ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে এশিয়ার মশা

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের স্বভাবে দ্রুত পরিবর্ত এনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে এশিয়ার মশা।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা আগে সকালে ও সন্ধ্যায় কামড় দিতো। কিন্তু বর্তমানে এটি রাতেও কামড়ায়। এমনকি মশা নিধনের কীটনাশককেও জয় করে ফেলেছে এশিয়ার মশা।

জাপানের জাতীয় সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের মেডিকেল এনটোমোলজি বিভাগের পরিচালক বিজ্ঞানী কাসয়ি ও তার দল ঘানাসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ থেকে মশা নিয়ে ওই গবেষণাটি করেন।

তিনি দেখেছেন, বেশ কয়েকটি মিউটেশনে এই অঞ্চলের মশাগুলো পারমেথ্রিনকেও সহ্যসীমার মধ্যে নিয়ে গেছে। তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘কম্বোডিয়ায় প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি এডিস ইজিপ্ট মশা মিউটেশনের মাধ্যমে এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যে তাদের প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

আগে যে কীটনাশক দিয়ে প্রায় শতভাগ মশা মেরে ফেলা যেতো এখন সেই একই কীটনাশক ১০ বার প্রয়োগ করেও মাত্র ৩০ শতাংশ মশা মেরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে।

শিনজি কাসয়ি বলেছেন, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে আমরা মশার যে প্রতিরোধ মাত্রা পেয়েছি তা সম্পূর্ণ আলাদা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ডেঙ্গু রক্তক্ষরণজনিত জ্বরেরও কারণ হতে পারে এবং এটি বছরে আনুমানিক ১০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। তবে এ রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশের মধ্যে তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনও তৈরি করা হয়েছে। গবেষকেরা এমন একটি ব্যাকটেরিয়াও তৈরি করেছেন যা ভাইরাসটিকে মোকাবিলা করে এডিস মশাকে জীবাণুমুক্ত করতে পারে। কিন্তু কোনো বিকল্পই এখনো ডেঙ্গু নির্মূলে সফল হতে পারেনি। এডিস ইজিপ্টি মশা জিকা এবং হলুদ জ্বরসহ অন্যান্য রোগেরও জীবাণু বহন করে বলে জানতে পেরেছেন গবেষকেরা।

শিনজি কাসয়ির গবেষক দল দেখেছেন, ঘানার পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া এবং তাইওয়ানের কিছু অংশ থেকে আসা মশার মধ্যেও উচ্চমাত্রার প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এজন্য মশা নিধনের সাধারণ যে পদ্ধতিগুলো রয়েছে সেগুলো আর কাজ না-ও করতে পারে।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও মশা গবেষক ক্যামেরন ওয়েব মনে করেন, মশার বিস্তার রোধে বর্তমানে কীটনাশক আর আগের জায়গায় না-ও থাকতে পারে। এজন্য নতুন রাসায়নিক প্রয়োজন। গবেষকদের ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য উপায়গুলো ভাবতে হবে।

শিনজি কাসয়ির গবেষণা আর্টিকেলটি সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তারা যে ধরনের মশার আচরণগত ও জিনগত যে পরিবর্তনগুলো দেখতে পেয়েছেন তা ভয়ঙ্কর। এই সংখ্যা বর্তমানে তুলনামূলক কম থাকলেও খুব দ্রুতই সেগুলো পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //