২০২৪: নির্বাচন আর অস্থিরতায় ভরা একটি বছর

২০২৪ সাল ছিল বর্ণিল। আবার রক্তাক্তও। দুর্ঘটনা, দ্বন্দ্ব, সংঘাতে জর্জরিত হয়েছে বিশ্বের বহুপ্রান্ত। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের নির্বাচন আর অস্থিরতায় ভরা একটি বছর পার করল বিশ্ব। ২০২৪ সালে ৬০টিরও বেশি দেশে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা যাক।   

জাপানে ভূমিকম্প: সূর্যোদয়ের দেশ বলে পরিচিতি আছে জাপানের। কিন্তু বছরের শুরুর দিনেই দেশটিতে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। আঘাত হানে ৭.৬ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্প। সুনামিও আঘাত হানে। ঝরে শতাধিক প্রাণ।

ভারত-মালদ্বীপ সংঘাত: মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব কমেছে গত বছর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের পরই দুই দেশের সংঘাত তুঙ্গে ওঠে। চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ মুইজ্জু ও তার দলের একাধিক নেতা মোদিকে কটাক্ষ করেন। এরপর ভারতজুড়ে ‘বয়কট মালদ্বীপ’ আন্দোলন বড় হতে থাকে। পরে অবশ্য মুইজ্জু ভারতে সফর করেন এবং সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেন।

পাকিস্তানে নির্বাচন: ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েছিল শাহবাজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজ (পিএমএল-এন)। আর প্রথম হন কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। তবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তারা সরকার গঠন করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শাহবাজ।  

অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু: ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু হয় রাশিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির। তিনি জেলবন্দি ছিলেন। এই মৃত্যুর পর পুতিনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে নাভালনির পরিবার।

রাশিয়ায় নির্বাচন: ১৭ মার্চ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় রাশিয়ায়। ৮৭.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তথা বিপুল জনসমর্থন নিয়ে টানা পঞ্চমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ভ্লাদিমির পুতিন। ৩১ ডিসেম্বর ক্ষমতায় তার ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০৩০ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট থাকার নজির গড়বেন পুতিন। 

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের বিস্তৃতি: ১৪ এপ্রিলে ইসরায়েলে শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের বিস্তৃতি ঘটায়। ইরানের সেই হামলা কার্যত ব্যর্থ হলেও আঞ্চলিক দুই দেশের মধ্যে এটিই ছিল প্রথমবারের মতো সরাসরি সামরিক সংঘাত।

বন্যায় বিধ্বস্ত ব্রাজিল: মে মাসে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ব্রাজিল। সঙ্গে প্রবল বর্ষণ। প্রকৃতির রুদ্ররোষে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১০০। 

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু: ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরস নদীর উপরে একটি বাঁধ উদ্বোধন করার কথা ছিল রাইসির। সেই কর্মসূচিই ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনে। একটি পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে যাওয়ার সময় কপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তর-পশ্চিম ইরানের একটি পাহাড়ে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ইসরায়েলের দিকে ষড়যন্ত্রের আঙুল ওঠে। কিন্তু সব অভিযোগ উড়িয়ে দেয় তেল আবিব।

ঋষি সুনাকের পরাজয়: ৫ জুলাই ব্রিটেনের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়। নজির গড়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কিয়ার স্টারমার। তার দল লেবার পার্টির কাছে ভরাডুবি হয় কনজারভেটিভ পার্টির। প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান ঋষি সুনাক। ১৪ বছর পর টোরি শাসনের অবসান ঘটে রাজার দেশে।

ইরানে নির্বাচন: ইব্রাহিম রাইসির আকস্মিক মৃত্যুর পর নির্বাচন হয় ইরানে। ৬ জুলাই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সংস্কারপন্থি নেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান। জোর টক্কর দিয়ে তিনি পরাজিত করেন কট্টরপন্থি নেতা সাইদ জালিলিকে। পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েই গুপ্তঘাতকের হাতে তেহরানে মৃত্যু হয় হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার। এই খুনে অভিযোগের আঙুল ওঠে ইসরায়েলের দিকে।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন: ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। শুরুতে ৮২ বছরের জো বাইডেনকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছিল ডেমোক্র্যাট। কিন্তু পরে ভোটের লড়াই থেকে সরে যান বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে শামিল হন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। কিন্তু নির্বাচনে জিতে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটান বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ ট্রাম্পের ওপর দুইবার গুপ্তহত্যার চেষ্টা হয়েছে। 

বাশার আল আসাদের পতন: ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়ংকর রূপ নেয়। আল-কায়েদার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) নেতৃত্বে আলেপ্পো দখল করে নেওয়ার ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা। তারপর একে একে দারা, হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করার পর ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামেস্কে পৌঁছায় বিদ্রোহীরা। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে তারা। পতন ঘটে আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত: ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর একটি উড়োজাহাজ দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৮১ আরোহীর ১৭৯ জনই প্রাণ হারান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh