হংকংয়ের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব দেবে যুক্তরাজ্য

হংকংয়ের ৩০ লাখ বাসিন্দাকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, নতুন নিরাপত্তা আইনে হংকংয়ের স্বাধীনতা খর্বিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হংকংয়ের বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়া হবে।

বিবিসির খবরে জানানো হয়, সাড়ে তিন লাখ ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী এবং ২৬ লাখ যোগ্য আবেদনকারীকে আগামী পাঁচ বছর ব্রিটেনে বসবাসের সুযোগ দেয়া হবে। তার এক বছর পর ব্রিটেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, হংকংয়ের যেসব বাসিন্দাদের কাছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ওভারসিজ পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে তা কাটছাঁট করা হয়েছে। তারপরও এই পাসপোর্ট যাদের রয়েছে, তারা এখনো ভিসা ছাড়াই ছয় মাসের জন্য ব্রিটেনে থাকতে পারবেন।

নতুন নিয়মে অনাবাসী ব্রিটিশ নাগরিকরা পাঁচ বছরের জন্য ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস করতে পারবেন। এছাড়া কর্মসংস্থান এবং পড়াশোনার সুযোগও পাবেন। পাঁচ বছর পর তারা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তার একবছর পর নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে।

বরিসের দাবি, হংকংয়ের স্থানীয় প্রশাসন মঙ্গলবার যে নতুন আইন পাস করার কথা জানিয়েছে, তা ১৯৮৫ সালে ব্রিটেন এবং চীনের মধ্যে হওয়া যৌথ ঘোষণার পরিপন্থী। নতুন এই আইন দুই দেশের আইনি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে হংকংয়ের হস্তান্তর হওয়ার পর ৫০ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে হংকং এবং সেখানকার বাসিন্দাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না চীন।

নতুন আইন হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে বলেও দাবি করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

ব্রিটিশ শাসন থেকে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তরের ২৩তম বার্ষিকীর দিন ১ জুলাই বিতর্কিত হংকং নিরাপত্তা আইনটি কার্যকর হয়। গত ৩০ জুন বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এনপিসিএসসির বৈঠক শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৬২ জন সদস্যের সম্মতিতে আইনটি পাশ হয়।

এর ফলে এ আইনের দোহাই দিয়ে আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির ওপর বাড়তি ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পাবে বেইজিং। অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থীরা এই আইনকে হংকংয়ের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

তবে নতুন এ নিরাপত্তা আইন হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের জন্য কোনো হুমকি নয় বলে দাবি করেছে বেইজিং।

এ আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সাথে আতাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। 

এই পদক্ষেপ অঞ্চলটিতে অস্থিরতা ও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে। এর আগে গত মাসে চীনা কর্তৃপক্ষ  হংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন জারির ঘোষণা দিয়ে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থীরা। ওই ঘোষণার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে তারা।

১৫০ বছর ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকং চীনের কাছে ফেরত দেয় যুক্তরাজ্য। তখন থেকে বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হংকংকে ২০৪৭ সাল অবধি স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে চীন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //