চীন ঠেকাতে মার্কিন টোপ

সমুদ্র-বাণিজ্য, নৌপথ, নৌশক্তি ও নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উনিশ শতকের যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-কৌশলবিদ আলফ্রেড থায়ার মাহান বেশকিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। যেখানে শত বছর আগেই তার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল- সমুদ্র যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার পক্ষেই কেবল বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কেননা স্থলভূমিতে যতই সম্পদ থাকুক না কেন; সমুদ্রপথে সম্পদ বিনিময় বা বাণিজ্য যত সহজ অন্য কোনো পথে ততটা নয়। তাই কোনো দেশের যদি দুনিয়ায় বড় শক্তি হওয়ার বাসনা থাকে, তবে সেই দেশটিকে আশপাশের জলসীমায় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে হবে। 

বর্তমানে জলসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যে মাত্রায় মরিয়া, তাতে মনে হবে আলফ্রেড মাহানের সেই তত্ত্বই যেন অনুসরণ করছে তারা।

বর্তমান দুনিয়ার একক পরাশক্তি হিসেবে নৌশক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক নম্বরে। বলা যায়, বিশ্বজুড়েই সমুদ্রে তারা কর্তৃত্ব জোরদার করেছে। এরপরেই রয়েছে চীন। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠছে না যুক্তরাষ্ট্র। তাই হাত মিলিয়েছে ভারতের সঙ্গে। করেছে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট বা এলইএমওএ চুক্তি। ফলে দেশ দুটি একে অন্যের ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে, তা সামরিক কিংবা মানবিক- যেকোনো প্রয়োজনেই হোক না কেন। 

পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে কাছে টানতে বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলের অংশ হলো ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি’। ২০১৯ সালে এ কৌশলটি নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও একটি ‘উদীয়মান অংশীদার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মূলত, এ অঞ্চলে চীনের সামরিক আধিপত্য বৃদ্ধির পর বিষয়টি নিয়ে অধিক মনোযোগী মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতেও আগ্রহী তারা, যা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেরই একটি অংশ। 

মার্কিন কূটনীতির এশিয়া চ্যাপ্টারে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান অতিগুরুত্ব সহকারেই দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগটাও এখানকার বাস্তবতা। যদি প্রতিবেশী ভারতের কথা চিন্তা করি, তাদের অর্থনীতি কিন্তু সেই অবস্থায় নেই, যেমনটা চীনের আছে। একইভাবে যুুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না। এমন বাস্তবতায় চীনের দিকে বাংলাদেশের হেলে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়।

মার্কিন কূটনীতির এশিয়া চ্যাপ্টারে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান অতিগুরুত্ব সহকারেই দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগটাও এখানকার বাস্তবতা। যদি প্রতিবেশী ভারতের কথা চিন্তা করি, তাদের অর্থনীতি কিন্তু সেই অবস্থায় নেই, যেমনটা চীনের আছে। একইভাবে যুুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না। এমন বাস্তবতায় চীনের দিকে বাংলাদেশের হেলে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়।

ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশেরও গুরুত্ব বেড়েছে বিশ্বের পরাশক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। সম্প্রতি বিরল এক ঘটনার জন্ম দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড. মার্ক টি এসপার। এ সময় তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়নে সহায়তার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং অস্ত্র বিক্রিতে অংশদারিত্বের প্রত্যাশা জানান। মূলত উদীয়মান ‘মিত্র’ দেশের ওপর চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব থামাতেই তাদের এই প্রতিরক্ষা কৌশল। জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কি এশিয়ান রিভিউয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্যই উঠে এসেছে। 

এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমটির সাম্প্রতিক এক ই-মেইলের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লরা স্টোন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করতে চাই। পারস্পরিক স্বার্থেই এই সহযোগিতা। এ ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখানো হবে। তাই দেশটির কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করতে অংশীদার হিসেবে আমরা প্রস্তুত।’ তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ এমন কোনো চুক্তি করলে তাতে বেশি হতাশ হবে চীন। কারণ বর্তমানে তারাই সবচেয়ে সস্তায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশ। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য দিয়ে নিক্কি এশিয়ান রিভিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই অধিক পরিমাণ অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ। তবে ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল নাগাদ তাদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে মাত্র ১১ কোটি ডলারের অস্ত্র। অন্যদিকে এই সময়কালে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে ২৫৯ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। সম্প্রতি দুটি সাবমেরিন ও দুটি যুদ্ধ জাহাজও কেনা হয়েছে শি জিনপিংদের কাছ থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রিয়াজ অবশ্য বলেন, ‘ঢাকা যখন বেইজিংয়ের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ঢাকায় মাস্ক এবং পিপিই পাঠিয়েছে চীন। এ ছাড়া মহামারিতে কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পাঠানো হয় একটি মেডিক্যাল টিম। বাংলাদেশে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের প্রক্রিয়াও অগ্রসরমান। সম্প্রতি ভারত সীমান্তঘেঁষা উত্তর-পূর্বের শহর সিলেটের বিমানবন্দরে ২৫ কোটি ডলারের টার্মিনাল নির্মাণ কাজও নিশ্চিত করেছে চীন। এমনকি তাদের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শতকরা ৯৭ ভাগের ওপর থেকে শুল্কহার প্রত্যাহার করেছে বেইজিং। ভারতের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে অমীমাংসিত থাকায় তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার জন্যও চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে ঢাকা। অথচ এর মধ্যেই বিশেষভাবে সক্রিয় হলো ওয়াশিংটন। এ অবস্থায় বিরোধপূর্ণ প্রত্যাশার স্থানে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে বাংলাদেশকে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে ফোন করেছিলেন। বাংলাদেশ যেন শুধু চীনের দিকে হেলে না থাকে সে ব্যাপারে অনুরোধ জানান তিনি। আব্দুল মোমেন তখন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অনুরোধ করছে। আসলে আমরা ওই ঝামেলায় যেতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মাঝে মাঝে আমাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চায়। এ লক্ষ্যে চুক্তিও করতে চায়। তারা আরও বলে, ভারত তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কেনে, অনেক দেশেই তারা অস্ত্র বিক্রি করে। আমাদের কাছেও বিক্রি করতে চায়। এটা ট্রাম্পের পলিসি। তাই আমরা কেবল তাদের কথা শুনি, কিছু বলি না। আমরা আমাদের অর্থ দিয়ে গরিবের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করব, অস্ত্র কিনে কেন টাকা ব্যয় করতে যাব?’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি হলো- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব; কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা কোনো বলয়ভুক্ত হই না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে নিয়মিত সংলাপের ব্যবস্থা আছে। একে অন্যের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা করা হয়; কিন্তু বাংলাদেশ সামরিক বলয়ে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি থেকে বেসামরিক অবকাঠামো তথা রাস্তাঘাট উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হলে তা বিবেচনা করা হবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ ঘিরে ট্রাম্প সরকারের ইন্দো-প্যাসিপিক স্ট্র্যাটেজির মূল লক্ষ্য দুটি। প্রথমত, প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শর্তহীনভাবে এ দেশের ভূমি ও জলসীমা ব্যবহারের পাঁয়তারা- ঠিক যেমনটি তারা করছে সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। এতে করে তাদের কৌশলগত শত্রু চীন, সাময়িক কৌশলগত মিত্র ভারত, দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক চলে আসা মিয়ানমারকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সহজ হবে। এর বাইরে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান ও নেপালের ওপর নজরদারির জন্য এ অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানই সর্বোৎকৃষ্ট। দ্বিতীয়ত, তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজসম্পদ উত্তোলন বা আহরণ, বিপণন ও বিতরণে একচেটিয়া প্রভাব বলয় সৃষ্টি করা। প্রথমটির জন্য তারা ভেতরে-বাইরে বহুমুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তারা প্রায় শতভাগ সফল। গ্যাস ও তেল ক্ষেত্রে কাজ করত এমন সফল কোম্পানিকে ছলেবলে কৌশলে বিদায় করে দিয়ে মার্কিন কোম্পানি শেভরন প্রায় ১০ বছর ধরে এ দেশে একচেটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

এদিকে, মিয়ানমার থেকে আফ্রিকার জিবুতি পর্যন্ত একের পর এক সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে চীন। বাণিজ্যিক ও সামরিক প্রয়োজনে বাংলাদেশেও নোঙর করার জায়গা খুঁজছে তারা। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের অংশগ্রহণ প্রায় নিশ্চিত ছিল; কিন্তু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিতে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। লরা স্টোন নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণ হলো- বাংলাদেশের মতো, যুক্তরাষ্ট্রও এ অঞ্চলের একটি দেশ। সব দেশের সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়ার নৌ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই আমরা এমন সব উদ্যোগে জোর দিয়েছি, যা শান্তিপূর্ণ নিরাপত্তাকেই সামনে এগিয়ে নেবে।’

অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের প্রভাব দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভেও (বিআরআই) অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক এজেন্ডা দৃঢ়তার সঙ্গে বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।’ ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের এই সিনিয়র ফেলো আরও মনে করেন, ‘চীনের যে ক্রমবর্ধমান প্রভাব এ অঞ্চলে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সেই প্রভাব অতিক্রম করা অসম্ভব।’

বাংলাদেশি পণ্য রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে দেশটির বাজারে রফতানি করা হয় নয় হাজার মিলিয়ন ডলারের পণ্য। প্রচুর রেমিট্যান্সও আসে আমেরিকা থেকে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি করোনাকালে যেসব মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে, তাদের তালিকা পাঠানো হলে এ বিষয়ে ট্রাম্প সরকার সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস চীন। তাই তাদের সঙ্গে রয়েছে জটিল বাণিজ্যিক ঘাটতি। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৮৯১ মিলিয়ন ডলারের মতো। অর্থাৎ চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর বিপরীতে রফতানি হয় মাত্র ৭৪৭.৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যে চীনের প্রভাব অনেক বেশি। দেশটি থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ এসেছে (স্টক বিনিয়োগ) দুই হাজার ৯০৭ মিলিয়ন ডলার। গত বছরই এক হাজার ৪০৮ মিলিয়ন ডলার নতুন বিনিয়োগ এসেছে। 

এ প্রসঙ্গে কূটনীতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, “চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ পলিসিই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যাথার মূল কারণ। তারা মনে করে এটি বাস্তবায়ন হলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কর্তৃত্ব চলে যাবে চীনের কাছে। তাই তা ঠেকাতে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে জোট করে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন আমাদের মতো দেশগুলোকেও পাশে চায় তারা। সে জন্য মার্কিন কূটনীতির এশিয়া চ্যাপ্টারে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান অতিগুরুত্ব সহকারেই দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগটাও এখানকার বাস্তবতা। যদি প্রতিবেশী ভারতের কথা চিন্তা করি, তাদের অর্থনীতি কিন্তু সেই অবস্থায় নেই, যেমনটা চীনের আছে। একইভাবে যুুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না। এমন বাস্তবতায় চীনের দিকে বাংলাদেশের হেলে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে কোনো পক্ষের দিকেই পুরোপুরি ঝুঁকে না পড়া। আবার ভারসাম্য বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থে সুযোগগুলোকেও কাজে লাগাতে হবে। কারণ দু’পক্ষের এই ঠান্ডা যুদ্ধে বেশকিছু সুযোগ আসবে আমাদের জন্য।”

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //