কাগজের ঠোঙ্গায় ভাগ্যবদল

দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে স্বাবলম্বী হতে কাজ করে যাচ্ছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের মাহফুজ আলম। অর্থাভাবে বেশিদূর পড়াশোনায় যেতে না পারলেও নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘মাহফুজ প্যাকেজিং’। লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও অক্লান্ত পরিশ্রম ও সততাই তাকে এনে দিয়েছে সাফল্য।

তিনি সদর উপজেলার দালালবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা নুরুজ্জামান মাস্টারের ছেলে। ব্যবসার পরিসর বাড়াতে ও সময়মতো গ্রাহকসেবা প্রদান করতে তরুণ এই উদ্যোক্তা দালাল বাজারের পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে গড়ে তোলেন প্যাকেজিংয়ের আরেকটি কারখানা।

ব্যবসা শুরুর দিকটা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা মাহফুজ জানান, চার ভাই আর দুই বোনকে নিয়ে সংসার চালাতে তার বাবার খুব কষ্ট হতো। তাই পড়ালেখা কেউই বেশিদূর করতে পারেননি। শিক্ষকতার পাশাপাশি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজিতে তার বাবা ৯০ সালের শুরুতে দালালবাজারের বেলতলীতে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন প্যাকেজিংয়ের কাজ। স্থানীয়ভাবে যা ঠোঙ্গা হিসেবে পরিচিত। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল পরিবারকে নিয়ে কিছু করার। ছোটবেলায় দিনে স্কুল আর রাতে ঠোঙ্গা বানাতে বাবাকে সহযোগিতা করতেন তিনি।

পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্ব ছিল তার বেশি। দালালবাজার এনকে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে সংসার চালাতে পড়ালেখা বন্ধ করে বাবার বন্ধ ব্যবসা চালুর উদ্যোগ নেন তিনি। বাবার বন্ধ ব্যবসা চালু করে দারিদ্র্যতাকে জয় করতে নেমে পড়েন মাহফুজ। প্রথমে অল্প কিছু ঋণ নিয়ে নিজেই ঠোঙ্গা বানিয়ে তা বিক্রি শুরু করেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে প্যাকেট বানানোর কাজ শুরু করেন তিনি।

কঠোর পরিশ্রম আর সততার কারণে পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। দালালবাজার বেলতলীতে প্যাকেট (ঠোঙ্গা) বানানোর কারখানার পাশাপাশি শহরের উত্তর তেমুহনীতে গোডাউন ও পৌর শহরের মাদাম জিরো পয়েন্টে আরেকটি কারখানা গড়ে তোলেন তিনি।

বর্তমানে তার এসব প্রতিষ্ঠানে কারিগরসহ ১২ কর্মচারী কাজ করেন। প্লাস্টিক পণ্যের ভিড়ে দেশীয় কাগজের ঠোঙ্গার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্যাকেজিংয়ে নতুন বৈচিত্র্য এনে সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে প্যাকেটটি পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেন।

তিনি আক্ষেপ করে জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে ৩০ লাখ টাকার মতো বকেয়া পাবেন। করোনা মহামারিতে তার ১২ জন শ্রমিকের বেতন-ভাতাও তিনি দিয়েছেন। করোনাকালিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণের জন্য অনেক ঘোরাঘুরি করলেও কোনো লাভ হয়নি। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে তিন লক্ষ টাকা ঋণ নেন তিনি।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকার শ্রী কৃষ্ণ মিষ্টি ভাণ্ডার ব্যবসায়ী লোকনাথ জানান, প্লাস্টিকের পাশাপাশি কাগজের ব্যাগের চাহিদাও রয়েছে বেশ। প্রতি মাসে তিনি তিন হাজার ব্যাগ মাহফুজের কাছে থেকে সংগ্রহ করেন বলে জানান।

ব্যবসার প্রসার ঘটাতে তিনি উন্নতমানের প্যাকেট তৈরিতে কাটিং মেশিন ও দোকানির নামে প্যাকেট বানাতে ছাপাখানা বা অফসেট প্রেস দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানালেন তরুণ উদ্যোক্তা মাহফুজ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //