গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধে মিসর নতুন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। এর আওতায় ১১ জন জিম্মির মুক্তি চায় ইসরায়েল। তবে হামাস এদের মধ্যে পাঁচ জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের হারেজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবের সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র কাতারের সংবাদপত্র আল আরাবি আল জাদিদকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, প্রস্তাবে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে হামাস ধীরে ধীরে পাঁচ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। একই সঙ্গে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করবে।
মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা প্রস্তাব করেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরে গাজা থেকে সম্পূর্ণ ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের আলোচনাসহ আরও আলোচনা হবে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, যে মিসর কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্যারান্টি’ থাকার শর্তে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে আলোচনায় আগ্রহী।
মিসরীয় সূত্রটি জানিয়েছে, হামাস ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে প্রতি ১০ দিনে একজন করে পাঁচজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছে। বাকি জিম্মিদের ফেরত পাঠানো এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়টি গভীর আলোচনার কাঠামো হিসাবে কাজ করবে।
হামাসের সমর্থন থাকা মিসরীয় পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের কাছে প্রস্তাব করা হয়নি। তবে ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে জানত।
এদিকে ইসরায়েল ১১ জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে। এই সংখ্যা হামাসের হাতে আটক মোট জিম্মির অর্ধেক। হারেজকে এ তথ্য জানিয়েছে আলোচনায় জড়িত ইসরায়েলের একটি সূত্র।
হামাস আশা করছে, ইসরায়েলের অবস্থান দ্রুতই বদলাবে। দেশটির সরকার এ বছরের রাষ্ট্রীয় বাজেট পাসে সফল হলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অবস্থানও যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।
সর্বশেষ মিসরীয় প্রস্তাবটি মূলত দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফের লেখা একটি প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। নতুন মিসরীয় পরিকল্পনার মূল বিষয় হলো পাঁচজন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া, এর মধ্যে শেষ জীবিত আমেরিকান জিম্মি-আইডিএফ সেনা এডান আলেকজান্ডার রয়েছেন। একই সঙ্গে জিম্মিদের সুস্থতার বিষয়ে ইসরায়েলকে তথ্য সরবরাহ করা। বিনিময়ে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেবে এবং সংঘাত বন্ধ করবে।
সোমবার সকালে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রথম প্রস্তাবটি জমা দেয় মিসর। এতে হামাসকে আলোচনার শেষে তাদের কাছে থাকা সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গ্যারান্টি অনুসারে গাজা থেকে সম্পূর্ণ ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি ঠিক করা হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এই পরিকল্পনায় হামাস প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তবে শর্ত হলো ইসরায়েল একই সঙ্গে জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়ন শুরু করবে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং হামাস প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। তবে ইসরায়েল এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা গাজায় আক্রমণ তীব্র করার কথা বিবেচনা করছে। ইসরায়েল বা হামাস কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে বলেনি যে আলোচনা ভেঙে গেছে।
ইসরায়েল গত কয়েকদিন ধরে বলেছে যে আলোচনা কার্যকরভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তবে এটি স্বীকারও করেছে যে গাজায় নতুন করে আক্রমণ, যা উইটকফের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য হামাসকে চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।
এদিকে, আরব দেশগুলোর গণমাধ্যম মধ্যস্থতাকারীদের এমন একটি প্রস্তাব তৈরির প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রতিবেদন করছে যা ইসরায়েল এবং হামাসকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনবে। এছাড়া যুদ্ধবিরতি পুনর্নবীকরণ করবে, জিম্মিদের মুক্ত করবে এবং গাজার পুনর্গঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতারা সম্প্রতি গাজার ফিলিস্তিনি দলগুলো বার্তা পাঠিয়েছেন যে তারা ছিটমহলটির ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। আলোচনায় তারা প্রচুর নমনীয়তা প্রদর্শন করছেন বলেও জানিয়েছেন।
আলোচনায় জড়িত একটি ফিলিস্তিনি সূত্র বলেছে, “ইসরায়েলের শত শত (ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা) বন্দীকে মুক্তি দিতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা তাদের কারাগারে হাজার হাজার বন্দী রয়েছে। বন্দীদের মুক্তির সমস্যা কোনো সমস্যা নয়।’
তিনি বলেন, “হামাস যদি মারওয়ান বারগুতি এবং অন্যান্যদের মতো সুপরিচিত বন্দীদের মুক্তি দাবি করে তবে পরিস্থিতি আবারও আটকে যেতে পারে। তবে এটি কেবল প্রক্রিয়ার পরেই ঘটবে। ইতোমধ্যে, আমরা মানবিক সাহায্যের বিনিময়ে এবং সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খোলার বিনিময়ে আরও কয়েক সপ্তাহের শান্ত পরিস্থিতি পেতে চাই যাতে অসুস্থ ও আহতরা বেরিয়ে আসতে পারে।”
হামাসের মুখপাত্র জিহাদ তাহা কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাদীদকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পথে বাধাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “হামাস মধ্যস্থতাকারীদের ধারণা এবং প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া দিচ্ছে। ইসরায়েলের চরমপন্থি সরকার তাদের আচরণে মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধার অভাব প্রদর্শন করছে, যারা আক্রমণ বন্ধ করার জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করছে।”
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh