‘স্কুইড গেম’ কেন এতো জনপ্রিয়

দক্ষিণ কোরিয়ার টেলিভিশন সিরিজ ‘স্কুইড গেম’ নেটফ্লিক্সের বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি দেখা সিরিজ হতে চলেছে। বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় এই সিরিজটি এখন নেটফ্লিক্সের বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বরে পৌঁছে গেছে।

টান টান উত্তেজনার এই সিরিজে ঋণে জর্জরিত প্রতিযোগীদের একটি গেম বা খেলায় অংশ নেয়ার জন্য একটি নম্বরে ফোন করতে বলা হয়। বিজয়ীর জন্য থাকে বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থ পুরস্কার হিসাবে জেতার সুযোগ। তাদের অংশ নিতে হয় শিশুরা যে ধরনের খেলা খেলে, সেরকম ছয়টি গেমে। 

তবে এই গেম একেবারে জীবন-মৃত্যুর লড়াই। এতে হারলে মৃত্যু, আর জিতলে খেলার পরের ধাপে যাবেন প্রতিযোগী।


এই গেম শোটি প্রথম শুরু হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর এবং নেটফ্লিক্স বলছে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ৯০টি দেশে এই শো র‍্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠে গেছে।

এই ধরনের অনুষ্ঠানের ধরন খুব যে নতুন বা অভিনব তা নয়। তবে বিবিসির ওয়েই ইপ ও উইলিয়াম লি বলেন, সিরিজের আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল, চরিত্রগুলোর সাথে বাস্তবের মিল এবং মানব চরিত্রের কিছু কঠিন ও বেদনাদায়ক দিক যেভাবে এতে উঠে এসেছে, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষের মনকে ছুঁয়েছে।

স্কুইড গেম খেলায় আছে ৪৫৬জন প্রতিযোগী। এদের সবাই ঋণে জর্জরিত ও উঠে দাঁড়াতে মরিয়া। এই খেলা জীবন বাজি রেখে লড়ার, বাঁচার জন্য এক মরণপণ গেম। ছয়টি খেলার এই সিরিজ জিতলে বিজয়ীর হাতে আসবে ৪৫.৬ বিলিয়ন কোরিয়ান ওয়ন বা ৩৯ মিলিয়ন ডলার। আর হারলে মৃত্যু অবধারিত।


আর গেমগুলোও খুবই সাধারণ, যেমন রেড লাইট-গ্রিন লাইট, মার্বেল খেলা, টাগ অব ওয়ার বা রশি টানাটানি ইত্যাদি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গেম সিরিজের সাফল্যের চাবিকাঠি হলো এর চরিত্রদের বেশিরভাগই সমাজের প্রান্তিক মানুষ। তাদের সবাই বিশাল আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হলেও তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

যেমন- প্রধান চরিত্র একজন বেকার যার জুয়ার সমস্যা রয়েছে। ফলে পরিবারের কারোর কাছ থেকে সে সম্মান পায় না। এই গেম সিরিজে সে দেখা পেয়েছে একজন তরুণীর যে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করে দক্ষিণে চলে এসেছে। তার জীবনে অনেক কঠিন অভিঘাত এসেছে। তার সাথে দেখা আরেকজন পাকিস্তানি শ্রমিকের যার মালিক তার সাথে খুব দুর্ব্যবহার করেন।

সাংমিউং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক কিম পিয়ং গ্যাং বলেন, মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা আসল জীবনে বিচ্ছিন্নতা ও প্রতিকূলকতার শিকার হয় পদে পদে, তারা এই চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়েছেন এবং চরিত্রগুলো দেখা যাচ্ছে, তাদের সহানুভূতি কুড়াচ্ছে।

জীবনযুদ্ধে পরাজিত, সমস্যায় জর্জরিত ও গভীর হতাশাগ্রস্ত কিছু মানুষের গল্প নিয়ে তৈরি এই থ্রিলার সিরিজ ‘স্কুইড গেমের’ গল্প লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন হোয়াং ডং হিউক।


কিন্তু অবাক করা তথ্য হচ্ছে এই স্কুইড গেমের গল্প ছিল বাতিলের খাতায়। ‘অবাস্তব ও ভিত্তিহীন’ গল্পের খেতাব দিয়ে এই চিত্রনাট্য ১০ বছর ধরে প্রযোজনা সংস্থা, প্রযোজক ও অভিনেতারা প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন।

সম্প্রতি কোরীয় সংবাদমাধ্যম কোরিয়ান টাইমসকে এমন তথ্য জানিয়েছেন থ্রিলার এই সিরিজটির লেখক ও পরিচালক ডং হিউক।

তিনি বলেন, জাপানি কমিকস ও অ্যানিমেশন থেকে বছরের পর বছর ধরে অনুপ্রেরণা নিয়ে ২০০৯ সালে তিনি এই গল্প লিখেছিলেন। ২০১৯ সালে গল্প শুনে সিরিজটি নির্মাণে প্রথম আগ্রহ দেখায় নেটফ্লিক্স।

সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন তারকা অভিনেতা লি জং জায়ে, পার্ক হেই সু, হিউ সাং তে, ওয়াই হা জুনসহ অনেকেই। সিরিজটির একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইকনস্টার গং ইয়ো। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //