দিন যত যায় সম্পর্ক তত গাঢ় হয়: নাদিয়া

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ। টিভি নাটকের ব্যস্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম। একক ও ধারাবাহিক দুটিতেই অভিনয় করছেন তিনি। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘বারো রকম মানুষ’ ধারাবাহিক নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি। তবে নাদিয়া টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন ২০০০ সাল থেকে।

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ ও  এফএস নাঈম।

অভিনেত্রী পরিচয়ের বাইরে নৃত্যশিল্পী হিসেবেও বেশ পরিচিত তিনি। স্কুলে ভর্তির আগেই তাকে নাচের ক্লাসে ভর্তি হতে হয় বলে জানান। তখন শিশু একাডেমিতে নাচ শিখতেন। সেখানে প্রায়ই অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নাচ পরিবেশন করতেন এ গ্ল্যামারকন্যা। নাচের জন্যই প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। সেটা ছিল বিটিভির ‘শিশু মেলা’ নামে ছোটদের একটা অনুষ্ঠান। 

২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি এ অভিনেত্রী বিয়ে করেন অভিনেতা এফ এস নাঈমকে। বিয়ের আগে শোবিজ পাড়ায় তাদের প্রেম-ভালোবাসার কোনো গুঞ্জনই শোনা যায়নি। নাজনীন হাসান চুমকীর একটি নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে নাদিয়াকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন নাঈম। সে নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন তিনি। মন দেওয়া-নেওয়া সেখানেই। এরপর তাদের এক করার দায়িত্ব নেয় দুই পরিবার। 

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ ও  এফএস নাঈম।

নাদিয়ার ভাষ্য, হঠাৎ করেই আমাদের বিয়েটা হয় দুই পরিবারের সম্মতিতে। সত্যি বলতে, আমাদের প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে বিয়ে হয়েছে বলে মনে করতে। আমি আর নাঈম প্রায়ই বলতাম আমাদের কি সত্যিই বিয়ে হয়েছে? দিন যত যায় সম্পর্ক তত গাঢ় হয় বলে আমি মনে করি। সেভাবেই এখন সম্পর্কটা ক্রমান্বয়ে পরিণত হচ্ছে। 

নাদিয়ার মতো নাঈমেরও ভাষ্য, আমরা যে অনেক দিন প্রেম করে বেড়িয়েছি বিষয়টি কিন্তু সে রকম নয়। আমাদের ভালোলাগার ব্যাপারটি বাড়িতে জানানোর পর পারিবারিকভাবেই বিয়ের দিকে এগিয়েছি। আমার বাবা নাদিয়ার আম্মুর কাছে আমার বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। তারাই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। 

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ ও  এফএস নাঈম।

নাঈম বর্তমানে ব্যস্ত অভিনেতাদের একজন। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘কারাগার’ ওয়েব দিয়ে দর্শকের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সিরিজটি আলোচনার ঝড় তোলে। নাঈম বলেন, কাজের প্রশংসা পেলে সবারই ভালো লাগে। হইচইয়ের মতো বড় প্ল্যাটফর্মে আমার প্রথম কাজটি প্রদর্শিত হওয়ার পর প্রশংসা পাওয়ায় মনে হচ্ছে পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। এছাড়া যখন সিনিয়র শিল্পীরা ফোন করে অভিনয়ের প্রশংসা করেন তখন নিজেকে সার্থক মনে হয়।

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ

স্বামী-স্ত্রী দুজনই অভিনয় জগতের মানুষ। বাসার বাইরে বেশি সময় থাকতে হচ্ছে। সংসার সামলাচ্ছেন কীভাবে? এ প্রসঙ্গে নাদিয়া বলেন, যেহেতু দুজনই অভিনয়ে আছি, তাই একে অপরকে সহজে বুঝতে পারি। সংসার পরিচালনার জন্য দুজনের প্রতি দুজনের আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হয়। আমাদের মধ্যে সেটি আছে। তাই কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এভাবেই সংসার করতে চাই। 

দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসারও কমতি নেই। সেটিই জানা যায় দুজনের কথাবার্তায়। নাঈম বলেন, ভালোবাসা একটা অনুভূতির নাম। প্রিয় মানুষকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করা, কোনো কারণ ছাড়াই তার সঙ্গে জীবনটাকে ভাগাভাগি করার নামই হলো ভালোবাসা। 

নাদিয়া বলেন, ভালোবাসার সংজ্ঞা জানতে চাইলে প্রত্যেকের কাছেই হয়তো আলাদা আলাদা উত্তর পাওয়া যাবে। কিন্তু সব কথার মূল ভাব আসলে একটাই, ভালোবাসা একটা আপেক্ষিক বিষয়, মনের অনুভূতির বিষয়। এর সংজ্ঞা আসলে ভাষায় বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

 এফএস নাঈম।

 এদিকে নাদিয়ার কাছ থেকেই জানা গেল বিশেষ দিনগুলোতে তারা বাসায় পরিবারের সঙ্গেই কাটান। সেদিন দুজনের কেউ কোনো শুটিং রাখেন না। এছাড়া দুজনের বন্ধুদের সঙ্গেও দুজনের ভালো সম্পর্ক। নাদিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে নাঈম অনেক সময় ঘুরতে যান। একইভাবে নাদিয়াও নাঈমের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন। 

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ ও  এফএস নাঈম।

বিয়ের এতদিনে নাঈমের দোষ-গুণ কী কী চোখে পড়েছে? নাদিয়া বলেন, নাঈমের একটি বড় দোষ আছে। তবে তার বড় গুণ অনেক। ওর (নাঈম) দোষ একটাই, ও অনেক কিছু ভুলে যায়। অনেক সময় কিছু একটা বলল বা তাকে বলা হলো, সেটা সে ভুলে বসে থাকে। এটা তেমন দোষের মধ্যে পড়ে না, কিন্তু অনেক সময় এ নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়। আর নাঈমের বিশেষ গুণ হলো নাঈম সবার আগে পরিবারকে প্রায়োরিটি দেয়। মা-বাবা, বোন, বোনের ছেলে-মেয়ে, 

শ্বশুর-শাশুড়ি, আমি-সবাইকে খুব গুরুত্ব দেয়। 

দুজনেরই শুটিং শেষ করে বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যায়।

নাঈম-নাদিয়ার বেশিরভাগ কথা তাই সকালের খাবারের টেবিলেই হয়। তবে নিয়মিতই মুঠোফোনে কথা হয়। রাতেও সময় থাকলে আড্ডা দেন। ব্যস্ততা নিয়ে মান-অভিমান নেই। 

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ ও  এফএস নাঈম।

টিভি নাটকের বাইরে সিনেমাতেও নাম লিখিয়েছেন নাঈম। ২০১১ সালে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন ছোটপর্দার এ অভিনেতা। ‘জাগো’ নামের সেই ছবির পর ১০ বছর তাকে আর নতুন কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি। এর কারণ সিনেমার চিত্রনাট্য, গল্পে সন্তুষ্ট ছিলেন না। অনেক চিত্রনাট্য হাতে পেলেও কোনোটি ৫০ ভাগের বেশি খুশি করতে পারছিল না। তাই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। ফলও পেলেন। অবশেষে এক দশক পরে শতভাগ খুশি হয়ে বড়পর্দায় ফিরছেন। 

গেল বছর অরুণ চৌধুরীর পরিচালনায় সরকারি অনুদানের ছবি ‘জলে জ্বলে তারা’য় অভিনয় করেন নাঈম। এতে তার সহশিল্পী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। নাঈম জানান, অভিনয়ের দিকে যখন মনোযোগী হয়েছি তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিনেমা কম করলেও নিজের পছন্দেই করব। কারণ অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে এ সিনেমাটি সেই ইচ্ছে পূরণ করল। দর্শকও এটিতে আমাকে অন্যরকমভাবে দেখবেন। 

নাঈমের মতো সিনেমার প্রতি আগ্রহী নাদিয়াও। যদিও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সিনেমা তাকে খুব একটা টানত না বলে জানান। এ সময়ে এসে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন অভিনেত্রী। 

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ

তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকেই সিনেমায় কাজ করার অফার পাচ্ছি। প্রচুর কমার্শিয়াল সিনেমার অফারও পেয়েছি। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছে ছিল না। আমারও ছিল না। নাটকেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছি, পাশাপাশি নাচ ও মডেলিংয়ে। তবে এখন তো ভালো ভালো গল্পের সিনেমা হচ্ছে। টেলিভিশনের অনেক শিল্পীরা সে সব সিনেমায় কাজ করছেন। ওই রকম কাজ হলে করার ইচ্ছে আছে। 

অভিনয়ে নিয়মিত হলেও নাদিয়ার প্রথম ভালোবাসা নাচ বলেই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, নাচ আমার প্রথম ভালোবাসা। অনেক বছর ধরে দর্শকদের কাছ থেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে অনেক সাপোর্ট পেয়ে আসছি। দর্শকরা এখনো আমার নাচের প্রশংসা করেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবে গর্ববোধ করি। দেশে-বিদেশে অনেক শো করেছি নাচের।

বিটিভিতে একটা সময়ে আমার ও লিখনের জুটি হয়ে নাচের অনুষ্ঠান করার কথা দর্শকরা আজও বলেন। দীর্ঘদিন নাচের সঙ্গে থাকতে থাকতে ভালোবাসা জন্মে গেছে। এজন্য নাচের অনুষ্ঠান সহজে মিস করি না। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও নাচের ব্যাপারে আগ্রহী। 

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ ও  এফএস নাঈম।

সমসাময়িক সহশিল্পীদের তুলনায় নাঈমের কাজের সংখ্যা খুব কম। এর কারণ কী? এ অভিনেতা বলেন, সংখ্যা নয়, কাজের মানে বিশ্বাস করি। বেশি বেশি কাজ করলে অভিনীত চরিত্রের প্রতি সঠিক বিচার করা হয় না। একই চরিত্রে বারবার পর্দায় উপস্থিতি শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে ফেলে। একজন অভিনেতার আত্মতৃপ্তি হচ্ছে অভিনীত চরিত্রের মধ্য দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে স্থান পাওয়া। 

এই তারকা দম্পতির সঙ্গে কথায় কথায় জানা যায় শোবিজের তারকাদের সংসার ভাঙার বিষয়টি। কেন শোবিজ তারকাদের নিয়ে এত ট্রল হয় সেটি নিয়েও তারা কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে নাদিয়া জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণেই আজকাল খুব সহজে সবাই সব জানতে পারে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক সময় ভালো কাজের চেয়ে খারাপ বিষয়গুলো নিয়েই মানুষ মাতামাতি করে। অথচ শোবিজ তারকাদেরও অনেক ভালো কিছু আছে। সেগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় না। 

তিনি বলেন, আমাদের শোবিজে অনেক তারকা দম্পতি আছে। যারা আমাদের কাছে অনুকরণীয়। কিন্তু তাদের নিয়ে ফেসবুকে কথা হয় না। সব শেষে বলতে তারকারাও সাধারণ মানুষের মতোই ঘর-সংসার করেন। তাদের সংসারেও ভালো-মন্দ ঘটে। এটি নিয়ে ট্রল করার কিছু নেই। 

অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ ও  এফএস নাঈম।

এ নিয়ে নাঈম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই যোগ্যতার চেয়ে বেশি বলেন। কাকে তিনি বলছেন এটি তিনি কখনোই ভাবেন না। একটা বিষয় চোখে পড়লেই মন্তব্য করে বসে। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষদেরও সংসার ভাঙে। সেটি নিয়ে তো কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখে না। তবে একটা কথা সত্যি, তারকাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি কাজ করে।

যার কারণে তারকাদের কিছু হলেই মানুষ সেটি সহজে নিয়ে নেয়। আমাদের অনেক তারকাও মাঝেমধ্যে এমন কিছু কথা বলেন যেটি দর্শকের কাছে সমালোচনা জন্ম দেয়। আমি মনে করি এখন সব কিছু উন্মুক্ত। তাই যে কাউকে কিছু বলতে গেলে ভেবেচিন্তেই বলা উচিত। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //