আগামী বছর অধিকতর অর্থনৈতিক ঝুঁকি

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য যদিও এবছর একটি শোচনীয় বছর ছিল; কিন্তু সামনে সময় আরও খারাপ হতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভের উচ্চগতির সুদের হার ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ইউরোপে যদি অপরিবর্তিত থাকে তা হলে এটা বিস্ময়কর ঘটনাই হবে। এছাড়া কোভিডের ঝাঁকুনি এবং সাম্প্রতিক অতিমন্দা চীনের অর্থনীতিকে প্রায় স্থবিরতার মুখে ফেলে দিয়েছে।

পরিস্থিতি চরম নেতিবাচক হলে তবেই এতসব ঘটনা একসঙ্গে ঘটে। বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অপনোদন ঘটতে পারে বলে অবহিতও করেছে ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস। এ ধরনের হতাশাজনক এবং অসঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি এটাই বোঝায়, বিশ্ব অর্থনীতিতে আসলে বড় কিছু ভুল হয়ে গেছে। ২০২২ সালে যার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।

ধারের অর্থে ধার করা অর্থ, চীনের পরিবর্তিত চাহিদা, ভূরাজনীতি, নানান গোপন উপাদান প্রভৃতি মুদ্রাস্ফীতিকে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় নিয়ে গিয়ে অর্থবাজারকে কয়েক ট্রিলিয়ন ক্ষতির সম্মুখীন করেছে; কিন্তু তার পরও কিছু ইতিবাচক চমকের কারণে পরের বছরের অর্থনৈতিক পতন থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। 

ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম শ্রমবাজারকে স্থিতিস্থাপক করার মধ্য দিয়ে কল্পিত মাঝারি অর্থনৈতিক মন্দা ঘোচাতে পারে। ইউরোপকে মন্দা থেকে রক্ষা করতে পারে উষ্ণ আবহাওয়া। চীনও দ্রুত লকডাউন তুলে নিতে পারে। গত সপ্তাহে এই সম্ভাবনাগুলোর কয়েকটির দেখাও অবশ্য মিলেছে। যদিও নানান কারণে আশাবাদী হওয়াটা ভীষণ কঠিন ব্যাপার; কিন্তু এগুলো যদি না ঘটে, তা হলে সুদের হার আর প্রবৃদ্ধির দিকে তাকিয়ে থাকা বিনিয়োগকারীদের পুনরুদ্ধারের জন্য বাজি ধরা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। 

আশাবাদী হওয়াটা কঠিন

সামনের বছরের সবচেয়ে অর্থনৈতিক ঝুঁকির কিছু নির্দেশিকার একটি হলো- ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের বেঞ্চমার্ক সুদের হার এই বছরের শুরুতে শূন্য থেকে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে ৫% পর্যন্ত হতে পারে। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক আর্থিক কড়াকড়ি ইতোমধ্যে আমেরিকার অর্থনীতি এবং বিশ্বের ক্ষতি করছে।

রিয়েল এস্টেট থেকে অটো তথা সংবেদনশীল হারের শিল্পে উচ্চতর ঋণের খরচের কারণে ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে মার্কিন মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছে ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস দুই মিলিয়নেরও বেশি আমেরিকানের চাকরি হারানোর ব্যাপারেও অবহিত করেছে। যদিও কোভিড সংকটই মূলত শ্রমবাজারকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অর্থনীতিবিদরা এই অবস্থাকে বেকারত্বের স্বাভাবিক হার বলছেন।

পরিস্থিতি এর চেয়ে ভালো হতে পারে, যদি মুদ্রাস্ফীতি যত দ্রুত এবং রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়, যেভাবে মুদ্রাস্ফীতি দৃশ্যমান হয়েছে; কিন্তু ব্লুমবার্গ ইকোনমিকস মুদ্রাস্ফীতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কার কথাই বলছে। কোভিডে ব্যহত শ্রমবাজার মার্কিন হারকে ৬%-এ ঠেলে দিতে পারে।

যদি এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে থাকে, জেরোম পাওয়েল যাকে একটি সম্ভাবনার কথা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমকে ৬% পর্যন্ত হার বাড়াতে হতে পারে, যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিকে দীর্ঘ এবং গভীরতর মন্দার দিকে নিয়ে যাবে।

বেশিরভাগ দেশকে যেহেতু আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতি সমস্যার কবলে পড়তে হয় এবং তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে একই পথ গ্রহণ করতে হয়, মূলত বিশ্বব্যাপী এই ঝুঁকিটিরই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে জাপানও নেতিবাচক হারের সাথে আটকে আছে। ডলারের মূল্যের বিপরীতে ইয়েনের ১৫% পতন হওয়ায় জাপানকে মুদ্রাবাজারে ভারী মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে।

ঋণঝুঁকি ফিরে আসছে

যতদিন প্রবৃদ্ধির হার ঋণ নেওয়ার খরচের চেয়ে বেশি ছিল, ততদিন সরকারি ঋণ সস্তায় এসেছিল। বিভিন্ন দেশের সরকার এটি স্তূপ করে রেখেছিল। জি-৭ উন্নত অর্থনীতির মোট পাওনা এই বছর জিডিপির ১২৮%-এ বেড়েছে, যা ২০০৭ সালে ছিল ৮১%।

এই বছরের সুদের হার বৃদ্ধি বড় ঋণের বোঝা নির্দেশ করছে। অর্থনীতির মন্থরতা এবং সুদের হার বৃদ্ধির সাথে ক্যালকুলাস স্থানান্তর হচ্ছে এবং বিলও বকেয়া থাকছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রধান অর্থনীতি একটি অস্থিতিশীল ঋণের গতিপথে নিজেদের ফেলতে পারে, যদি তারা আর্থিক সামঞ্জস্য বজায় না রাখে।

বিনিয়োগকারীরা ইতালিকে লক্ষ্য করছে, যেখানে ঋণ-পরিষেবা খরচ ২০১৯ সালের ৩% থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির ৭%-এ উন্নীত হবে। যদিও ইতালির অধিক সম্ভবত পতন ঘটবে না; কিন্তু সেই ফল এড়ানোর জন্য একটি ইউরোপীয় স্তরের আশঙ্কাময় সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের রাজকোষের ব্যবধানে ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর ইউকে বন্ড মার্কেটগুলো প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে; কিন্তু পাবলিক ফাইন্যান্সের ব্যবধান বন্ধ করতে এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্য একটি ক্লিষ্ট বাজেট প্রণয়নের প্রয়োজন হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //