পোশাকশিল্প মালিকদের নতুন আবদার

সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে পোশাকশিল্পের মালিকরা যে ঋণ নিয়েছেন, সেই ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ১৮টি থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার আবদার করেছে  বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। একইসঙ্গে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণখেলাপি ঘোষণা না করা এবং সেই ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়ার অনুরোধও জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনার ধাক্কায় আমাদের পোশাকশিল্প গভীর সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এখন আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। সামনের দিনগুলোতে রপ্তানি ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের যে প্রণোদনার ঋণ দিয়েছিল, তা খুবই উপকার করেছে। গত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে সাড়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে পেরেছি; কোনো শ্রমিককে চাকরি হারাতে হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে; আমাদের আরেকটু সময় প্রয়োজন। আমরা যে ঋণ নিয়েছি, তা পরিশোধের কিস্তির সংখ্যাটা বাড়িয়ে দিলে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণখেলাপি ঘোষণা না করা হলে আমাদের খুবই উপকার হতো। সে কারণেই আমি অর্থসচিব ও গভর্নরকে এই অনুরোধ করেছি।’

শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চলমান রাখতেই এই দাবি জানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ফারুক হাসান।

অর্থসচিব ও গভর্নরকে দুটি আলাদা চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।

‘করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচল রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে পোশাকশিল্প খাত গভীর সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য সরকার আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে যে ঋণ দিয়েছিল, তা পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ডের মেয়াদ ২০২১ সালের মার্চ থেকে ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

‘করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন হ্রাস পাবে এবং তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে- এ আশা সরকারসহ সব উদ্যোক্তার ছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ প্রদান শিথিল করেছে এবং যেসব পণ্য ইতোমধ্যে রপ্তানি করা হয়েছে, তার বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানি মূল্য প্রদান করাও বন্ধ করে দিয়েছে বা দীর্ঘায়িত করছে।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘পোশাকশিল্প খাতের মালিকরা শিল্পের ভবিষ্যৎ, বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও শ্রমিকদের মজুরি প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এই সংকটকালে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের কিস্তিব সংখ্যা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘বিদেশি ক্রেতা এবং শ্রমিকদের ধরে রাখার জন্য সংকটকালেও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা লোকসান দিয়ে পোশাক রপ্তানি করে যাচ্ছেন। ফলে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রপ্তানি আদেশে প্রদানের পরিমাণ আগের তুলনায় বৃদ্ধি করে দিয়েছে। কিন্তু এসব রপ্তানি আদেশের বিপরীতে পেমেন্ট পেতে আরও কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। যার কারণে উদ্যোক্তারা সাময়িক তারল্যসংকটের মধ্যে থাকবেন।’

এ পরিস্থিতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ১৮টির পরিবর্তে ৩৬টি করার উদ্যোগ নিতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

‘ঋণ শ্রেণীকরণ না করা এবং পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দেয়া’ শীর্ষক চিঠিতে ফারুক হাসান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ অর্জিত হচ্ছে পোশাকশিল্প খাত থেকে। সরকার এই খাতের উন্নয়ন, বিকাশ ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সর্বদাই সহানুভূতিশীল ও ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।

‘এছাড়া করোনাভাইরাস অতিমারির সময় সরকার পোশাক খাতকে আর্থিক ও নীতিসহায়তা প্রদান করে এ খাতকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আমরা এর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

চিঠিতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে রপ্তানি পরিস্থিতির সংকটের উল্লেখ করে বলা হয়, এ কারণে উদ্যোক্তারা সাময়িক তারল্যসংকটে আছেন।

‘এসব নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চলমান রেখেছেন এবং তাদের বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা এবং তারল্যসংকটের কারণে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে বর্তমানে দুরূহ হয়ে পড়েছে।’

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা যাতে মালিকরা ধরে রাখতে পারেন এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চলমান রাখতে পারেন, সে জন্যে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ শ্রেণীকরণ না করার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউয়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেক, অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকাই পেয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //