লোহিত সাগরে গত ৭২ ঘণ্টায় মার্কিন নৌবহরের ওপর চারটি হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি।
মালয়েশিয়াভিত্তিক সংবাদপত্রিকা মালয় মেইলের বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুতিদের সামরিক মূখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানিয়েছেন, তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান।
হুতি যোদ্ধারা হামলায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সারি দাবি করেছেন, তাদের পরিচালিত চতুর্থ হামলাটি সফল হয়েছে। এই অভিযান সঠিকভাবে তার লক্ষ্য অর্জন করেছে। যদিও লক্ষ্য কী ছিল, তা স্পষ্ট করে তিনি কিছু বলেননি। রণতরীতে ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোনগুলো আঘাত হেনেছে কিনা- তাও জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, হামলাগুলো চালানো হচ্ছে ইয়েমেনে চলমান মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুতিদের দাবি করা সবশেষ হামলার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এর আগে প্রথম হামলা চেষ্টার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সামরিক কেন্দ্র সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছিল, হামলা চেষ্টাকে তাদের যুদ্ধবিমান প্রতিহত করেছে। ১১টি ড্রোনকে ভূপাতিত করা হয়েছে। কোনোটিই বিমানবাহী রণতরীর কাছে আসতে পারেনি।
শনিবার থেকেই ইয়েমেনে হুতি অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে হ্যারি এস ট্রুম্যান থেকেও বিমান উড়ে গিয়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে। এরই মধ্যে ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় অর্ধশত মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লোহিত সাগর ও এডেন সাগরে হুতিদের ড্রোন হামলা বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত মার্কিন সেনারা অভিযান চালিয়ে যাবে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ রবিবার ফক্স নিউজের ‘সানডে মর্নিং ফিউচারস’ অনুষ্ঠানে বলেন, “যেই মুহূর্তে হুতিরা বলবে যে তারা আমাদের
জাহাজগুলোর ওপর হামলা বন্ধ করবে, আমরাও তাদের ড্রোন ধ্বংস করা বন্ধ করব। এই অভিযান শেষ হবে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি নিরলসভাবে চলবে।”
ইরানকে সতর্ক করে হেগসেথ আরও বলেছিলেন, “ সমুদ্রপথে হামলা বন্ধ করা এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য এই অভিযান চালানো হচ্ছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান জাতীয় স্বার্থ। ইরান দীর্ঘদিন ধরে হুতিদের সহায়তা দিয়ে আসছে। তারা যদি পিছিয়ে না আসে, তবে তাদের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না।”
যদিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এও জানিয়েছিলেন, ইরানের মিত্র গোষ্ঠীটি থেকে এখনও হামলা বন্ধের কোনো ইঙ্গিত পাননি। উলটো যুক্তরাষ্ট্রের মারাত্মক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় তাদের হামলার তীব্রতা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে এই অভিযান কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে শনিবার দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “সব হুতি সন্ত্রাসীদের জন্য, তোমাদের সময় শেষ! তোমাদের হামলা আজ থেকেই বন্ধ করতে হবে। যদি না করো, তাহলে তোমাদের ওপর এমন নরক নামবে, যা আগে কখনো দেখোনি!”
হুতিরা, গত এক দশকে ইয়েমেনের বেশিরভাগ এলাকা দখল করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত লোহিত ও আরব সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে শতাধিক হামলা চালিয়েছে হুতিরা। এর মধ্যে দুইটি জাহাজ তারা ডুবিয়ে দিয়েছে। একটি জাহাজকে আটক করেছে এবং তাদের হামলায় কমপক্ষে ৪ জন নাবিক নিহত হয়েছেন।
গত সপ্তাহে তারা আবার ঘোষণা করেছিল যে, যদি ইসরায়েল গাজার ওপর থেকে অবরোধ না তোলে- তাহলে তারা আবারও লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালাবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh