বিধ্বস্তের আগে কী ঘটেছিল টাইটানে

আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে বিধ্বস্ত ডুবোযান টাইটানের পাঁচটি বড় টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- একটি ‘নোজ কোন’, প্রেসার চেম্বার, ফ্রন্ট এ্যান্ড বেল এবং এফট অ্যান্ড বেল ও হুলের বাইরের অংশবিশেষ। যেখানে টাইটানিক জাহাজ ধ্বংস হয়েছিল, তার ঠিক আশপাশে এগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার তথ্য নিশ্চিত হয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড। বিধ্বস্তের আগে যানটিতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় ২২ জুন বিকেল ৩টার দিকে মার্কিন কোস্টগার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, একটি বিপর্যয়কর ও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টাইটান। সমুদ্রের তলদেশে ভয়াবহ চাপের সঙ্গে ডুবোযানের গতির সংঘর্ষে অবিশ্বাস্যভাবে এমন বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে।

তিনি বলেন, বুধবার সকালে রোবটচালিত জলযান ‘রোভ’ সাবমেরিন টাইটানের পেছনের বড় একটি অংশের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়। এটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষস্থলের ১৬০০ ফুট দূরে পাওয়া গেছে। পরে আশপাশে আরো তিনটি বড় টুকরো এবং ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

জন মাগার বলেন, ‘মার্কিন কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে সাবমেরিনে থাকা পাঁচ অভিযাত্রীর পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তবে টাইটানের সাব-বোর্ডে থাকা পাঁচ অভিযাত্রীর মরদেহ আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হবো কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না।’

তিনি বলেন, ‘উদ্ধার অভিযান আরো ফলপ্রসূ করতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এটা অবিশ্বাস্য রকম জটিল পরিবেশ। সমুদ্রের তলদেশে, যা ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় দুই মাইল নিচে। রোবটচালিত জলযান রোভ ওই ধ্বংসাবশেষস্থলের চারপাশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’

সমুদ্রের নিচের চিকিৎসা, ওষুধ এবং বিকিরণ স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. ডেল মোলে মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক পরিচালক। তিনি সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, আরোহীদের মৃত্যু দ্রুত এবং বেদনাহীন হয়ে থাকতে পারে। সমুদ্রের গভীরে অবিশ্বাস্য ও ভয়াবহ চাপের আঘাতে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

মোলে বলেছেন, দুর্ঘটনাটি এতই আকস্মিক হয়ে থাকতে পারে যে আরোহীদের কেউই তা কয়েক মুহূর্ত আগেও বুঝে উঠতে পারেননি যে কী ভয়ংকর পরিণতি ঘটতে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যে। 

তিনি বলেন, এটা হয়তো এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যে ঘটেছিল। তারপর টাইটানের সুইচটি বন্ধ হয়ে যায়। হয়তো তারা এক মিলিসেকেন্ড বেঁচে ছিলেন এবং পরের মিলিসেকেন্ডে তাদের নির্মম মৃত্যু হয়।

এর আগে, আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায় এবং যানটিতে যারা আরোহী ছিলেন তাদের সবাইকে মৃত ঘোষণা করা হয়।  ডুবোযানটিতে বিস্ফোরণের কারণে সবার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড।

সমুদ্র পর্যটনে এই সাবমেরিন পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। বৃহস্পতিবার প্রথম প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাঁচ আরোহীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড। এতে তারা জানায়, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে আরো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে টাইটান সাবমেরিনের বড় পাঁচটি টুকরার সন্ধান পাওয়া গেছে। সাবমেরিনটি বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কখন সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে সাবমেরিনের পাঁচ আরোহীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। আরোহীদের মরদেহ উদ্ধার করা যাবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি উদ্ধারকারীরা।

গত রবিবার (১৮ জুন) সাগরের তলদেশে পড়ে থাকা টাইটানিক জাহাজ দেখতে পাঁচ আরোহী নিয়ে সমুদ্রে ডুব দেয় ছোট আকৃতির ডুবোযানটি। এর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরই এটির সঙ্গে উপরে থাকা জাহাজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।

সাবমেরিনের আরোহীরা ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিং (৫৮), পাকিস্তানি ধনকুবের শাহজাদা দাউদ (৪৮) এবং তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ফ্রান্সের নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য পল অঁরি নাজোলে এবং ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ। তাদের মধ্যে হামিশ হার্ডিং অভিযাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি মহাকাশ ভ্রমণের পাশাপাশি কয়েক দফায় দক্ষিণ মেরু ঘুরে এসেছেন। পাকিস্তানের অন্যতম ধনী পরিবারের সদস্য শাহজাদা দাউদ যুক্তরাজ্যে বসবাস করতেন। তার ছেলে সুলেমান ছিলেন শিক্ষার্থী। পল অঁরি নাজোলে ছিলেন টাইটানিক বিশেষজ্ঞ। এর আগেও টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। সূত্র: সিএনএন ও ইভেনিং স্ট্যান্ডার্ড।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //