কাতারে এক দশকে ১০১৮ বাংলাদেশির মৃত্যু

দশ বছর আগে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচিত হয়েছিল কাতার। দেশটিতে বিশ্বকাপ ঘিরে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার শ্রমিকরা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কাতারে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিকের প্রাণ গেছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের  অনুসন্ধানে কাতারে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রাণহানির বিষয়টি উঠে এসেছে।

এশিয়ার এই পাঁচ দেশের সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গার্ডিয়ান বলছে, বিশ্বকাপের আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর ২০১০ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে কাতারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই পাঁচ দেশের অন্তত ১২ জন করে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

২০১০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকে কাতারে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ হাজার ১৮, ভারতের ২ হাজার ৭১১, নেপালের ১ হাজার ৬৪১, পাকিস্তানের ৮২৪ এবং শ্রীলঙ্কার ৫৫৭ অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার সরকারি তথ্য-উপাত্ত বলছে, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কাতারে এ কয়েকটি দেশের ৫ হাজার ৯২৭ জন অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন। কাতারে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাস বলছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কাতারে ৮২৪ পাকিস্তানি শ্রমিকের প্রাণ গেছে।


গত ১০ বছর ধরে দেশটিতে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সাতটি নতুন স্টেডিয়ামের পাশাপাশি বিশাল বিশাল কয়েক ডজন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে অথবা নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে একটি নতুন বিমানবন্দর, সড়ক-মহাসড়ক, গণ-পরিবহন ব্যবস্থা, হোটেল এবং একটি নতুন শহর নির্মাণকাজও রয়েছে; যে শহরে আগামী ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে।

গার্ডিয়ান বলছে, মৃত অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৩৭ জন কাতারে বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এছাড়া দেশটিতে আরো ৩৪ জন অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন; যারা বিশ্বকাপ ইভেন্টের আয়োজক কমিটির অন্যকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে ২০ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষায় কাতারের ব্যর্থতা প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি তরুণ শ্রমিকদের উচ্চ-মৃত্যুর হারের কারণ তদন্তেও ব্যর্থ হয়েছে এই দেশটি।

উপসাগরীয় অঞ্চলের শ্রমিক অধিকারবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ফেয়ারস্কয়ার প্রজেক্টের পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বলেছেন, পেশা এবং কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করা না হলেও কাতারে মারা যাওয়া অভিবাসী শ্রমিকদের অনেকেই বিশ্বকাপ অবকাঠামো প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক মোহাম্মদ শহীদ মিয়া। স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বসবাসের একটি কক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান তিনি।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের অভিবাসী শ্রমিকদের ৬৯ শতাংশ মৃত্যুর কারণ ‌‘স্বাভাবিক’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে মৃত্যু সনদে। শুধুমাত্র ভারতীয়দের ক্ষেত্রে এই হার ৮০ শতাংশ।

২০১৯ সালে গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল; যেখানে অনেক অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তীব্র দাবদাহকে দায়ী করে কাতার। জাতিসংঘের শ্রমবিষয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় গার্ডিয়ান ওই অনুসন্ধান পরিচালনা করেছিল। এতে দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকরা বাইরে কাজের সময় বছরের কমপক্ষে চার মাস তীব্র দাবদাহের মুখোমুখি হন বলে উঠে আসে।

ভারতীয়, বাংলাদেশি এবং নেপালি অভিবাসী শ্রমিকদের কাতারে মৃত্যুর অন্যান্য যেসব কারণ হাজির করেছে দেশটির সরকার; তার মধ্যে রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা (১২ শতাংশ), কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা (৭ শতাংশ) এবং আত্মহত্যা (৭ শতাংশ)। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর কারণ নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে কাতার সরকারের স্বচ্ছতার অভাব, কঠোর বিধি-নিষেধ এবং বিস্তারিত বর্ণনার রেকর্ড নেই।

গার্ডিয়ান বলছে, দোহায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস এবং সরকারি অফিস রাজনৈতিক কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //