বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই প্রথম বাইরের কোনো দেশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করল রাশিয়া। প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক জোট সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলন শুরু হয়েছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে। শুক্রবার সেই সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এই তথ্য নিশ্চিত করে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সতর্কবার্তা দিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সম্মেলনে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছেন যে আমাদের মিত্র দেশ বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের জন্য (বেলারুশের) প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছিল। আজ আমি আপনাদের বলতে চাই- আমরা বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম চালান পাঠিয়েছি।’

‘বেলারুশে আমরা যতগুলো পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছি, আপাতত তার প্রথম চালান সেখানে পাঠানো হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, এই গ্রীষ্ম বা চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরিকল্পনা অনুযায়ী সব অস্ত্র আমরা মোতায়েন করতে পারব।’

প্রসঙ্গত, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা যখন তুঙ্গে, সে সময়েই বেলারুশে এই কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের খবর পাওয়া গেল। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেলরুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন, রাশিয়া যেসব পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছিল, সেগুলো ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে।

সাক্ষাৎকারে লুকাশেঙ্কো আরও জানান, রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো স্বল্পপাল্লার এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী। এই বোমাগুলোর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাও ব্যাপক।

‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্র যে দু’টি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করেছিল, রাশিয়ার এই অস্ত্রগুলো সেগুলোর চেয়ে শক্তিশালী,’ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যিনি পুতিনের কট্টর সমর্থক বলে পরিচিত।

শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গের সম্মেলনে পুতিন বলেন, ইউক্রেন সংকটকে অজুহাত হিসেবে ধরে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো রাশিয়াকে খণ্ড-বিখণ্ড এবং রুশ ভূমি দখলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই তাদেরকে সতর্কবার্তা দিতেই নেওয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।

শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গের সম্মেলনে পুতিন বলেন, ইউক্রেন সংকটকে অজুহাত হিসেবে ধরে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো রাশিয়াকে খণ্ড-বিখণ্ড এবং রুশ ভূমি দখলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই তাদেরকে সতর্কবার্তা দিতেই নেওয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।

সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিতান্ত বাধ্য’ না হলে বেলারুশে মোতায়েন করা অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না।

‘ন্যাটোর সব সদস্যরাষ্ট্রের মজুতে সর্বমোট যতগুলো পারমাণবিক বোমা রয়েছে, আমাদের অস্ত্রাগারে থাকা বোমার সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে যারা রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করতে চায়, রাশিয়াকে খণ্ড-বিখণ্ড করতে চায়- তাদেরকে আমাদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে ধারণা দিতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

‘তবে এসব অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা আমাদের নেই। এটা সত্য যে রাশিয়ার নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অনেকাংশে নির্ভর করেছে তার পারমাণবিক অস্ত্রের মজুতের ওপর, কিন্তু তারপরও আমাদের নীতি- নিতান্ত বাধ্য না হলে আমরা এসব অস্ত্র ব্যবহার করব না।’

সূত্র : রয়টার্স

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //