আদৌ কী এবার কেউ শান্তিতে নোবেল পাবে

আজ থেকে নতুন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হচ্ছে। চলবে আগামী ছয় দিন। প্রথম দিন চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর একে একে পুরো বিশ্ব থেকে বাকি পাঁচ বিষয়ের পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হবে পর্যায়ক্রমে। 

আজ সোমবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায়) সুইডেনের স্টকহোমে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।

এরপর একে একে আগামী মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞান, বুধবার রসায়ন এবং আগামী বৃহস্পতিবার সাহিত্যের নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। 

আর চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার আগামী শুক্রবার (৬ অক্টোবর) এবং ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে এবারের নোবেল পুরস্কারের পর্দা নামবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এ বছর নোবেল পুরস্কার কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্লেষকেরা মাথা চুলকাতে শুরু করেছেন। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে অভ্যুত্থান বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেছে।

সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো হয় এ বছর যদি নোবেল কমিটি শান্তিতে কোনো পুরস্কার না দেয়। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা বুঝানোর জন্য এটি হবে সবচেয়ে ভালো উপায়।’

এর আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ১৯৭২ সালে কোনো উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে না পাওয়ায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি। নরওয়ের নোবেল কমিটির সেক্রেটারি ওলাভ এনজোলস্টাড এএফপিকে বলেন, ‘ফলাফল কী হবে তা বলা কঠিন। তবে ১৯৭২ সালের মতো ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়।’

শান্তি পুরস্কারে বিবেচিত হতে পারে যেসব ইস্যু

এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য ইরানের নারীদের আন্দোলন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও জলবায়ু ইস্যু ঘুরেফিরে আসছে আলোচনায়। অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মাশা আমিনি নামের এক তরুণীর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুর পর সারা ইরানের নারীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-আন্দোলন গুরুত্ব পেতে পারে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের আলোচনায়। সেক্ষেত্রে অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ফ্রিডম ইন ইরানের অধিকারকর্মী মাসিহ আলিনেজাদ এবং নার্গেস মোহাম্মদীনের হাতে উঠতে পারে এবারের শান্তি পুরস্কার।

এ ছাড়া ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের নথিভুক্তকারী সংস্থাগুলো এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নিয়েও গুঞ্জন চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ঘরে এবারে শান্তি নোবেল গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আবার জলবায়ুকর্মীদের হাতে যদি এবারের শান্তি পুরস্কার যায়, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ এ বছরের রেকর্ড তাপমাত্রা ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া সমগ্র মানবজাতিকে হুমকির মুখে ফেল দিয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড্যান স্মিথ এএফপিকে বলেন, ‘আমি মনে করি জলবায়ু পরিবর্তন এ বছরের শান্তি পুরস্কারের জন্য সত্যিই একটি ভাল ক্ষেত্র।’

এ ক্ষেত্রে তিনি সুইডেনের জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থানবার্গ এবং ব্রাজিলের বন উজাড়ীকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আদিবাসী নেতা রাওনি মেটুকটায়ার নাম উল্লেখ করেন।

নারী-পুরুষের সমতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি

১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১৭ জন নারী এ পুরস্কার পেয়েছেন। এদের মধ্যে সর্বশেষ গত বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন ফরাসী নারীবাদী লেখক অ্যানি আর্নো। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নোবেল কমিটিকে আরও সময়পোযোগী, আধুনিক ও সমতাকেন্দ্রীক হতে হবে। যদিও ২০১৮ সালে ‘মি টু’ কেলঙ্কারির পর সু্ইডিস অ্যাকাডেমি নোবেল পুরস্কারে বড় ধরনের সংস্কার এনেছে এবং পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

স্টকহোম ইউনিভার্সিটির সাহিত্যের অধ্যাপক ক্যারিন ফ্রানজেন এএফপিকে বলেন, ‘ইউরোপকেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নোবেল কমিটির বেরিয়ে আসা উচিত। এ পুরস্কারকে আরও সমতাভিত্তিক হতে হবে এবং এতে সময়ের প্রতিফলন থাকাটা জরুরি।’

নোবেল পুরস্কার প্রবর্তক

চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য এবং শান্তিতে পুরস্কারের যাত্রা শুরু হয়েছিল আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছায়। সুইডিশ শিল্পপতি, ধনকুবের ও ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেডের নামে এই পুরস্কারের প্রবর্তন শুরু হয়। আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সালে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

প্রতিটি পুরস্কারের মূল্য ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ৯ লাখ ডলার)। ১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেল মারা যান। প্রত্যেক বছরের নোবেল বিজয়ীদের হাতে আলফ্রেড নোবেলের মারা যাওয়ার দিন (১০ ডিসেম্বর) একটি সনদ ও স্বর্ণপদক তুলে দেওয়া হয়।

অর্থনীতির পুরস্কার মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে প্রবর্তন করেছে ব্যাংক অব সুইডেন। ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পুরস্কার চালু করে। ১৯০১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নোবেল এবং অর্থনীতির পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ছয় শতাধিকবার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //