কোক-পেপসির বিকল্প হয়ে উঠছে প্যালেস্টাইন কোলা

গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গোটা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গণহত্যা ও অবরুদ্ধ গাজার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন করছেন সাধারণ মানুষ। এর বিপরীতে ইসরায়েলপন্থি কোম্পানি বিশ্বব্যাপী ধাক্কার মুখে পড়েছে।

বৈশ্বিক খাদ্যপণ্য বাজারে বড় পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো গত বছরের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) থেকে প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভাটা দেখছে। এর বিপরীতে নির্দিষ্ট কিছু বাজারে বিকল্প পণ্যগুলো ভোক্তাদের মনোযোগ কেড়েছে। তেমনই একটি কোমল পানীয় ব্র্যান্ড ‘প্যালেস্টাইন কোলা’। তিন সুইডিশ সহোদর গত মার্চে ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন। 

ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত তিন সহোদর হুসেইন, মোহাম্মদ ও আহমেদ হাসুন সুইডেনের মালমোয় বসবাসকারী সফল ব্যবসায়ী। ছয় মাস আগে পেপসি ও কোকা-কোলার বিকল্প কোমল পানীয় বাজারে আনার উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেন তারা। যে কোম্পানির অধীনে প্যালেস্টাইন কোলা তৈরি হচ্ছে সেই সাফাদ ফুডের নামে সুইডেনে সাফাদ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছে হাসুন পরিবার। এই কোম্পানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা তহবিল ফিলিস্তিনের বিভিন্ন প্রকল্পে দান করা হবে। 

সাফাদ ফুডের নামকরণ করা হয়েছে বর্তমানে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত টাইবেরিয়াস হ্রদের উত্তরে অবস্থিত একটি শহরের নামানুসারে। সেখান থেকেই হাসুন ভাইদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৪৮ সালে লেবাননে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে লেবানন থেকে বহিষ্কার করা হলে তারা সুইডেনে গিয়ে স্থায়ী হন। এরই ধারাবাহিকতায় প্যালেস্টাইন কোলার প্রতিষ্ঠাতা তিন ভাইয়েরই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সুইডেনে। প্রায় ২৫ বছর আগে গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে তারা দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন। এক সময় তারা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ও মনোযোগ দেন এবং সাফল্য অর্জন করেন।

সাফাদ ফুডের যোগাযোগ পরিচালক মোহম্মদ কিসওয়ানি জানান, পানীয় তৈরির উদ্যোগটি নিয়েছিলেন বড় ভাই হুসেইন। তিনি বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং দোকানে প্রধান ব্র্যান্ড পেপসি এবং কোকা-কোলার বিকল্প না থাকার বিষয়টি খেয়াল করেছিলেন। আরেকটি বিষয় হলো-সাম্প্রতিক গাজা ইস্যুতে সুইডেন এবং ইউরোপের অনেক রেস্তোরাঁই এই পানীয়গুলো বিক্রি না করার উপায় খুঁজছিল। কারণ এই পণ্যগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলি যোগসূত্র রয়েছে।

গত ৫ মার্চ সুইডেনের মালমো শহরে প্যালেস্টাইন কোলা যাত্রা শুরু করে। সময়োপযোগী ওই সিদ্ধান্তে পানীয়টি বাজারে আসার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই বিপুল লাভের মুখ দেখলেন তারা। পশ্চিমা জায়ান্টগুলোকে বয়কটের কারণে নির্দিষ্ট বাজারে অনেকের কাছে পেপসি ও কোকা-কোলার বিকল্প হয়ে উঠেছে প্যালেস্টাইন কোলা। উদ্যোক্তারা জানান, নতুন এ ব্র্যান্ডকে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন তারা। প্যালেস্টাইন কোলার চাহিদা এখন তুঙ্গে। বর্তমানে ইউরোপেও অসংখ্য রেস্তোরাঁ মার্কিন মালিকানাধীন পণ্য এড়িয়ে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ ক্যান প্যালেস্টাইন কোলা বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া পণ্যটি মজুদ করার জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর বিশ্বজুড়ে পানীয়র বেশ কিছু ছোট ছোট ব্র্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে লেবাননে জাল্লৌল এবং জি কোলা স্থানীয়দের কাছে আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিশরে স্পিরো স্পাথিস নামে একটি পানীয়র বিক্রি ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাংলাদেশে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি তাদের পানীয় মোজো কোলার বিক্রির একটি অংশ ফিলিস্তিনের তহবিলে দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে মোজো কোলার বিক্রি ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

ব্র্যান্ডটির ক্যানে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক স্মারক স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-জলপাইয়ের শাখা ও ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ নকশা। এ ছাড়া ‘ফ্রিডম ফর অল’ নামে ট্যাগ লাইন যোগ করা হয়েছে ক্যানের গায়ে।

এর মাধ্যমে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে বলে বার্তা দেন প্রতিষ্ঠাতারা। উদ্যোক্তারা জানান, তাদের লক্ষ্য ফিলিস্তিন সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করে এমন দাতব্য সংস্থার প্রতি সমর্থন জানানো। 

প্যালেস্টাইন কোলার অন্যতম উদ্যোক্তা হুসেইন হাসুন বলেন, ‘আমরা গাজার শিশুদের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের সাহায্যার্থে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আমাদের উদ্যোগের সঙ্গে একটি দাতব্য সংস্থা জড়িত রয়েছে। এটি দুজন নিবেদিতপ্রাণ আইনজীবী দ্বারা পরিচালিত। তাদের লক্ষ্য হলো, ফিলিস্তিনের জনগণ , বিশেষ করে গাজার জনগণের কাছে সরাসরি সাহায্য সরবরাহ করা।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //