এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সংলাপে সরকারের নীতি-নির্ধারক, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতারা এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, শুল্ক ও কর কাঠামো যুগোপযোগীকরণ ও অটোমেশন,পণ্য উৎপাদন ও সাপ্লাইচেইন ইকো-সিস্টেমের উন্নয়ন, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, মানব সম্পদের উন্নয়ন এবং স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সহায়তা প্রদানের সুপারিশ করেছে।

গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট) ডিসিসিআই ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি; স্থানীয় বাজারের উন্নয়ন’ শীর্ষক ভাচুর্য়াল সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি দাস। 

সংলাপে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের রফতানির বাজার কমপ্লায়েন্স, ব্র্যান্ডিং ও আইপিআরের চ্যালেঞ্জসহ অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু শুল্ক-অশুল্ক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে, যা আমাদের স্থানীয় বাজারকেও প্রভাবিত করবে। 

তিনি জানান, দেশের জিডিপিতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও সেবা খাতের অবদান প্রায় ৬০ শতাংশ। এছাড়াও ফ্যাশনওয়্যার, ফুটওয়্যার ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এমতাবস্থায় শুল্ক ব্যবস্থাপনা, কর কাঠামো ও ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তনের বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় বাজারের উন্নয়ন, পণ্য উৎপাদন ও সাপ্লাইচেইন ইকো-সিস্টেম ও সর্বোপরি সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করেন তিনি। 

রিজওয়ান রহমান স্থানীয় বাজারের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য নতুন বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আরও শক্তিশালী করতে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানান। 

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি বলেন, এলডিসি পরর্বতী সময়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সরাসরি ভর্তুকির নানাবিধ সুবিধাদি হ্রাস পাবে। এমতাবস্থায় রফতানির বাজার সম্প্রসারণে আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে আরো অধিক হারে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির স্বাক্ষরের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আভ্যন্তরীণ শিল্পায়ন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 

বাণিজ্য সচিব এলডিসি পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীদের ক্যাশ ইনসেনটিভ সহায়তা প্রদান করতে না পারলেও, অন্যান্য পন্থায় উদ্যোক্তাদের সহায়তা অব্যহাত রাখার আশ্বাস দেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার প্রক্রিয়াসমূহ আরো সহজীকরণের উপর তিনি জোর দেন। 

তিনি জানান, সরকার দেশের ব্যবসা পরিচালনার সূচকে উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচেছ এবং এ সুযোগ গ্রহণ করে ব্যবসায়ীদের আরো বেশি বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এলডিসি হতে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের দক্ষতা ও পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তাব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক। দেশের পণ্য রফতানি বৃদ্ধির জন্য বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সহায়তা প্রদান, ভ্যাট প্রদানের প্রক্রিয়া আরো সহজীকরণ, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর তিনি জোর দেন। তিনি বন্ড সিস্টেম অটোমেশনের পাশাপশি নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।  

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, স্থানীয় বাজার উন্নয়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিরসন এবং স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তোরণের সময়কে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর জন্য একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরি। রফতানির বাজার উন্নয়নে শিল্পখাতের প্রয়োজনের নিরিখে জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোসহ নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও গবেষণা এবং উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে তিনি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।  

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, ব্যবসা পরিচালনার জন্য ইতিবাচক মনোভাব খুবই জরুরি। রফতানি বাড়লে দেশের স্থানীয় বাজারেরও উন্নয়ন হবে। রপতানি সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দ্রুত নিরসন করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। 

তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পণ্য উৎপাদন ব্যয় কমানো ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়াও তিনি তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অন্য খাতগুলোকেও বন্ড সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে এফটিও স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী, জাতীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভন, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাসার হাওলাদার এবং বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বাপী) মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান এবং ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন আলোচনায় অংশ নেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //