দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিক বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস মহামারির স্থবিরতা কাটিয়ে ফের গতিশীল হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। কিন্তু বছরখানেক আগে অর্থনীতিতে যে আঘাত দিয়েছিল করোনা, তার ক্ষত পুরোপুরি মেটানো বেশ কঠিন। অথচ এমন কঠিন সময়েও দারুণ কৃতিত্ব দেখিয়ে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। 

বলা বাহুল্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হওয়া দেশের নাম বাংলাদেশ। উন্নয়নের সেই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে আগামী বছরগুলোতেও। আর তা হলে ২০২২-২৩ অর্থবছরেই জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশকে আবারও পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ।

গত বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতি বিষয়ক সবশেষ প্রতিবেদনে (সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস) এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত হিসাবে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশের (জুলাই-জুন) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইতিবাচক ধারায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময় এ অঞ্চলের বাকি সব দেশের প্রবৃদ্ধিই ছিল নেতিবাচক। ওই অর্থবছরে ভারতের (এপ্রিল-মার্চ) প্রবৃদ্ধি মাইনাস ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, মালদ্বীপের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) মাইনাস ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) মাইনাস ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ভুটানের (জুলাই-জুন) মাইনাস ০ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালের (জুলাই-জুন) মাইনাস ২ দশমিক ১ শতাংশ ও পাকিস্তানের (জুলাই-জুন) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ০ দশমিক ৫ শতাংশ।

এরপর ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় ফের ইতিবাচক ধারায় ফেরে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ শতাংশ, ভারতের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, নেপালের ১ দশমিক ৮ শতাংশ, পাকিস্তানের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, মালদ্বীপের ২২ দশমিক ৩ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই বছরটিতে কেবল ভুটানই নেতিবাচক ধারা থেকে বের হতে পারেনি। তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ১ দশমিক ২ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরেও বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক গতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এসময় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া নেপালের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ও ভুটানের প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। ওই বছর এ অঞ্চলের বাকি দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। সেসময় ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, মালদ্বীপের ১১ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াতে পারে মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশে।

ভারতের অবনতি অব্যাহত থাকবে এর পরের বছরও। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি আরও কমে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়বে। ওই বছর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে আবারও ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সে সময় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কেবল মালদ্বীপের চেয়েই পিছিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

সুতরাং বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, আগামী বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে উত্থান-পতন দেখলেও সুষমগতিতেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //