গ্রেপ্তারও হলেন, পদও হারালেন ইমামোগলু

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্তাম্বুলের সদ্য বরখাস্ত হওয়া মেয়র একরেম ইমামোগলুকে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

কাস্টডিতে নেওয়ার আগে রবিবার গভীর রাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, “আমি কখনো মাথা নত করবো না।”

পোস্টটিতে নিজের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে গণতন্ত্রের উপর কালো দাগ উল্লেখ করে এর সমালোচনাও করেছেন। দাবি করেছেন, পুরো বিষয়টিতে বিচারিক কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। তিনি সারাদেশের জনগণকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার আহ্বানও জানান।

তুরস্কের এই মেয়রকে যেসব অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে- তার মধ্যে রয়েছে অপরাধমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড করা ও টেন্ডার জালিয়াতি।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদিও এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেনি মন্ত্রণালয়।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচারিক কার্যক্রম চলতে থাকবে। তাকে সিলিভ্রির একটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জামিন না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই থাকবেন।

সিএইচপির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার কথা ইমামোগলুর

রবিবার যেদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো- সেদিনই ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় ভোটের মাধ্যমে ইমামোগলুকে রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ছিল। তার গ্রেপ্তারের পরেও সিএইচপি জানিয়েছে, তাদের পার্টি ভোট গ্রহণের আয়োজন করেছে এবং ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি ভোটার এতে অংশ নিয়েছেন। এর ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

যেভাবে শুরু হয় দেশব্যাপী বিক্ষোভ

এর আগে গত বুধবার ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক সহ শতাধিক ব্যক্তিকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়। এর মধ্যে ইমামোগলুও একজন।

এরপরই পুরো দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কারণ ইমামোগলুর সমর্থকদের মতে অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় পাচ্ছেন।

যদিও দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় ইমামোগলুর গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ার সঙ্গে এরদোয়ানের যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বাতিল করা হয় ইমামোগলুর ডিগ্রিও

আটক হওয়ার আগে নজীরবিহীনভাবে ইমামোগলুর ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিও বাতিল করা হয়। দেশটির সংবিধান মোতাবেক একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি থাকতে হবে।

ইমামোগলুর সমর্থকরা বলছেন, ডিগ্রি বাতিল করার মাধ্যমে কার্যত তাকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে অযোগ্য করা হয়েছে। আটক হওয়ার আগে ইমামোগলু জানিয়েছিলেন, তিনি ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবেন।

তবে মেয়র পদ হারালেও গ্রেপ্তারের ঘটনা তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। একমাত্র অভিযুক্ত প্রমাণিত হলেই কেবল ইমামোগলু অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সারাদেশে পুলিশের হাতে আটক সাত শতাধিক

এদিকে ইমামোগলু ও তার শতাধিক সহযোগীকে আটকের ঘটনায় পঞ্চম দিনেও সমাবেশের উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তুরস্কের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। সন্ধ্যার আগেই প্রতিদিনের মতো ইস্তাম্বুলের সিটি হলের সামনে তুর্কি পতাকা নিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিল।

রবিবার রাতেও সিটি হল থেকে বিক্ষুব্ধদের সরাতে জলকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করতে দেখা গেছে পুলিশকে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত হয়েছে। আটকের সংখ্যা সাত শতাধিক।



সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh