চীন যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ তারা কখনই মেনে নেবে না।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে শুল্ক আরোপিত করবার পরেই গত শুক্রবার চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। আর এতেই ক্ষেপেছে ট্রাম্প। মার্কিন এই দেশটি চীনা পন্যের ওপর আবারও শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে, চীনা পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে ভুলের ওপর ভুল বলে অভিহিত করছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিবিসি বলছে, চীনের অবস্থান হলো- শুল্ক আরোপের এই পরিকল্পনা প্রত্যাহার করা এবং দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার মত পার্থক্যের সমাধান করা।
সোমবার হোয়াইট হাউজে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, সম্প্রতি তিনি যে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তা স্থগিত করার ব্যাপারে তিনি ভাবছেন না। এমনকি এ নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দর কষাকষি করতেও আপাতত ইচ্ছুক নন তিনি। এর আগে, এরকম কিছু আলাপ সামনে এসেছিল যে যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য নতুন আরোপিত শুল্ক স্থগিত করতে পারে। কিন্তু, এই দাবিকে ইতোমধ্যেই অবশ্য হোয়াইট হাউজ ভুয়া খবর বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
শুল্ক স্থগিতের সম্ভাব্যতার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসছে, কিন্তু আমরা এখনো শুল্ক কমানোর বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে চীন যদি মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন। আর এটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর আরোপিত ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্কের অংশ হিসাবে চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে গত মার্চেও চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি আবারও চীনের ওপর এই ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত এই মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি করা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য এক বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
ট্রাম্প বলেন, আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনও দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন ও অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে। এই প্রতিক্রিয়ায় চীন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলছে, চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না। চীন এসব বাড়তি শুল্ক নিয়ে মোটেই খুব বেশি বিচলিত নয়। চীনের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে শুল্ক মোকাবেলা করার।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে 'পারস্পরিক সুবিধাদানের নীতি নামে' একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা মূলত অন্য দেশের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করা এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক বিধি-নিষেধকে অবজ্ঞা করে 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতিতে চলার নামান্তর। তিনি আরও বলেন, এটা এক ধরনের একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ এবং অর্থনৈতিক নিপীড়ন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকা এই উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে। পণ্যে রপ্তানিতে চীনের অন্যতম প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এই অতিরিক্ত শুল্ক চীনের উৎপাদকদের জন্য এখন একটি বড় আঘাত।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : যুক্তরাষ্ট্র চীন শি জিনপিং ডোনাল্ড ট্রাম্প
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh