১৫০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের এক হাজার ৫০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৩০ টাকা ও অপ্রাপ্তদের ১০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে। আর শুধুমাত্র করমজল এলাকায় দেশি পর্যটকদের ২০ টাকা, বিদেশিদের ৩০০ টাকা, অপ্রাপ্তদের ১০ টাকা, দেশি গবেষকদের ৪০ টাকা ও বিদেশি গবেষদের জন্য ৫০০ টাকা রাজস্ব দিতে হয়। 

সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য নিবন্ধনকৃত নৌযানের বিভিন্ন রকম প্রবেশ ফি রয়েছে। ১০০ ফুটের উর্ধে লঞ্চ এক হাজার টাকা, লঞ্চ ৫০ ফুটের উর্ধে ১০০ ফুটের নিচে ৮০০ টাকা, লঞ্চ ৫০ ফুটের নিচে ৫০০ টাকা, ট্রলার ৩০০ টাকা, দেশি নৌকা ১০০ টাকা, স্পিডবোট দুই হাজার টাকা। স্পিডবোট (মাদার ভেসেলের সঙে) ৫০০ টাকা, জালিবোট (ট্যুরিস্টবোট) ২০০ টাকা। এসব ফি’র সঙ্গে ভ্যাট দিতে হবে পর্যটকদের। 

প্রতিদিনের জন্য লঞ্চের অবস্থান ফি ৩০০ টাকা। প্রতিটি নৌযানে বন বিভাগের পক্ষ থেকে দুইজন করে প্রহরী দেয়া হয়। এছাড়া কটকা, কচিখালী ও নীলকমল বিশ্রামাগারে প্রতিটি কক্ষ প্রতিদিন ভাড়া দেশি পর্যাটকদের জন্য দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশি পর্যাটকদের চার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন জানান, সাধারণত একসঙ্গে অনেক পর্যটক সুন্দরবনে যান। বেশি মানুষ এক জায়গায় হলে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়। অনেকে আবার প্লাস্টিক, পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট ও টিব্যাগ ব্যবহার করার পরে বনের মধ্যে ছুড়ে ফেলেন। অনেক পর্যটক আবার হইহুল্লা ও জোরে শব্দ করে। যার ফলে বন্যপ্রাণীর প্রজনন, বংশবৃদ্ধি ও খাবার গ্রহণসহ নানা ধরণের ক্ষতিকর প্রভাবের পড়ে। যা বন্যপ্রাণীর জীবনযাত্রা ব্যাহত করে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনে সারা বছর জুড়ে পর্যটক আসা যাওয়া করে থাকলেও শীত মৌসুমে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ৪২ হাজার ৭২৯ জন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে দেশি পর্যটক রয়েছেন ৪১ হাজার ৮০১ জন ও বিদেশি রয়েছেন ৯২৮ জন। ওই সময়ে পর্যটকদের কাছ থেকে ফি হিসেবে পাওয়া ৪৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।

চীন থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা নিলু ও বেলজিয়াম থেকে আসা এলথ্রিস জানান, সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্য দেখে তারা অভিভূত হয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে তাদের অনেক ভাল লেগেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সুন্দরবন ভ্রমনে আসা বেশ কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী জানায়, বিভিন্ন বইতে পড়া সুন্দরবন নিজেদের চোখে দেখে তাদের অনেক ভাল লেগেছে। বনের বিভিন্ন গাছপালা, কুমির, হরিণ ও বানরসহ বিভিন্ন পশু-পাখি তারা দেখেছে।

ভ্রমণকারীরা জানান, সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখলে মনে হবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গোটা সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। সুন্দরবন দেখে তারা মুগ্ধ। সুন্দরবনে আসা যাওয়ার সুব্যবস্থা ও থাকা-খাওয়া এবং সার্বিক নিরাপত্তাসহ আধুনিক পর্যাটন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। -ইউএনবি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //