বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে ‘জরুরি সভা’ ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সংবাদ মাধ্যমকে এক ক্ষুদে বার্তায় এ কথা জানানো হয়।
এতে লেখা হয়, “মার্কিন শুল্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য আজ (শনিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক ‘জরুরি সভা’ আহ্বান করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।”
সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, উপদেষ্টা এবং কর্মকর্তারা যোগ দেবেন বলেও বার্তায় লেখা হয়।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি ঘোষণায় বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়। এতদিন বাংলাদেশের পণ্য শূল্ক হার ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ। নতুন সিদ্ধান্তে এটি হবে সাড়ে ৫২ শতাংশ।
এই দ্বিগুণের বেশি শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানিখাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক আলোচনায় সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থার তাগিদ দেন তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর বেশ কয়েকজন নেতা।
তাদের শঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে তারা জানান। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বছরে বাংলাদেশ প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ যার বেশিরভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
অবশ্য এই শুল্ক বৃদ্ধির সমস্যাটি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন সরকার যে নীতিতে শুল্কারোপ করেছে, তাতে একটি যে বিষয় ফুটে উঠেছে সেটি হলো, কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যত শতাংশ শুল্কারোপ করেছে, দেশটি সেই দেশের পণ্যে তার অর্থেক শুল্ক বসিয়েছে। তবে কোনো দেশ যদি ১০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে থাকে, তাহলেও যুক্তরাষ্ট্রও দেশটির পণ্যে ১০ শতাংশই শুল্কারোপ করবে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে গড়ে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতির গবেষক বলছেন, এ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শুক্রবারই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, সরকার দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক পুনর্বিবেচনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুত শুল্ক যুক্তিসঙ্গত করার বিকল্পগুলো চিহ্নিত করবে, যে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয়।”
আবিশ্ব ব্যাংক (ঢাকা অফিস) এর সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “আমেরিকা বলছে, বাংলাদেশে তাদের পণ্যের ওপর সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়, যার ভিত্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এখন দরকার আলোচনার মাধ্যমে এই হিসাব খতিয়ে দেখা এবং যুক্তি তুলে ধরা, সেই সাথে বাংলাদেশকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে যে পরোক্ষ শুল্ক হিসাবের ভিত্তিগুলো যথাযথ কি না।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh