বিশ্বায়নের বিশ্বাস ভেঙে পড়ছে

বলা হয়ে থাকে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে এক সুতায় গেঁথে রেখেছে বিশ্বায়ন। বিংশ শতকের শেষভাগে সৃষ্টি হওয়া এই বিশ্বায়ন এমন একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যাতে পৃথিবীর বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবস্থা একটি দেশের নির্দিষ্ট গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বায়নের প্রভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য নতুন মাত্রা পেয়েছে, পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে।

ধারণা করা হয়েছিল, বিশ্বয়ানের শক্তির প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সবসময়ই অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। 

কিন্তু চলমান করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, বিশ্বয়ানের নামে চলমান বিশ্ব বাণিজ্য আসলে কতটা নাজুক, কতটা স্বার্থপরতায় ভরপুর। এই মহামারি প্রমাণ করেছে, এই বিশ্ব আর কখনো আগের মতো হয়ে উঠবে না। কিন্তু আশার কথা হলো- বৈশ্বিক বাণিজ্য আবার সেরে উঠতে পারে যদি এর নীতিমালাগুলো ঢেলে সাজানো হয়। 

কভিড মহামারিকে ভর করে বিশ্বায়ন এখন একটি অদ্ভূত পর্যায়ে পৌঁছেছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে গত ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি নিবন্ধের কয়েকটি লাইনে এ বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। লাইন কয়েকটি ছিল এমন- ‘দুটি ট্রাক আমাদের গুদামে আসে পণ্য নিতে। ট্রাক দুটিতে সুকৌশলে লেখা ছিল খাদ্য পরিবহনের জন্য। পণ্য বোঝাই শেষে আলাদা আলাদা পথে ট্রাক দুটিকে ম্যাসাচুসেটসে যেতে হবে। মূলত ট্রাকের পণ্যগুলো যাতে আটক বা অন্যকেউ নিয়ে না যায়, এ জন্যই এত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ট্রাকে কি এমন পণ্য ছিল, যার জন্য এত সতর্কতা? এটি ছিল একটি হাসপাতালের পার্সোনাল প্রোকেটটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) সংগ্রহের মরিয়া প্রচেষ্টা।’

এটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাধারণ গল্প নয়। ঘটনাটি বিশ্ব বাণিজ্যে সম্ভাব্য বিশাল পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, একটি সরকার কতভাবে অবরোধ সৃষ্টি করতে পারে তার একটি উদাহরণও। জার্মানির জন্য পাঠানো থাইল্যান্ডের মাস্কের চালান আটকে দিয়ে তা নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানির পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে রীতিমতো ডাকাতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

  • (আধিপত্য বৃদ্ধির জন্য করপোরেটরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও ভঙ্গুর করে তুলছে। আর বাজার নিয়ন্ত্রণের চিন্তা থেকে বিশ্বকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে)

 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিত্র ইতালির পক্ষ থেকে সাহায্য চাওয়া হলে জার্মানি মাস্ক ও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জাম রফতানি আটকে দেয়। ভারতও জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রফতানি বন্ধ করেছে। 

বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ বৈশ্বিক বাজারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; যেখানে দেখা যায়- সরকার ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের কর্মকর্তারা চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য মধ্যবর্তী কারও সাথে যোগসাজশ করছে। গুজব ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর নির্ভর করেই এসব দেশের সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। শুধু তা-ই নয়, একে অন্যকে ছাড়িয়ে যেতে বলতে গেলে যুদ্ধ করে যাচ্ছে এসব দেশ। আর এ ধরনের আচরণ ম্যানুফ্যাকচারিংসহ অন্যান্য খাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। 

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পরবর্তী যুদ্ধটি হবে খাদ্য নিয়ে। তবে বর্তমানে বিশ্বায়ন যে সংকটের মধ্যে পড়েছে, তার শিকড় মহামারির চেয়েও অনেক গভীরে। অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক নেতারা এখনো আশা রাখেন, তারা আবার সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারবেন, বিশ্বায়নের মুক্ত বাজার জাদুর মতো কাজ করেছে যে সময়ে, সেই সোনালি সময়ও ফিরে আসবে বলে তাদের বিশ্বাস। কিন্তু সমস্যা হলো- সময় অবিনশ্বর নয়। শুধু কল্পনাগুলো টিকে থাকে। অতিমাত্রায় বিশ্বায়নের অর্থনীতিতে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজারে আধিপত্য ধরে রাখার ওপর সবচেয়ে জোর দিয়ে থাকে। আর এ ধরনের কর্মতৎপরতার ফলে কোম্পানিগুলোর রিটার্নের পরিমাণ বেড়ে যায়; বৃদ্ধি পায় শেয়ারমূল্যও। তবে আশঙ্কার কথা হলো- এই প্রবণতাগুলো পদ্ধতিগত দুর্বলতা সৃষ্টি করে, যেকোনো সংকটের সময়ে ভঙ্গুর সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিভ্রান্ত করে তোলে ও সুবিধা আদায়ের জন্য প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য সরকার প্রলুব্ধ করে থাকে; যা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের জন্য নতুন ভীতির সৃষ্টি করে।

বিশ্বায়নের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের আরো ভালো কিছু করতে হবে। এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নির্ভরশীলতার ঝুঁকি কমিয়ে আনবে ও বৈশ্বিক সমাজের নতুন লক্ষ্যকে সমর্থন দেবে। অথবা বিশ্বায়ন ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে এসে অর্থনৈতিক দক্ষতা ও বৈশ্বিক বাজারের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিতে হবে। চলমান মহামারি অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে- বিশ্বায়নের সমস্যা কি, এর বিকল্প উপায় নিয়ে আমাদের আরো পরিষ্কারভাবে ভেবে দেখার সময় চলে এসেছে। 

গত ৩০ বছর ধরে বিশ্বায়ন মানে- পণ্য, অর্থ, তথ্য ও সাধারণ মানুষের বিপুল সমাহার। ধারণা ছিল বিপুল সম্ভাবনার বিশ্বায়নের কারণে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কা এ বিশ্ব সামাল দিতে পারবে; কিন্তু এসব ভুল প্রমাণিত হলো কেন?

এর একটি কারণ হতে পারে বিশ্বায়নের বাস্তবতার ওপর থমাস ফ্রেডম্যানের মতো পণ্ডিতদের দেয়া ঝলমলে মোড়কে মানুষ রীতিমতো অন্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আরো ভালো ও সস্তা পণ্যের জন্য পুরো বিশ্ব চষে বেড়াতে পারে। যদি কোনোভাবে একজন সরবরাহকারী অনির্ভরশীল, লোভি অথবা অবাধ্য প্রমাণিত হয়; তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই সেই ব্যবসায়ীকে পরিত্যাগ করে তারা। সবশেষে বৈশ্বিক আন্তঃনির্ভরশীলতার কারণে মহামারি, বৈশ্বিক উষ্ণতা, দূষণ, অতিরিক্ত মাছ শিকারের মতো নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি করে। অথচ উদার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সামান্য সহযোগিতায় বাজার ব্যবস্থাই এসব সমস্যা সমাধান করতে পারে। 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক খুব দ্রুতগতিতে তথ্য পরিচালনা করে ও পুরো বিশ্বজুড়ে অর্থ সরবরাহ করতে পারে। এ অবস্থায় সরকার পক্ষের ভয় থাকে- তারা যদি মুক্ত বাজার পুঁজিবাদ বা নিওলিবারেলিজমের কঠিন নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে তাদের অর্থনীতি থেকে পুঁজি বেরিয়ে যাবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে গড়ে তোলা হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠান। সবাই এক বাক্যে মেনে নেয়- বেশি বাণিজ্য, বেশি ভালো। 

বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা দূর ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে বিবাদ সমাধানে জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেডকে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনে (ডব্লিউটিও) রূপান্তরিত করা হয়। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো সংস্থাগুলো অর্থনৈতিক সংস্কারের বিভিন্ন নিয়ম নীতিমালা তৈরি করে, যেখানে উদারীকরণ ও সরকারের হস্তক্ষেপ স্তিমিত করার পক্ষে জোর দেয়া হয়; কিন্তু এরপরেও বিশ্বায়ন ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিছু নির্দিষ্ট জায়গার ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহকারীরা একজোট হচ্ছে। অন্যদিকে অন্যদের প্রয়োজনীয় উপাদানের জন্য শুধু একজন সরবরাহকারীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। 

গত দশকটি ছিল ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি যন্ত্রণাদায়ক প্রমাণ। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট ছিল একটি পরস্পরসংযুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থার ফসল, যার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ নতুন আর্থিক পণ্যগুলো তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সৃষ্ট এই সংকট পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে আমরা আরো একবার বিশ্বায়নের দুর্বলতা দেখতে পেলাম। নিয়ন্ত্রণহীন বিশ্বায়ন কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তার উদাহরণ এটি। এছাড়া বিশ্বের সবদেশ অতিমাত্রায় সংযুক্ত থাকার কারণে ক্ষতির মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। যেমন- করোনাভাইরাসের কারণে ইতালির লম্বার্ডি অঞ্চলের যন্ত্রাংশ কারখানা বন্ধ থাকার কারণে গোটা পশ্চিম ইউরোপীয় গাড়ি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যন্ত্রাংশ না থাকার কারণে গাড়ি নির্মিত হয়নি, গাড়ির ডিলারদের ব্যবসা হয়নি ও গাড়ি ঋণ দিতে না পারার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও মুনাফার মুখ দেখেনি। একটি অর্থনীতিতে যখন সবকিছু পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত থাকে, তখন ক্ষতি হলে সবকিছুতেই হয়; কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় সমস্যা আরো জটিল হয়ে উঠেছে। 

ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের সময় কিছু পণ্যের এতটা বেড়েছে যখন কিনা সরবরাহ শৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হঠাৎ করে মাস্ক, টেস্ট কিট ও ভেন্টিলেটরের মতো পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে। আবার এসব পণ্যের মধ্যে কিছু কিছু জটিল সরবরাহ শৃঙ্খল অতিক্রম করতে হয়। যেমন- টেস্ট কিটের জন্য যে ধরনের রাসায়নিক উপাদান প্রয়োজন হয়, তা সহসাই পাওয়া যায় না। মাস্ক ও পিপিই তৈরিতে যে উপাদান প্রয়োজন, তা হাতে গোনা কয়েকটি দেশ সরবরাহ করতে পারে। মাস্ক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল ননওভেন ফেব্রিক শুধু জার্মানির একটি কারখানায় তৈরি হয়। চূড়ান্তভাবে বৈশ্বিক লজিস্টিক ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে, যেখানে শুধু পণ্যের উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন নয় কোনোরকমে তা পাওয়া গেলেও পরিবহনও সহজ নয়। এ কারণেই বোঝা যায়- চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে এই মুহূর্তে কেন নোংরা যুদ্ধ চলছে। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন বুঝতে পেরেছে- থ্রিএমের মতো কোম্পানিগুলো মেডিকেল মাস্ক তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই মাস্কগুলো যখন বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবহার করে তখন তা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনা বাজারে সস্তা হয়ে ওঠে।

করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই চীন সরকার সব ধরনের মাস্ক রফতানি বন্ধ করে দেয়। থ্রিএমের মতো চীনা কারখানাগুলোকে শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে মাস্ক তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়। এতে ট্রাম্প প্রশাসন চরমভাবে ক্ষেপে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো গত ফেব্রুয়ারিতে অভিযোগ করেন চীন থেকে কার্যক্রম পরিচালনাকারী মার্কিন কোম্পানি থ্রিএমকে জাতীয়করণ করে ফেলা হচ্ছে। এপ্রিলে করোনাভাইরাস নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের যখন পুরোপুরি ঘুম ভাঙে তখন থ্রিএমকে কানাডা, লাতিন আমেরিকার কোম্পানির কাছে মাস্ক রফতানি না করার নির্দেশ দেয়া হয়। এতে করে অন্য দেশগুলোও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দেয়। চীন ও অন্যান্য দেশে থ্রিএমের সাবসিডিয়ারিতে তৈরি করা মাস্কগুলো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে রীতিমতো ডিফেন্স প্রোডাকশন অ্যাক্ট ব্যবহার করে ট্রাম্প প্রশাসন। আর এতে করে সংকট আরো ঘনীভূত হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো বিপদে পড়েছে। অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান না থাকার কারণে ব্রাজিলের ল্যাবগুলোয় কভিড-১৯ পরীক্ষা হচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকা ও জাম্বিয়াও বিপদে রয়েছে। 

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলেও একে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা বাড়বে বৈ কমবে না। বিভিন্ন দেশ এখন অন্যদের কথা না ভেবে নিজেদের রক্ষা করতেই ব্যস্ত। 

পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারছেন- মুক্তবাজার ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন একটি আত্মনির্ভর আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশে সমর্থন দিতে পারে। আধিপত্য বৃদ্ধির জন্য করপোরেটরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ব অর্থনীতিকে আরো ভঙ্গুর করে তুলছে। আর বাজার নিয়ন্ত্রণের চিন্তা থেকে বিশ্বকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। 

বিশ্বায়নের বর্তমান মডেল অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যা রাষ্ট্র ও নাগরিক উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের সিদ্ধান্তের ওপর। ট্রাম্প যদি তার এজেন্ডা প্রতিস্থাপনে সম্মত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পরিষ্কার। বৈশ্বিক ব্যবস্থায় ভঙ্গুরতা উগ্র জাতীয়তাবাদীদের ইচ্ছা পূরণের সুযোগ এনে দেবে। বৈশ্বিক মুক্ত বাজারের পরিবর্তে রাষ্ট্রের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকবে। দেশগুলো তাদের উৎপাদন কার্যক্রম আরো বেশি স্থানীয়করণ করবে, যার ফলে বিশ্বায়নের অর্থনীতি ডুবতে থাকবে, বিদেশি পণ্যের ওপর চাহিদা কমবে। বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র হলো প্রাথমিক গ্যারান্টর। তাই এই দেশটি যদি অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদীদের অধীন হয়, তাহলে অন্য দেশগুলোও তাদের অনুসরণ করবে। 

নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদি ট্রাম্প পুনরায় বিজয়ী হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে জাতীয়তাবাদমুখী করা সহজ হবে। আর যদি হেরে যান, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। করোনাভাইরাস বিশ্বায়নের দুর্বলতা ও তার মরীচিকা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। আর এটি বিশ্বায়ন সম্পর্কে নিয়ে নতুন করে ভাববার সুযোগ করে দিয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //