থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর টিকা নেয়ার মাধ্যমে গতকাল শুক্রবার (১২ মার্চ) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত করলো দেশটি।
মূলত ডেনমার্ক ও নরওয়েসহ কয়েকটি দেশে রক্ত জমাট বাধার মতো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে এই টিকা দেয়া স্থগিত করা হয়েছে- এমন খবর আসার পরেই থাইল্যান্ড এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনর টিকা নেয়ার সাথে মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো যোগসূত্র নেই বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে। একইসাথে এই টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইউরোপের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ইতিমধ্যেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাধার মতো লক্ষণের খবর প্রকাশ পেয়েছে।
ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় রক্ত জমাট বাধার কোনো লক্ষণ তারা পায়নি। অ্যাস্ট্রাজেনেকাও বললে, ব্যাপকভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে এই টিকার নিরাপত্তা সম্পর্কে সমীক্ষা করা হয়েছে।
থাইল্যান্ডের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন কমিটির উপদেষ্টা পিয়াসাকাল সাকলসাতায়াদর্ন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঙদিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মান ভালো, তবু কিছু দেশ দেরি করে প্রয়োগ করার কথা বলেছে। আমরাও দেরি করেই করবো।
তবে দেশটির জন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ইউরোপে সাথে থাইল্যান্ডে আসা টিকার ব্যাচ আলাদা, আর রক্ত জমাট বাধার সমস্যা এশিয়ানদের মধ্যে সাধারণভাবে দেখা যায়নি।
চীনের করোনাভ্যাক টিকারও দুই লাখ ডোজের সাথে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকারও ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০০ ডোজ টিকা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থাইল্যান্ডে পৌঁছায়। আর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ করোনাভ্যাক টিকা নিয়েছে। দেশটি বলছে, চীনা এই টিকার প্রয়োগ তারা অব্যাহত রাখবে।
এদিকে যুক্তরাজ্যে ঔষধ ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, টিকায় সমস্যা হচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ এখনো নেই এবং জনগণকে টিকা দেয়া অব্যাহত রাখা উচিত। যুক্তরাজ্যজুড়ে এক কোটি ১০ লাখের বেশি ডোজ টিকা ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়াতেও তিন লাখ ডোজ টিকা গেছে এবং দেশটি বলছে, তারা টিকাদান অব্যাহত রাখবে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ মূহুর্তে চিকিৎসকদের পরিষ্কার বার্তা হলো- এটি নিরাপদ টিকা ও আমরা টিকাদান চালিয়ে যেতে চাই।
ফিলিপাইনও বলছে, টিকাদান স্থগিত করার কোনো কারণ নেই। দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, টিকা নেয়ার কয়েকদিন পর আটজনের মৃত্যুর সাথে টিকার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
তবে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও আইসল্যান্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা দেয়া আপাতত স্থগিত করেছে। ইতালি ও অস্ট্রিয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার নির্দিষ্ট কিছু ব্যাচের টিকার ব্যবহার পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বন্ধ করেছে।
ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি জানিয়েছে, ডেনমার্কের সিদ্ধান্ত পূর্বসতর্কতা হিসেবে নেয়া ও রক্ত জমাট বাধার যেসব খবর এসেছে সেগুলোর বিষয়ে পূর্ণ তদন্ত হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কয়েকদিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছে- অক্সফোর্ডের টিকা গ্রহণ করার পর কারও কারও শরীরে রক্ত জমা বাঁধছে। কিন্তু অক্সফোর্ডের টিকা নিলে মানুষের শরীরের রক্ত জমা বাঁধবে- এমন কোনো আভাস মেলেনি।
সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বলেন, অক্সফোর্ডের টিকা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী বর্তমানে এমন কোনো প্রমাণ নেই। অক্সফোর্ডের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এ ধরনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি। -বিবিসি
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : করোনাভাইরাস টিকা অক্সফোর্ড রক্ত জমাট যোগসূত্র ডব্লিউএইচও
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh