বাংলাদেশে ওমিক্রনের প্রভাব

আবারও হুমকির মুখে পোশাক খাত

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের পোশাক খাত; কিন্তু হঠাৎ করেই ওমিক্রনের সংক্রমণ ভাবনায় ফেলেছে পোশাকশিল্প মালিকদের। এই অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছিল।

সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ায় ইতিমধ্যেই সুইজারল্যান্ডে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন স্থগিত হয়েছে। এ কারণে অনেকে নতুন সংকটের আশঙ্কা করছেন। কারণ ইউরোপের দেশগুলোতে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। আবারো কড়া বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে অনেক দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের পরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ। বিদেশি ক্রেতারা নতুন করে অর্ডার দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। এছাড়া যে সমস্ত অর্ডার দেয়া হয়েছিল তা নিয়েও পোশাক শিল্পের মালিকরা চিন্তায় রয়েছেন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে পোশাক শিল্প আবারো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে পোশাকের পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ রয়েছে।

বিজিএমইএর তথ্যমতে, করোনার প্রথম ঢেউয়ে বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা ৩১৫ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছিল। যার প্রভাব পড়েছিল প্রায় ১ হাজার ১৩৬ টি কারখানার ওপর।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেছেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে অনেক দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে অনেক আউটলেট। বাজার ধীর হয়ে গেছে। আগে অনেক অর্ডার আসতো এখন কিছুটা কমেছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে পোশাক পাঠানোর চাপ অনেকটাই কমেছে। তারা শুধু বলছে, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

বাংলাদেশ নিট ওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, যে অর্ডারগুলো প্লেস করা হয়েছে সেগুলো দ্রুত ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা। ওমিক্রনের কারণে যে কোনো সময় এসব অর্ডার স্থগিত হলে নতুন আরেকটা সংকট দেখা দেবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, ওমিক্রনের কারণে বিভিন্ন দেশে যে সতর্কতামূলক বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করবে। আমাদেরকে আরও সাবধান হতে হবে । আগের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে হবে। তবে তিনি বলেন, করোনার প্রভাব অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। ওমিক্রনের কারণে আবার সংকট তৈরি হতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৫.২৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮.৩৫ শতাংশ রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।

২০২২ অর্থ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮২.১৯ শতাংশেই অবদান রেখেছে পোশাক খাত। এ সময় বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মোট ১১.০২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে যুক্তরাষ্ট্রে ১.৯১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া জার্মানিতে ১.৫ বিলিয়ন ডলার, বৃটেনে ১.০৪ বিলিয়ন ডলার, স্পেনে ৬৯৪ মিলিয়ন ডলার, ফ্রান্সে ৪২১ মিলিয়ন ডলার, ইতালিতে ৩০৯ মিলিয়ন ডলার, নেদারল্যান্ডে ৩১৫.৪৮ মিলিয়ন ডলার, কানাডায় ২৮৫.০৪ মিলিয়ন ডলার এবং বেলজিয়ামে ১৪৭ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে এই সময়ে।

ওদিকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট রোধে শ্রমিকদের জন্য ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে বিজিএমইএ। এর মধ্যে রয়েছে পৃথক শিফটের ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক মাস্ক পরা। এ ছাড়া সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য লোকসমাগম এড়িয়ে চলতে শ্রমিকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কারখানার উৎপাদন শুরু ও ছুটির সময় শ্রমিকদের ভিড় এড়ানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণে জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কারখানায় প্রবেশের সময় শ্রমিকদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠাতে বলা হয়েছে। পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হলে রোগীকে আইসোলেশনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যদেরকে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //