গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন: জাতিসংঘ মহাসচিব; পদত্যাগ চায় ইসরায়েল

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) করা এই মন্তব্যের জেরে ক্ষুব্ধ ইসরায়েল।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবকে এ মন্তব্যের কারণে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। ইসরায়েলি মুখপাত্র লিওর হায়াত বলেছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের এক মিনিটের বক্তব্য সারসংক্ষেপশূন্য। এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসের পক্ষ অবলম্বন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গাজায় অব্যাহতভাবে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরয়েল। ২৪ ঘণ্টায় সেখানে কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলের নৃশংসতায় এরই মধ্যে গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে নিরাপত্তা পরিষদ।

মঙ্গলবার অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের একটি সেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, হামাস ৭ অক্টোবর যে সহিংসতা চালিয়েছে তার পক্ষে কোনো অজুহাত চলে না। তাই বলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামষ্টিক যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, গাজায় যা প্রত্যক্ষ করছি তা সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আরও পরিষ্কার করে বলতে চাই, সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত কোনো পক্ষই আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে এক্ষেত্রে তিনি ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করেননি।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিরা ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর এক দখলদারিত্বের শিকার হচ্ছেন। ফলে হামাসের হামলা খালি খালি ঘটেনি। এই যুদ্ধে গাজায় বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

তার এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়েছেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেন। গুতেরেসের দিকে আঙুল তুলে তিনি দেখিয়েছেন ইসরায়েলের ইতিহাসে একটিমাত্র হামলায় শিশুসহ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি প্রশ্ন করেন, মিস্টার মহাসচিব আপনি কোন জগতে বাস করেন? তার চেয়ে একধাপ এগিয়ে গিয়ে অ্যান্তোনিও গুতেরেসের পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান।

তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, সন্ত্রাস এবং হত্যাকাণ্ডের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন মহাসচিব।

এদিকে, হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ বা বিরতি দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলো, রাশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ।

এ জন্য মঙ্গলবার ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া রোধে বৃহত্তর কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে সম্মত হন তারা।

ওদিকে ইসরায়েলি সেনা ও দখলকৃত পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়েছে। অশান্ত হয়ে উঠেছে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত। যদি এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাবে। হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলিদের যেহেতু মুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সে জন্য ইসরায়েলকে গাজায় স্থল হামলার পরিকল্পনা স্থগিত করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

মঙ্গলবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে অন্যায়ভাবে ইরানকে দায়ী করার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

তিনি বলেন, দ্ব্যর্থহীনভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পক্ষান্তরে আগ্রাসীদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধকে আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //