নতুন গল্পে কাজ করার লোভ আমার আছে : মনোজ

ছোটপর্দার আলোচিত অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক। তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে পড়ান। নিজের বিভাগের ১৪ জন শিক্ষার্থীর পরিচালক হিসেবে অভিষেকের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। আর পুরো কাজের তিনি হয়েছেন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। 

তার এই উদ্যোগ সম্পর্কে এবং ক্যারিয়ারের অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাহমুদ সালেহীন খানের সাথে। 

করোনাকাল কেমন কাটছে?

এই সময়টিকে কোনো কিছু দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আমরা সবাই খুব বিপর্যস্তের মধ্যে আছি। তারপরও জীবন থেমে নেই। প্রয়োজনের তাগিদে সবাই কাজ করছি। আমরা যারা সুস্থ  আছি, এটাই হলো পরম পাওয়া এখন পর্যন্ত। বিধাতাকে আমাকে সুস্থ রেখেছেন। 


এবার ঈদকে কেন্দ্র করে একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন আপনি, কেন ?

আমার ১৪ জন ছাত্রকে দিয়ে ১৪টি স্বল্প দৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণ করিয়েছি। আমার ছাত্ররা আমাকে সুন্দর সুন্দর গল্প পাঠাচ্ছিল। আমি আইফা আইয়ের কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিলের সাথে কথা বললাম। উনিও রাজি হয়ে গেলেন।

এরকম একটি উদ্যোগের পেছনের গল্পটি জানতে চাই?

আসলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মেধাবী তরুণ নির্মাতা আছেন। আরো তরুণ আছেন যারা সুযোগ পেলে ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে যাবে। শুরুতে সাতটা গল্প ছিল। তারপর হলো ১০টা। তারপর আরো অনেকে আগ্রহী হলো। শেষে গিয়ে  দাড়ালো ১৪টা গল্প। এর ভেতর চারটা বদলানো হলো। অবশেষে মনে হচ্ছে কাজটা ভালোই হয়েছে।


এরকম উদ্যোগে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে হয়?

এর উত্তরে বলবো, কেবল শুরু আছে। শেষ নেই। ওরা গল্প লিখেছে একরকম। টেলিভিশনের কিছু নীতিমালা মেনে সেখানে প্রতিনিয়ত বদলাতে হয়। এর ভেতর লকডাউন। তার ভেতর হুট করে ওদের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। আবার ঢাকায় কারও কারও থাকার জায়গা নেই। কেউ কেউ চাপ নিতে না পেরে অসুস্থ হয়ে গেল। সুস্থ হয়ে কাজ শেষ করল। প্রতিদিন শুটিং শুরু হত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে। একদিন ঝুমবৃষ্টি। তারপরও আমরা ভালোভাবে কাজটা শেষ করেছি। সবারই খুব ভালো লেগেছে। এটা কিন্তু কেবল ১৪ নির্মাতার কাজ নয়, ২০ জনের একটা টিম তৈরি হয়ে  গেছে আমাদের। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও নেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এবার  পেরে উঠিনি। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই পরিসরটা বড় হবে। 

এই স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কী?

সিনেমাগুলো ঈদুল আজহার দিন থেকে প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১টায় ও ১১টা ৫০ মিনিটে দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ছবিগুলো দেশের একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে। ইতিমধ্যে ফেসবুকে এই উদ্যোগ ও স্বল্প  দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর প্রশংসা করছেন দর্শক ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একজন লিখেছেন, ‘সম্ভবত এবারের ঈদের সেরা কাজ এগুলোই। আগ্রহ নিয়ে কাজগুলো দেখছি। কাজ দেখে মনেই হয় না যে সিনেমাগুলো শিক্ষার্থীদের বানানো। যাদের বয়স মাত্র ২০ থেকে ২২। একসময় এরাই আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন।’ এরকম প্রতিক্রিয়া দেখে সবাই খুব উদ্দীপ্ত।


স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র ও এর নির্মাতাদের নাম জানতে চাই?

স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর নাম আনোয়ারা মনোয়ারা, দোজাভ্যু, জুজু, সহজ সুন্দর, নওমহল, বিড়াল তপস্যা, ভূগোল +, মধুচক্র, কাউয়া, গ্যাঁড়াকল, শুক্রবার, ঝিলিক, জয় সূর্যসেন জর্ডান বসকে ও  সেমাডেট। এই সিনেমাগুলোর নির্মাতারা হলেন যথাক্রমে- ইকবাল হাসান খান, অভিক চন্দ্র তালুকদার, সিজু শাহরিয়ার, জিডি মজুমদার, এ বি মামুন, ইশতিয়াক জিহাদ, মানবমিত্র, হাসিব আহমেদ, গোলাম মুনতাকিম, রাহিল রহমান, হুমাইরা স্নিগ্ধা, শফিকুল সাজীব, আহসাবুল ইয়ামিন রিয়া ও মুনসিফ উজজামান মিম। 

আপনার অভিনীত নাটক কিবা অন্য সহকর্মীদের নাটকে দেখা যায় ঘুরে ফিরে একই চিত্র। চিত্রনাট্য বা গল্পের তেমন বৈচিত্র্য নেই, এটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

আমাদের এখানে রোমান্টিক ঘরানার কাজ বেশি হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, চিত্রনাট্যগুলোও প্রায় একই রকমের। একই বিষয় নিয়ে তিন চারটা নাটক নির্মাণ হচ্ছে। অনেক সময় মনে হয় একই ধরনের কাজ করব না। তবুও করতে বাধ্য হই। ভিন্ন কিছু করতে চাই। সবসময় চেষ্টা করি এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করতে, যেটা আগে কখনো করিনি। নতুন গল্পে কাজ করার লোভ আমার আছে।

চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি ?

শিল্পনির্ভর চলচ্চিত্র বা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রকে আমি আলাদা করে দেখি না। আমার কাছে অভিনয়ই মুখ্য। মূল বিষয় হচ্ছে, একটি গল্পকে ক্যামেরার মাধ্যমে বলা। এর বাইরে কিছু নেই। আর অভিনেতা হিসেবে আমার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পর্দায় অভিনয় ফুটিয়ে তোলা। অভিনয়টা ঠিকঠাক করতে পারলে সেটা নাটক, আর্ট ফিল্ম বা বাণিজ্যিক ফিল্ম হোক সমস্যা নেই। আমার কাছে সবসময় গল্পের চরিত্র গুরুত্ব পায়। মূলত সে কারণেই 'মিশন এক্সট্রিম' ও ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। বড় পর্দায় নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছে আছে। তবে ভালো গল্প হতে হবে।


অভিনয়ের পাশাপাশি আপনি পরিচালনাতেও কাজ করছেন। এ সম্পর্কে জানতে চাই ?

এটি আমি শখের বশে করি। পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে পরিচালনার খুটিনাটি জানার চেষ্টা করছি। বলতে পারেন নিজেকে প্রস্তুত করছি।  

কিসের জন্য প্রস্তুতি? সিনেমা বানাবেন?

আগে পুরোপুরি রপ্ত করি তারপর সময় হলে সবকিছু সবাই জানবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //