ডোনাল্ড ট্রাম্প যেদিন (২০ জানুয়ারি) দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসেন, সেদিনই জানান, চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর প্রতিশ্রুত বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হবে। আর সেই আদেশে তিনি ১ ফেব্রুয়ারি সই করতে পারেন। এই শুল্কযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এর মূলে রয়েছে ট্রাম্পের শুল্ককেন্দ্রিক অর্থনীতির রাজনৈতিক কৌশল।
ট্রাম্পের অর্থনৈতিক কৌশলের মূলে রয়েছে কর ও শুল্ক আরোপ। প্রথম মেয়াদেও তিনি চীন, মেক্সিকো, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী বাণিজ্য কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। সে সময় চীনের আমদানি পণ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেন ট্রাম্প। তবে এই বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়ে যায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। প্রথম মেয়াদে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পেছনে অন্যায্য বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, মেধাস্বত্ব চুরি এবং দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প। চীনও তখন মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এতে মার্কিন খামারিরা বড় আকারে ক্ষতির মুখে পড়েন। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেও একইভাবে শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছেন ট্রাম্প। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি অপর পক্ষকে আলোচনায় টেনে আনতে চাইছেন।
অনেক অর্থনীতিবিদ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন, দর-কষাকষির টেবিলে শুল্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এর যথোপযুক্ত ব্যবহারে বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারবে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মার্কিন উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোও উপকৃত হবে।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা উইলিয়াম রেইনশ বলেন, ‘এটা ট্রাম্পের চিরাচরিত কৌশল। আগে হুমকি, তারপর আলোচনা। আমি নিশ্চিত, চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করা হবে। আইনি ও রাজনৈতিক বিষয় বিবেচনায় তা বাস্তবায়ন করা সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর হবে। কানাডা ও মেক্সিকোর ক্ষেত্রে নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর-কষাকষি হবে।’
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার আগেই এক পোস্টে বলেন, ‘২০ জানুয়ারি আমি অনেক নির্বাহী আদেশ জারি করব, যার একটি হবে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব ধরনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা। এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব নথিতে আমি সই করব।’ অপর এক পোস্টে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রযোজ্য সব শুল্কের সঙ্গে বাড়তি আরো ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান। এ ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে চীন থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল মাদক প্রবেশ ঠেকাতে বেইজিংয়ের ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। চীন থেকে আসা ফেন্টানিল মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের।
তবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, বেইজিংয়ের পণ্যে ৬০ শতাংশ কর আরোপ করতে পারেন তিনি। হঠাৎ করে মত বদলানোর পেছনে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথোপকথনের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। একইভাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করবেন বলে জানিয়েছেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবম আগে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিপরীতে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তার সুরও নরম। তিনি এখন পাল্টা শুল্ক আরোপের বিপরীতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসে আপস করতে চান বলে জানিয়েছেন। মেক্সিকোর মোট রপ্তানি পণ্যের ৮০ শতাংশ এবং কানাডার মোট রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্প দাবি করেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে ভিডিও কলে। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের কথা জানিয়েছিলেন। ট্রাম্প আরো জানান, শির সঙ্গে তিনি বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিষয়, ফেন্টানিল, এমনকি টিকটক নিয়েও আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে শি জিনপিং জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী যে, ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরো একবার নতুন করে একটা ভালো সূচনা পাবে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, আমরা একত্রে একাধিক সমস্যার সমাধান করতে পারব।’ দুই নেতার এই
কথোপকথনের পর ট্রাম্প টিকটকের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন আড়াই মাসের জন্য। সেই সঙ্গে চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh