সেনা অভিযানে নির্যাতনের অভিযোগ কাশ্মীরিদের

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কাশ্মীরিদের ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে। লাঠি ও তার দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি কাশ্মীরিদের বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়াকে ঘিরে সেখানে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানতে পেরেছে তাদেরকে লাঠি ও তার দিয়ে পেটানো এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হত। তাঁরা তাদের জখম হওয়া শরীর বিবিসির প্রতিবেদককে দেখিয়েছে।

তবে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নির্যাতনের অভিযোগ যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। সেনাবাহিনী এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন এবং কোনো প্রমাণ নেই’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

গত ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি সরকার। এর আগের দিন থেকে জম্মু-কাশ্মীরে কঠোর সামরিক নিরাপত্তা জারি করা হয়। সেখানকার সামান্য তথ্যই বাইরে আসছে।

দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজ্যটিতে। কারাগারের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দিদের পাঠানো হচ্ছে অন্যান্য রাজ্যের কারাগারগুলোতে।

বিবিসির প্রতিবেদক সামীর হাশমি বলেন, গত কয়েক বছরে ভারত বিরোধী যোদ্ধাদের আস্তানায় পরিণত হওয়া প্রায় ছয়টি দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা আমি গত কয়েক দিন পরিদর্শন করেছি। প্রায় সবক’টি গ্রামে রাতের বেলায় অভিযান, মারধর ও নির্যাতনের একই অভিযোগ শুনেছি কয়েকজনের মুখে।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে নারাজ। তবে গ্রামবাসী নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হওয়া শরীরের জখম আমাকে দেখিয়েছেন।

স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা তুলে নেওয়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর একটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। দুই ভাইকে ঘুম থেকে বাইরের একটি স্থানে তুলে নিয়ে যায় তাঁরা। ওই গ্রাম থেকে আরো ১০-১২ জনকে সেখানে আটক করে আনা হয়। তবে আতঙ্কে তাঁরাও প্রতিবেদকের কাছে পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি।

দুই ভাইয়ের একজন বলেন, ‘তাঁরা (নিরাপত্তা বাহিনী) আমাদের পেটাতে থাকে। আমরা তাদেরকে বললাম, আমাদের অপরাধ কী? গ্রামবাসীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন- আমরা মিথ্যা বলছি কি না, কিংবা খারাপ কিছু করেছি কি না? কিন্তু তাঁরা কিছুই শুনতে চায় না এবং কিছুই বলে না, তাঁরা শুধু আমাদের পেটাতে থাকে।’

`তাঁরা আমার শরীরের প্রতি অঙ্গে আঘাত করেছে। লাথি মেরেছে, লাঠি ও তার দিয়ে পিটিয়েছে। বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে। তাঁরা আমাদের পায়ের পেছনে আঘাত করেছে। আমরা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁরা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। মারধরের সময় চিৎকার করলে তাঁরা মুখে মাটি গুঁজে দিতো।’

আরেক যুবক বিবিসির এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তাঁকে সম্প্রতি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতন করে তাঁর একটি পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’

`তাঁরা (সেনা সদস্যরা) আমার হাত-পা বেঁধে আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখে। আমাকে প্রায় দুই ঘণ্টা নির্মমভাবে পেটাতে থাকে’, যোগ করেন ভুক্তভোগী ওই যুবক।