‘নাচ-গান আর গ্ল্যামারসর্বস্ব নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা নেই’

জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী তানজিন তিশা। তিনি প্রথম মডেল হন অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত রবির একটি বিজ্ঞাপনে। এটি তার ক্যারিয়ারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে রিজভি ওয়াহিদ এবং শুভমিতার গাওয়া ‘চোখের পলকে’ মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করে তারকা খ্যাতি পান। এ ছাড়া তিনি ইমরান মাহমুদুলের ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ জনপ্রিয় গানটির মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন।


২০১৮ সালটা ছিল তানজিন তিশার অভিনয়ের সবচেয়ে আলোচনার বছর। এই সময়ে অভিনয়ে দারুণ মনোযোগী হয়ে ওঠেন তিনি। সময়ের তরুণ মেধাবী নির্মাতাদের পরিচালনায় ভালো গল্পের নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান। প্রতিটি নাটকেই তিশার স্বাভাবিক অভিনয় বিশেষত তরুণ দর্শকের মন কেড়ে নেয়।

আলোচনায় চলে আসেন তিশা। নিজেকে একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই চ্যালেঞ্জিং, ভিন্ন ধরনের চরিত্রের দিকে মনোযোগী হয়ে উঠছেন তানজিন তিশা। ক্যারিয়ার ও সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে কথা হলো এ অভিনেত্রীর সঙ্গে। কথা বলেছেন এন আই বুলবুল।

শোবিজে পথ চলা শুরু হলো কীভাবে?

আমার মিডিয়ায় পথচলা শুরু হয়েছিল একটি পত্রিকার মডেল হিসেবে। তারপর ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, পোলার আইসক্রীমসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিলবোর্ডে মডেল হয়েছিলাম। তবে আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় অমিতাভ রেজার রবির বিজ্ঞাপনটি। এই বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে মূলত দর্শক আমাকে চিনতে শুরু করে।

ক্যামেরার সামনে প্রথম কখন দাঁড়ালেন?

২০১২ সালের দিকে প্রথম ক্যামারের সামনে দাঁড়াই। একটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে মডেল হতে গিয়ে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। একক কোনো মডেল ছিল না বিজ্ঞাপনে। পুরো টিমের কাজ। টিমটাও ছিল অনেক বড়। পরিচালক ছিলেন মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। শুটিংয়ের আগে থেকেই আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। শর্ট নেওয়ার সময় আমার এক্সপ্রেশন মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর কাছে ভালো লেগে যায়। তিনি আলাদা করে আমার কয়েকটি শট নিয়েছিলেন। সেগুলো পর্দাতেও রেখেছিলেন।


আপনার প্রথম পারিশ্রমিক কত ছিল?

আমার প্রথম পারিশ্রমিক ছিল এক হাজার টাকা। সম্ভবত আমি তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নাচ করেছিলাম। নাচের জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে এক হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে বাবা-মা, বোন সবার জন্যই উপহার কিনেছিলাম। মনে আছে বাবাকে একটি কলম কিনে দিয়েছিলাম।

আপনার অভিনীত প্রথম নাটক নিয়ে বলুন

প্রথম নাটক ‘ইউটার্ন’। এটি পরিচালনা করেছিলেন রেদওয়ান রনি। প্রথম নাটকে অভিনয়ের সময় খুব ভয় পেয়েছিলাম। তবে রনি ভাই আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। এ জন্য নাটকে আমার চরিত্রটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলাম।

অভিনয় আপনার কাছে কি?

আমি অভিনয় নিয়ে খুব একটা সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু এখন অভিনয়ের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারি না। অভিনয়ের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে গেছি।

আপনার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?

দুটি শিক্ষা পেয়েছি এ জীবনে। এক. সবার আগে নিজেকে প্রাধান্য দিতে হবে। দুই. কোনো মানুষকে সহজে বিশ্বাস করা যাবে না। বিশ্বাস করার আগে হাজারবার ভাবতে হবে। একজন মানুষ সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে বিশ্বাস করা মানেই বোকামি করা।

প্রথম প্রেম নিয়ে জানতে চাই

মতিঝিল মডেল হাইস্কুলের ছাত্রী ছিলাম, সেই সময় বড় বোনের এক বন্ধুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়েছিল। ছেলেটি তখন কলেজে পড়ত। বোনের বন্ধু হওয়ার কারণে প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো ছেলেটি। আমরা একসঙ্গে ঘুরতে যেতাম। অনেক গল্প হতো। একদিন ছেলেটি একটি চিরকুট রেখে যায় আমাদের বাসায়। খুলে দেখি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। আমারও ভালো লাগতো তাকে। প্রস্তাব পেয়েই রাজি হয়ে গেলাম। ঠিক মাস তিনেকের মাথায় আমাদের প্রেমের কথা বাসায় জেনে যায়। মা-বাবা দু’জনই খুব বকাবকি করলেন। বকা খেয়ে ওই দিনই সম্পর্ক ছিন্ন করি।


গেল বছরটি আপনার জন্য কেমন ছিল?

গত বছর পুরোটা আমি কাজে মনোযোগী ছিলাম। আমার ক্যারিয়ারের অন্য সময়গুলোর চেয়ে এটি ছিল একেবারেই ভিন্ন। বলতে পারেন, বিগত বছরটি আমার জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছিল। ভালোবাসা দিবস, বৈশাখে এবং গেল দুই ঈদে আমার অভিনীত নাটকগুলো দর্শকের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। তাদের উৎসাহে আমিও কাজে বেশ সিরিয়াস হয়েছি। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আমাকে এভাবে তাদের হৃদয়ে ঠাঁই দেওয়ার জন্য।

চলচ্চিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল। সেটির খবর কী?

এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমি এখন ছোট পর্দার কাজ নিয়েই ব্যস্ত আছি। যদি কখনো ভালো কোনো গল্প-চরিত্র পাই এবং কোনো নির্মাতা আমাকে নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে চলচ্চিত্রে আসব। 

টেলিভিশনের বাইরে এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দর্শক বিনোদন খুঁজছে। এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ইউটিউবের বাইরে এখন বিনোদনের জন্য আরো নানা রকম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আছে। প্রযুক্তি আমাদের সব কিছু সহজ করে দিয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক কিছু এখন ঘরে বসে পাচ্ছি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম অবশ্যই বিনোদের নতুন মাধ্যম। আমি এটিকে পজেটিভভাবে দেখি। ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। কাজের সংখ্যা বাড়ছে।

এই সময়ে অনেকে বলে আপনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ করছেন। নাটকের সিন্ডকেট বিষয়টি নিয়ে কি বলবেন?

কে কাকে নিয়ে সিন্ডিকেট করছে আমি জানি না। আমি আমার মতো কাজ করে যাচ্ছি। সত্যি বলতে আমাদের নাটক নিয়ে এখন অনেকেই নানা মন্তব্য করে। সমালোচনা না করে আমাদের সবাইকে ভালো কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দর্শকদের জন্য ভালো কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।


এই সময়ে আপনাকে অপূর্ব-আফরান নিশোর বিপরীতে বেশি দেখা যায়। কারণ কী?

আমি এই দু’জনের বাইরেও অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে এ দু’জনের সঙ্গে নাটকগুলো দর্শক বেশি গ্রহণ করেছেন। এ জন্য হয়তো নির্মাতারা আমাকে তাদের সঙ্গে বেশি ভাবেন। এর বাইরে কোনো কারণ নেই।

বর্তমানে অনেকেই অভিনয় করছেন নিয়মিত। কাউকে নিজের প্রতিযোগী ভাবেন?

নিজের মধ্যে যদি কিছু না থাকে তাহলে প্রতিযোগী ভেবে কি হবে? আমি কাউকে প্রতিযোগী ভাবি না। বরাবরই নিজেকে ভাঙতে চাই। আজ যে চরিত্রে অভিনয় করেছি, পরের নাটকে সেটিকে ডিঙিয়ে যেতে চাই। আমি চাই, দর্শক আমার ভেতর নতুন কিছু দেখুক। যে যত ভালো কাজ করবে দর্শক শুধু তাকেই গ্রহণ করবে। এ ছাড়া এখানে আমরা সবাই একই পরিবারের। সবার সঙ্গে সবার সু-সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন মনে করি।

বাংলাদেশের নাটক নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

নাটকের বর্তমান অবস্থান অনেক ভালো। সময় ও সুযোগের কারণে নাটক দেখার প্ল্যাটফর্ম ভিন্ন হলেও মানুষ এখন প্রচুর নাটক দেখছেন। পাশাপাশি আমাদের নাটক এখন বাংলা ভাষাভাষী সবার পছন্দের তালিকায়। পাশের দেশের মানুষজনের কাছেও তাদের সিরিয়ালের চেয়ে আমাদের নাটকের গ্রহণযোগ্যতা বেশি বলেই মনে করি। একটি কথা বলতে চাই, যে কোনো ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সবকিছু অনুকূলে নিয়ে আমাদের নাটক বর্তমানে ভালো অবস্থানে আছে এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো অবস্থানে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।


এই সময়ে নাটকের ভিউয়ের উপর শিল্পীর জনপ্রিয়তা নির্ণয় করা হয়। এটি কতটুকু ঠিক মনে করেন?

ভিউ দিয়ে সব কিছুর বিচার করা ঠিক না। অনেক মন্দ জিনিসের ভিউ বেশি। তাই বলে সেটিকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে? ইউটিউবে নানা মাধ্যমে ভিউ বাড়ানো যায়। এটি এখন সবার জানা আছে। তবে এটিও বলতে হয়, ইউটিউবে অর্থ অর্জনের জন্য ভিউ প্রয়োজন। কাজের ক্ষেত্রে মনে করি মেধাবী শিল্পীদের অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। না হলে এক সময় মেধাবী শিল্পীদের অভাব হয়ে যাবে। একই সঙ্গে নির্মাতাদের সকল চরিত্রের জন্য সঠিক শিল্পী নির্বাচন করা উচিত। চরিত্রের জন্য সঠিক শিল্পী নির্বাচন করা হলে কাজটি অবশ্যই ভালো হবে।

ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী?

নাচ-গান আর গ্ল্যামারসর্বস্ব নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা নেই। আমি নিজেকে একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হিসেবে গড়তে চাই। সেই স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সিনিয়র অনেক অভিনেত্রী আছেন, যারা ক্যারিয়ারের ৫০ বছরের মতো পার করেছেন। তবু দর্শক তাদের নাটক দেখেন। আমাদের ক্যারিয়ার মাত্র শুরু হয়েছে। তাই স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি প্রতিদিন ভালো কিছু করার জন্য।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল তারকারা নানা বিষয়ে ভাইরাল হচ্ছেন। অনেক সময় নেতিবাচক সমালোচনায়ও পড়ছেন। এটি নিয়ে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?

সোশ্যাল মিডিয়া এখন যোগাযোগের সহজ মাধ্যম। কিন্তু আমাদের কেউ কেউ এটিকে অন্যভাবে ব্যবহার করছে। সত্যি বলতে সব কিছুর উপকারিতা এবং অপকারিতা আছে। এখন দেখতে হবে আমি কোনটি গ্রহণ করব। তারকাদের প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সব কিছুকে ভাইরাল করতে হবে বিষয়ািট এমন না। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল তারকাদের সঙ্গে কারও ছবি দেখলেই প্রেমিক/প্রেমিকা ভাবতে শুরু করেন সবাই। এটি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।


তানজিন তিশার সমসাময়িক অনেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। অনেকে আবার চুপিচুপি প্রেম করছেন। বিয়ে নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা?

বিয়ে নিয়ে কোনো চিন্তা করি না। যখন সময় হবে তখনি বিয়েটা করে ফেলব। এখন সব চিন্তা-ভাবনা ক্যারিয়ার নিয়ে। নতুন বছরেও ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //