কোরআন বোঝার জন্য পরিশুদ্ধতার প্রয়োজন

একমাত্র সন্দেহমুক্ত আসমানি কিতাব হলো পবিত্র ‘আল কোরআন’। পবিত্র এই কোরআন প্রিয় নবীজী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর ওপর নাজিল করা হয়েছে রমজান মাসে। 

কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে যা মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী রূপে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)। 

আল কোরআন সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সূরা আজ-জুমার, আয়াত : ০১।) 

আল কোরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যয়নকারী। ‘আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি যথাযথভাবে, এর আগের কিতাবের সত্যয়নকারী ও এর ওপর তদারককারীরূপে।’ (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত : ৪৮)। পবিত্র কোরআন লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘বরং এটা মহান কোরআন, লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ।’ (সূরা বুরূজ, আয়াত : ২১-২২।)

কোরআনুল কারিম বোঝার জন্য বুদ্ধিমত্তার চেয়ে ‘কালব’এর পরিশুদ্ধতার প্রয়োজন অনেক বেশি। কেননা কোরআন নাজিল করা হয়েছে কলবের ওপর। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এ কোরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাজিলকৃত। বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরাইল আলাইহিস সালাম) এটা নিয়ে অবতরণ করেছেন তোমার নূরানি কলবে (হৃদয়ে) যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সূরা আশশুয়ারা, আয়াত : ১৯২)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার পক্ষ থেকে মোহাম্মদ (সা.) ওপর দীর্ঘ ২৩ বছরে নাজিল হয়েছে। এ কিতাবটির নাম, নাজিলের ভাষা, বিষয়বস্তু সব কিছুই অভিনব ও মুজিজাপূর্ণ। কোরআন শব্দটি (কারউন) শব্দ থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। এর ধাতুগত অর্থ দুটি- ১. জমা করা। এর তাৎপর্য হলো এ কিতাবের মধ্যে অতীতের সমস্ত আসমানি কিতাবের মূল শিক্ষা একত্রিত হয়েছে। এর মধ্যেই পৃথিবীর প্রলয় দিন অবধি মানব জাতির প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও হিদায়াত সন্নিবেশিত হয়েছে। (উলুমুল কোরআন)। ২. বারবার পাঠ করা। এ কিতাবটি কোটি কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত অধ্যয়ন করছে। এত অধিক পঠিত কিতাব দুনিয়াতে আর একটিও নেই। (আল ইতকান)। 

এখন আমরা কোরআনের সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে জানবো ইনশাল্লাহ।। পবিত্র কোরআন হলো মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শেখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি) 

রসুল (সা.) বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল্লাহর বাণী। আর সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হলো মোহাম্মদ (সা.) এর দেখানো নূরানি পথ। (মুসনাদে আহমাদ।)

কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠ করলে ১০টি নেকি লাভ করা যায়। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করল, এতে সে ১০টি নেকির অধিকারী। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মিম একটি হরফ।’ (তিরমিজি শরিফ)। 

আল কোরআন তিলাওয়াতের এত ফজিলত হওয়ার কারণে অতীতের উম্মতে মোহাম্মদী (সা.) বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। উসমান (রা.) তিনদিনে এক খতম কোরআন পড়তেন। ইমাম বুখারিও তিনদিনে এক খতম কোরআন পড়তেন বলে জীবনীকাররা উল্লেখ করেছেন। আমাদের ইমাম আবু হানিফা (রহ.) প্রতিরাতে এক খতম কোরআন পড়তেন বলে বর্ণিত আছে।  

পবিত্র কোরআন পাঠকারীর পিতামাতাকে কিয়ামতের ময়দানে হাশরে নূরের টুপি পরানো হবে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ পড়ে ও তার ওপর আমল করে, তার মাতা-পিতাকে কিয়ামতের দিন এমন একটি (নূরের) টুপি পরানো হবে, যার জ্যোতি দুনিয়ার সূর্যের জ্যোতি অপেক্ষা অধিক হবে।’ (আবু দাউদ) 

আরেকটি হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, কোরআন মানুষকে আলোকিত করে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার হৃদয়ে কোরআনের কোনো শিক্ষা নেই, তা বিরান ঘর সমতুল্য।’ (তিরমিজি।) আমাদের প্রত্যেকের অবশ্যই কর্তব্য নিয়মিত কোরআন পড়া, আল কোরআনের চর্চা করা। নয়তো আমাদের অন্তর বিরান ঘরের মতো হয়ে যাবে। 

অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা নিষেধ। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কোরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৭৭-৮০)।

আল কোরআনের আরেকটি মর্যাদা হলো, এটি একটি চ্যালেঞ্জময় গ্রন্থ। কোরআন নিয়ে মহান আল্লাহ চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বলেন, ‘বলুন, যদি মানব ও জিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য জড়ো হয় ও তারা পরস্পরের সাহায্যকারীও হয়; তবুও তারা কখনো এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।’ (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ৮৮)।

বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতে যে কেমন সওয়াব তা আমাদের কারো অজানা নয়, তদুপরি স্মরণ করিয়ে দেয়াকে আমি ঈমানি দায়িত্ব মনে করি। কোরআন শিখা আর শিখানো যে কত মর্যাদা ও ফজিলতের কাজ। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শিখে আর অন্যকে শেখায়’। 

অন্য রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে যে, ‘কোরআন তেলাওয়াতই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত’। উপরোক্ত হাদিসের দ্বারা বিশুদ্ধ তেলাওয়াতই উদ্দেশ্য।

মোবারক এ মাসে বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাহাজ্জুদ-নফল সালাত আদায় করা একান্ত জরুরি। আমাদের কি কারো ইচ্ছে করে না যে আমিই সর্বোত্তম ব্যক্তি বিবেচিত হই। আর তা ঠিক তখনই সম্ভব হবে যখন নিজে বিশুদ্ধভাবে কোরআন শিখে অন্যকে শেখাব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //