বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের ফলে ভারতীয় ভূখণ্ড হয়ে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
বুধবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “বাংলাদেশকে দেওয়া দীর্ঘদিনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা আমাদের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে তীব্র পণ্যজট তৈরি করছিল। এতে লজিস্টিকস সমস্যা ও অতিরিক্ত ব্যয় আমাদের নিজস্ব রপ্তানি কার্যক্রমকে ব্যাহত করছিল। এসব কারণেই ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সুবিধাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না।”
মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অভ ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) একটি সার্কুলার জারি করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির যে অনুমতি ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়।
আগের নীতিমালায় ভারতীয় ভূমি শুল্ক স্টেশন (এলসিএস) ব্যবহার করে বাংলাদেশ তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য পণ্য পরিবহন করতে পারত। এ প্রক্রিয়ায় শুল্ক স্টেশন থেকে এসব পণ্য পরবর্তীসময়ে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরে পাঠানো হতো।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বা কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতের স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে দেশটির অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল ২০২০ সালের ২৯ জুনের ওই সার্কুলারে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে ট্রানজিটে থাকা বাংলাদেশি পণ্য বিদ্যমান প্রক্রিয়ার আওতায় ভারত ছাড়তে পারবে, তবে নতুনভাবে কোনো পণ্যের চালান ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাবে না।
ওই সার্কুলারের ভিত্তিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের মত দেশের সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল নয়া দিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমি কিছু প্রতিবেদন দেখেছি, তাই বিষয়টি স্পষ্ট করছি।”
পূর্ববর্তী ব্যবস্থার আওতায় ইতোমধ্যে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করা পণ্যগুলোকে আগের নিয়ম অনুযায়ী গন্তব্যে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে বলে মঙ্গলবারের সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর খবরে বলা হয়েছে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর-পূর্ব ভারত অঞ্চলে চীনা প্রভাব বাড়ছে-এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাসহ একাধিক ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষক বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের এক মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা ওই মন্তব্যকে 'আপত্তিকর, নিন্দনীয় ও উসকানিমূলক' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
খবরে আরও বলা হয়েছে, 'চীনের সহায়তায় ‘চিকেন'স নেক’ এলাকার কাছাকাছি একটি কৌশলগত ঘাঁটি গড়ে তোলার বাংলাদেশের পরিকল্পনাও এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রভাব ফেলতে পারে। শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগ আহ্বান করেছে।'
এই তথ্য গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান ও সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তবের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস মনে করছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে দেওয়া কিছু মন্তব্য ভারতের উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সে সময় বলেছিলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য ভূমিবেষ্টিত। আমরা এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। এটি একটি বিশাল সুযোগের দ্বার উন্মেচিত করেছে। এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হয়ে উঠতে পারে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh