ইশরাত নিশাত ‘দেশ নাটক’ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মঞ্চে একাধারে অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। দেশের যে কোনো প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও ছিলেন সবসময় সোচ্চার। তার নির্দেশনায় ‘দেশ নাটক’ প্রযোজনা ‘অরক্ষিতা’ প্রশংসিত হয়। অসংখ্য নাটক ও আবৃত্তি প্রযোজনার মঞ্চ ও আলোক নির্দেশকের কাজ করেন।
ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সবসময় বলা যায় না। দুঃখ বেদনায় সেটি আর শব্দ হয়ে বের হয় না। শুধু অন্তরের মধ্যেই ভালোবাসাটুকু থেকে যায়। নাটকের মতোই নিঃশব্দতাই যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। শিল্পকলা একাডেমিতে প্রাণহীন নিশাতকে ঘিরেও দাঁড়িয়ে তেমনই শোকবহ কথায় শ্রদ্ধা জানালেন তার সহকর্মীরা।
আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ইশরাত নিশাত কে নিয়ে বলার ভাষা এখন আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমরা যারা মঞ্চে কাজ করি তারাই শুধু জানি নিশাত আমাদের জন্য কত বড় সম্পদ। থিয়েটারের আলোর যে নানান ব্যববহার তার যথার্থ পরিপূর্ণতা পেয়েছে নিশাতের হাতে। এর বেশি আর কিছু বলার ভাষা আমার নেই।
পীযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, সংস্কৃতি জগতে একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। নাট্যাঙ্গনের একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ থেমে গেল চিরদিনের জন্য।
শিমুল ইউসুফ বলেছেন, তার চরিত্রের সবচেয়ে বড় দিক ছিল তার দৃঢ়চেতা মনোভাব। তার চলাফেরা দেখলেই বোঝা যেত নারীর স্বাভাবিকতা ডিঙিয়ে যেতে পেরেছিলেন তিনি। তার কাছে নারী মানে এমনই। দৃঢ়। ভাঙবে তবু মচকাবে না। আর সৃষ্টির নেশায় তিনি আলো কে বেছে নিয়েছিলেন। সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। লাল-নীল আলোর মতো তার কর্মও ছিল বর্ণিল। এরকম একজন আপাদমস্তক শিল্পীর সমতুল্য আর কেউ আসবে কিনা আমার জানা নেই।
শতাব্দী ওয়াদুদ বলেছেন, ৯০-এর দশকে থিয়েটার নিয়ে তার প্যাশন ছিল আইকনিক পর্যায়ের! থিয়েটার এর সব সেক্টরেই তার দখল ছিল! এ রকম একজন মানুষ, বন্ধু চলে গেলেন হুট করেই! ভালোই হয়েছে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা দুস্থ শিল্পীর তালিকায় আপনার নাম দেখতে হয়নি নিশাত আপা! আসলে বেঁচে থাকাটাই আকস্মিক! আপনাকে নিশ্চয়ই অনেক মিস করব! ভালো থাকবেন!’
রোকেয়া রফিক বলেছেন, নিশাত আমার অনুজ। আর অনুজের এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া যায় না। আমাদের এই পিছিয়েপড়া সমাজে নিশাত ছিল অগ্নিগর্ভা। ওর এত দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি। ওর মধ্যে যে সাহস, সেটা অনেক পুরুষের মধ্যেও নেই। আমরা যে রুগ্ন অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, সেই রুগ্ন অবস্থাটা পার হতে নিশাতের মতো হাজার নিশাতের প্রয়োজন। থিয়েটারকে বুকে নিয়ে জন্মেছিল মেয়েটা, আর সেই থিয়েটারকেই বুকে নিয়ে চলে গেল। শূন্যতা, শুধুই শূন্যতা।
ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আমি ভারত থেকে শিক্ষা শেষ করে আসার পর ওদের নিয়ে আরণ্যকে ওয়ার্কশপ করেছিলাম। সেইসব দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। এই কষ্ট কোথায় যে রাখি, বুঝতে পারছি না। চলে যেতে হবে এটা সত্য। কিন্তু তাই বলে এত সকালে? মেনে নিতে পারছি না।
হৃদি হক বলেছেন, নাগরিক নাটাঙ্গনের সর্বশেষ নতুন নাটকটির আলোক পরিকল্পনা করেছিল নিশাত। এ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হয়ে গেছে। তারপরও নিশাত এ নাটক নিয়ে ভেবেই যাচ্ছে যে আরও কত ভালো করা যায়। ওর মতো এত নিষ্ঠাবান একজন নাট্যকর্মী এই থিয়েটার জগতে খুবই কম। ও যেখানেই থাকুক শান্তিতে থাকুক, ভালো থাকুক।
ঝুনা চৌধুরী বলেছেন, ওর মতো প্রতিবাদী, বিশেষ করে আমাদের এই অঙ্গনে স্পষ্টবাদী মানুষ আর কেউ থাকলো না। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : তুমি রবে নীরবে ইশরাত নিশাত বিনদন মঞ্চ নাটক নিশাত
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh