ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত বাইডেন-নেতানিয়াহু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে, এই যুদ্ধে ইসরায়েল বৈশ্বিক সমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন। তার পরপরই নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সমর্থনের দাবি করে মন্তব্য এলো।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু এ দাবি করেন। বিবৃতিতে একটি জরিপের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই জরিপ অনুযায়ী ৮০ শতাংশের বেশি আমেরিকান গাজা সংঘাতে ইসরাইলকে সমর্থন করে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের প্রতি এই ব্যাপক জনসমর্থন তাদের হামাসের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত’ লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য সম্ভাব্য চুক্তির ব্যাপারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবারের বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, সংঘাতের শুরু থেকেই তাকে একটি প্রচারণায় নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। যে প্রচারণার মূল লক্ষ্য, ‘সময়ের আগেই যুদ্ধের ইতি টানার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রতিহত করা আর ইসরায়েলের জন্য সমর্থন আদায়।’

‘আমরা এই ক্ষেত্রে উল্লেখ করবার মতো সফল, দাবি করে নেতানিয়াহু সাম্প্রতিক হার্ভার্ড-হ্যারিস জরিপ উদ্ধৃত করেন। জানান, সেই জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৮২ শতাংশ আমেরিকান জনসাধারণ ইসরায়েলকে সমর্থন করে।

‘পূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখার শক্তি দেয় এই তথ্য।’

অন্যদিকে ‘আগামী সোমবারের মধ্যে’ গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আশাবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত সোমবার একরকম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, ইসরায়েল সরকার যদি তাদের এই কট্টর অবস্থান থেকে সরে না আসে তাহলে ‘বৈশ্বিক সমর্থন হারাতে হতে পারে তাদের।’

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং নর্ক পরিচালিত আরেকটি জরিপে অবশ্য নেতানিয়াহুর দাবির বিপরীত চিত্র দেখা গেছে।

ওই জরিপ অনুযায়ী, জানুয়ারিতে প্রায় অর্ধেক মার্কিনি মনে করছেন, ‘ইসরাইল বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।’ নভেম্বরে এই হার ছিল ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ, একই রকম অভিমত পোষণকারীর সংখ্যা বেড়েছে গত দু’মাসে।

অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে আলোচনার বিষয়বস্তু বা সম্ভাব্য সময়সীমা সম্পর্কে বিশদে জানাতে রাজি হননি তারা।

হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দীদের গাজা থেকে মুক্ত করে আনা এবং মানবিক সহায়তার অনুমতি দিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে গত সপ্তাহে।

‘আমরা এই সপ্তাহে সেই অগ্রগতিকে ভিত্তি করেই চুক্তিটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা ওই অঞ্চলের অংশীদারদের সাথে দিনরাত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন,’ কিরবি যোগ করেছেন।

‘কিন্তু, প্রেসিডেন্ট বলার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি, এটা ঠিক। আরো অনেক কাজ করার বাকি আছে।’

কিরবি বলেন, যুদ্ধে ছয় সপ্তাহের একটা বিরতির পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। আগের বিরতিগুলোর তুলনায় সময়টা বেশ দীর্ঘ।

‘এটি আগামীতে আরো কোনো কার্যকর পথের সন্ধান দিতে পারে। যার ফলে হয়তো সংঘাত অবসানের একটি উপায় মিলে যাবে,’ তিনি বলেছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছেন, দেশটির কূটনীতিকরা- কাতার, মিশর ও ইসরায়েলের সাথে কাজ করছেন।

‘এই চুক্তিটিকে একটা চূড়ান্ত রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, সবশেষে হামাসের সম্মতি তো লাগবে,’ যোগ করেন তিনি।

হামাসের একজন কর্মকর্তা এর আগে বিবিসি নিউজকে বলেছিলেন, পণবন্দীদের মুক্তির চেয়ে গোষ্ঠীটির অগ্রাধিকার ছিল সংঘাত বন্ধ করা।

গত অক্টোবরে ইসরায়েল দক্ষিণে হামাস সদস্যদের সশস্ত্র আক্রমণে এক হাজার দুই শ’ জন নিহত হন। ২৫৩ জনকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় গাজায়, যাদের মধ্যে একটা অংশকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরপর ইসরাইল গাজায় বড় পরিসরে বিমান ও স্থল আক্রমণ শুরু করে।

গাজা উপত্যকায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, সেই থেকে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৮৭৮ জন নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায়ই মারা গেছেন ৯৬ জন। মোট আহতের সংখ্যা ৭০ হাজারের ওপর। সূত্র: বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //