চ্যালেঞ্জের পাহাড়ে ঋষি

দুই মাসের মধ্যে তিনজন প্রধানমন্ত্রী দেখল যুক্তরাজ্য। তা-ও আবার কোনো নির্বাচন ছাড়াই! অক্টোবর মাসে ব্রিটেনের সবচেয়ে পুরনো দল কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি পার্টি) তার নতুন নেতা বেছে নিয়েছে। দেশটির অন্যতম ধনাঢ্য রাজনীতিক এখন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ঋষি সুনাক। 

বিশ্লেষকদের মতে, ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা, দুর্বল নেতৃত্ব, দলীয় ও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দেশের ওপরে স্থান দেওয়া, রাজনৈতিক মেরুকরণ, জনপ্রিয় ভাবনা থেকে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি কারণে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার মেয়াদ পূরণ করাটাই এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত নামাজাদা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা ধনাঢ্য রাজনীতিবিদ ঋষির ওপর চাপ কোনো অংশে কম থাকবে না। ঋষি কনজারভেটিভ পার্টিতে নতুন কেউ নন, জনপ্রিয় মুখ। আগে বরিস জনসনের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে বরিসের অন্যতম প্রচারসঙ্গী ছিলেন। করোনা ভাইরাস মহামারির সময় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের জন্য বিপুল অর্থমূল্যের আর্থিক প্যাকেজ তৈরি করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ওই সময় তার দলের ওয়েবসাইটে তাকে ‘পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এখন তার সামনে রয়েছে এক চ্যালেঞ্জের পাহাড়। 

কে এই ঋষি সুনাক

যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাউদাম্পটনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দু পিতা-মাতার ঘরে জন্ম ৪২ বছর বয়সী প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশের আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান শ্যাক্সের নামে একটি ব্যাংক ও হেজ ফান্ডে কাজ করতেন। সুনাকের স্ত্রীর নাম অক্ষতা মূর্তি ভারতের অন্যতম ধনী টেক জায়ান্ট নারায়ণ মূর্তির মেয়ে। 

রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার নির্বাচনী এলাকা থেকে ২০১৫ সালে এমপি হয়েছিলেন ঋষি। আর তাই ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে খুব কম লোকই তার কথা শুনেছিল; কিন্তু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ রাজকোষের চ্যান্সেলর অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হলে তিনি জনসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আসার পর নিজের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে করোনার বিশাল প্রভাবের মুখোমুখি হন ঋষি। 

সমস্যার পাহাড় ব্রিটেনে

ঋষি যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে উথাল-পাথাল অবস্থা চলছে। ছয় বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছেন। এর মধ্যে ব্রেক্সিটের কারণে সরে যেতে হয়েছে ডেভিড ক্যামেরন, তেরেসা মে-কে। ২০১৯ সালে বিপুল ভোটে প্রধানমন্ত্রী হন বরিস। তিনি ব্রেক্সিট ইস্যু সফলভাবে মোকাবিলা করলেও করোনা নিয়ে সমালোচনার শিকার হন। সামাজিক দূরত্ব না মেনে পার্টির আয়োজন করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ঘটনার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে ও জরিমানা দিতে বাধ্য হন। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। তীব্র অসন্তোষের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বরিসের স্থলাভিষিক্ত হন লিজ ট্রাস।

তিনি মূলত ধনীদের কর কমিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন; কিন্তু ১০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, পাউন্ডের পতন, বন্ধকের হার বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণগুলো ট্রাসকে অথৈ সাগরে ফেলে দেয়। এর মধ্যে একটা ‘মিনি বাজেট’ ঘোষণা করে সেখানে করপোরেশন কর কমানো, সবার জন্য প্রযোজ্য আয়করে ১ শতাংশ ছাড় এবং জাতীয় বিমার চাঁদা বাড়ানোর আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। ব্যাংকারদের বোনাসের সীমা তুলে দেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চরমে ওঠে। এর জেরেই শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয় তাকে।

নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক টম কেগিল বলেন, ‘ঋষির ডেস্কে বেশ কয়েকটি বিষয় তার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রথমত মিনি-বাজেট নিয়ে ট্রাস যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা এখনো সমাধান হয়নি। এ ছাড়া আর্থিক বাজারগুলো এখনো স্থিতিশীলতা ও আত্মবিশ্বাসের সন্ধান করে চলেছে। তারা কিছুটা আর্থিক বিধিনিষেধও আশা করছে। প্রথম দুটি জিনিসের চেয়ে পরেরটি কঠিন হতে পারে। কারণ বাজার এটিই চায় এবং এর জন্য সম্ভবত ব্যয় হ্রাস বা ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। আর এর কোনোটিই জনপ্রিয় হবে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত ঋষিকে তিক্তভাবে বিভক্ত একটি দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এতে সময় লাগবে এবং দলের মধ্যে এখন যে ক্ষত আর বিভক্তি রয়েছে তা দ্রুত নিরাময়ও হবে না। বরিসের পদত্যাগের পর কনজারভেটিভ পার্টির অনেক সদস্য ঋষিকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখে থাকেন। কারণ সুনাকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তই জনসনকে গত জুলাইয়ে ব্রিটেনের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল।’ অন্যদিকে ব্রিটেনে আগাম সাধারণ নির্বাচনের জন্য বিরোধীদের ক্রমাগত দাবি সত্ত্বেও বিষয়টি ঋষিকে বাতিল করতে দেখা গেছে। এদিন অর্থনৈতিক অস্থিরতার এই সময়ে ‘স্থিতিশীলতা ও ঐক্য’ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঋষি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য একটি বড় (অর্থনীতির) দেশ; কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরা বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তবে এ থেকে উদ্ধার পেতে আমরা কাজ করছি।’ 

এ প্রসঙ্গে স্ট্র্যাথক্লাইড ইউনিভার্সিটির রাজনীতির সিনিয়র লেকচারার মার্ক শেফার্ড বলেন, ‘ব্রিটেনে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নির্ভর করবে ঋষি নিজের দলের সমর্থন জোগাড়ে কতটা সক্ষম হলেন তার ওপর। দল ঐক্যবদ্ধ না হলে, সরকার পরিচালনা কার্যত অসম্ভব করে তোলার জন্য কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে যথেষ্ট অন্তর্দলীয় মতবিরোধ রয়েছে এবং সেই পরিস্থিতিতে সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় হিসেবে নির্বাচনকে দেখা হতে পারে। তবে এই ধরনের পরিস্থিতিতে দলটি নির্বাচনে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর তাই ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও মতবিরোধ রোধ করে তিনি যদি স্থির থাকতে পারেন, তবে তার টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ব্রিটেনের অর্থনীতি বর্তমানে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৪০ লাখের বেশি শিশুসহ ব্রিটেনের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ অপুষ্টির শিকার। গত ১৮ অক্টোবর গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে একটি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। কেবল অসচ্ছলরাই নন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট প্রভাবিত করছে মধ্যবিত্ত ব্রিটিশদেরও। যুক্তরাজ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নেই নতুন অভিবাসীদেরও। যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় দাতব্য সংস্থা ট্রসেল ট্রাস্টের তথ্য বলছে, ২০০৮-১৮ সালের মধ্যে বিতরণ করা জরুরি খাবার পার্সেলের হার বেড়েছে ৫ হাজার ১৪৬ শতাংশ। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, স্কুল থেকে একবেলা পাওয়া বিনামূল্যের খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অনেক শিশুশিক্ষার্থী।

দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩.৩ শতাংশ, ২০২৩ সালে ০.২ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ১ শতাংশ। এ ছাড়া শুধু ২০২২ সালের শেষ নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ শতাংশ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটির মুদ্রাস্ফীতির হার বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর ফলে ব্রিটেনজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে, ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কনজারভেটিভদের ব্যর্থতার সুযোগে আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবি তুলেছে প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টি। 

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি যুক্তরাজ্যে বেশ আগে থেকেই উপেক্ষিত। ইউরোপে ২০০৬ সালের শেষের দিকে বাড়তে শুরু করে ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি’, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পর যা আরও খারাপ হয়। মূলত সেখান থেকেই নিম্ন আয়ের ব্রিটিশদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় রূপ নেয় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, ১৯৭২ সালের পর ব্রিটেনে এরকম আর্থিক সংকট আর দেখতে পাওয়া যায়নি।

২০১৬ সালের পর থেকেই ধীরে ধীরে ব্রিটেনের আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়। দেশের পেনশন তহবিল উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি সামালদিতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ সরকারের ঋণের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। ইইউ ছেড়েছে যুক্তরাজ্য। এদিকে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে গণভোটের কথা বলছে স্কটল্যান্ড। উত্তর আয়ারল্যান্ডও ইইউয়ে ফিরে যেতে আগ্রহী। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যখন গোটা ইউরোপ টালমাটাল তখন যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনও টালমাটাল হয়ে পড়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস এ ক্ষেত্রে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ইউক্রেনের জন্য একের পর এক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমনকি যুদ্ধের মধ্যে তিনবার ইউক্রেন সফরে যান তিনি। নিজ দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে ইউক্রেনকে যুক্তরাজ্যের সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতা চালিয়ে নিতে বাড়তি চাপের মুখে থাকবেন ঋষি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি অভিযান আরও জোরদার করেন, সে ক্ষেত্রে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে বা কী পদক্ষেপ নেয়া হবে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তাকে। পাশাপাশি নিজ দেশের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে টোরি এমপিদের পক্ষ থেকে চাপ মোকাবিলা করতে হবে। ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে- নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি কী অবস্থান নেবেন।

তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- অভিবাসীদের বিষয়ে ঋষি কোন রাস্তা অনুসরণ করবেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে অভিবাসীদের নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস সরকারের ‘রুয়ান্ডা নীতি’ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন তিনি। এই নীতির আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাজ্য থেকে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা হবে। যুক্তরাজ্য সরকারের অবৈধ অভিবাসীদের জোরপূর্বক রুয়ান্ডায় পাঠানোর নীতির ঘোরবিরোধী ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর)। তাই অভিবাসী-শরণার্থীদের জন্য ঋষির নীতি যে ঋষিসুলভ হবে না, তা বলাই বাহুল্য।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //