বঙ্গবন্ধুর চেতনায় রবীন্দ্রনাথ

রিপাবলিকের তৃতীয় সর্গে প্লেটো দর্শনকে কবিতার প্রতিপক্ষ করে তুলেছিলেন। হোমার ও তার সমর্থকগণকে নিয়ে সন্দিগ্ধ এ দার্শনিক বলেন, ‘কবিতা পরিব্যাপক ও প্রায়শ ক্ষতিকারক কেননা কবিতা প্রকৃতি ও অনাদি সম্পর্কে যে ধারণা উপস্থাপন করে তা ভ্রমাত্মক।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্লেটোর এ তত্ত্বে আস্থাশীল ছিলেন না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এই মহাপ্রাণ মানুষ অহর্নিশ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদগণের সঙ্গে রেখেছিলেন নিবিড় সম্পর্ক। ১৯৪১ সালে ফরিদপুরে আয়োজিত ছাত্রলীগের জেলা সমাবেশে কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির ও প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ সাহেবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তিনি কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ ও তার সহকর্মী জনাব মাজহারের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন, রুশ লেখক আইজ্যাক অ্যাসিমভ, তুর্কি কবি নাজিম হিকমতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, পাঞ্জাবে অনুষ্ঠিত প্রগতিশীল লেখকদের সমাবেশে যোগদান করেছেন, লাহোরে কবি আল্লামা ইকবালের বাড়ি ‘জাভেদ মঞ্জিল’-এ অবস্থান করেছেন।

তার রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবসহ করাচি অভিমুখে যাত্রাকালে তিনি সহযাত্রী কয়েকজন কৌঁসুলিকে নজরুল ইসলামের কিছু কবিতা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাংশ আবৃত্তি করে শোনান। বাংলা ভাষার দিগন্তকে বিস্তৃত করার জন্য বিশ্বকবির অবদানকে বঙ্গবন্ধু বিনয়ের সাথে স্মরণ করতেন। চীনে ভ্রমণকালে তিনি তাঁর উপলব্ধি লিপিবদ্ধ করেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে না জানে এমন শিক্ষিত লোক চীন কেন দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও আমি খুব কম দেখেছি।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী ২২৮) 

বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক পাঠাগার রবীন্দ্র-রচনাবলিসহ নানা বিরল গ্রন্থে পূর্ণ ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ি পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী শুধু ভাংচুর করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা স্বর্ণসহ মূল্যবান দ্রব্যাদি লুণ্ঠন ও গ্রন্থরাজি নিশ্চিহ্ন করে। ইতিহাসের মূক সাক্ষীর অস্তিত্বহীনতায় বঙ্গবন্ধুর মানসক্ষেত্রের নির্ভুল রূপায়ন অসম্ভব। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা তার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘১৯৪৯ থেকে আব্বা যতোবার জেলে গেছেন কয়েকখানা নির্দিষ্ট বই ছিল, যা সব সময় আব্বার সঙ্গে থাকতো।

জেলখানায় বই বেশিরভাগই জেল লাইব্রেরিতে দান করে দিতেন কিন্তু আমার মার অনুরোধে এই বই কয়টা আব্বা কখনো দিতেন না, সঙ্গে নিয়ে আসতেন। তার মধ্যে রবীন্দ্র-রচনাবলি, শরৎচন্দ্র, নজরুলের রচনা, বার্নাড শ’র কয়েকটা বইতে সেন্সর করার সিল দেয়া ছিল। ...মা এই কয়টা বই খুব যত্ন করে রাখতেন। আব্বা জেল থেকে ছাড়া পেলেই খোঁজ নিতেন বইগুলি এনেছেন কিনা। যদিও অনেক বই জেলে পাঠানো হতো।

মা প্রচুর বই কিনতেন আর জেলে পাঠাতেন। নিউ মার্কেটে মার সঙ্গে আমরাও যেতাম। বই পছন্দ করতাম, নিজেরাও কিনতাম। সব সময়ই বই কেনা ও পড়ার একটা রেওয়াজ আমাদের বাসায় ছিল। প্রচুর বই ছিল। সেই বইগুলি ওরা নষ্ট করে। বইয়ের প্রতি ওদের আক্রোশও কম না। আমার খুবই কষ্ট হয় ঐ বইগুলির জন্য যা ঐতিহাসিক দলিল হয়ে ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে সবই হারালাম।’ (৭০, ৭১ পৃষ্ঠা)

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম বিশেষত কবিতা ও গান বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে নিরন্তর উদ্দীপ্ত রেখেছিল। কারাবাসের অধিকাংশ সময় ‘সঞ্চয়িতা’ ছিল তাঁর আলোকময় সহচর। রবীন্দ্রকাব্যে ভাস্বর মানবিকতা ও স্বদেশপ্রেম বঙ্গবন্ধুকে চিরদিন অনুপ্রাণিত করেছে।

রবীন্দ্রনাথের ‘বঙ্গমাতা’ কবিতায় অভিব্যক্ত অভীস্পা বঙ্গবন্ধুর সংবেদী সত্তায় পল্লবিত হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু পরার্থপরতায় উৎসর্গ করেছেন তাঁর সংগ্রামশীল মহাজীবন। স্বদেশে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তিনি যেমন প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তেমনি বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলা ভাষার মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব উন্মোচনে তিনি ছিলেন অত্যুদ্যমী। ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবোধের প্রতি সংবেদনশীল থেকে ১৯৫২ সালে পিকিংয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধু ও ভারতের ঔপন্যাসিক মনোজ বসু বাংলায় বক্তব্য উপস্থাপন করায় কৌতূহলী অনেক শ্রোতাকে বঙ্গবন্ধু যেভাবে উত্তর দান করেন তা স্মরণযোগ্য- ‘বাংলা ভাষা যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষা এ অনেকেই জানে। ঠাকুর দুনিয়ায় ‘ট্যাগোর’ নামে পরিচিত। যথেষ্ট সম্মান দুনিয়ার লোক তাঁকে করে। ...পাকিস্তানের শতকরা ৫৫ জন লোক এই ভাষায় কথা বলে। এবং দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ভাষার অন্যতম ভাষা বাংলা’ (আমার দেখা নয়াচীন ৪৪)। 

বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদস্বরূপ ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট যে গান বাউল সুরে গীত হয় তা বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায় অনুযায়ী সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রূপে স্বীকৃতি লাভ করে। বঙ্গবন্ধু শিল্পী জাহিদুর রহিমের কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা’ শুনতে পছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর সস্নেহে আহ্বানে জাহিদুর রহিম বঙ্গবন্ধু কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রায় নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করতেন।

বঙ্গবন্ধু ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’, ‘সুপ্রভাত’, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’, ‘দুই বিঘা জমি’ প্রভৃতি কবিতা যেমন আবৃত্তি করতেন, তেমনি গুনগুন করে রবীন্দ্রনাথের গানও গাইতেন। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’, ‘নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার’ বঙ্গবন্ধুর প্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

গত শতকের পঞ্চম ও ষষ্ঠ দশকে এ দেশে রবীন্দ্রচর্চা নির্বাধ ছিল না। তবে পূর্ববঙ্গীয় সংস্কৃতির জন্য দেশবাসী তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছিলেন (খান সারওয়ার ১১৬)। রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গে ১৯৬১ সালে পালিত হয় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। বাংলার চেতনাদীপ্ত মানুষ রবীন্দ্রনাথকে ‘তাঁর সংস্কৃতির সবচেয়ে পূর্ণোদিত মানুষ’ হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনি (খান সারওয়ার ১০৯)।

খান সারওয়ার মুরশিদের ভাষায়, ‘তিনি (রবীন্দ্রনাথ) আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে দ্বন্দ্ব এবং টানাপোড়েনে জড়িয়ে গেছেন। ...তিনি...এক ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধের জন্ম এবং পুষ্টিতে সাহায্য করেছেন। ...তিনি... একটি অস্থির জাতির বিক্ষুদ্ধ ইতিহাসে আশ্রয়ের একটি উজ্জ্বল স্থিরবিন্দু’ (১২৩)। ১৯৬৭ সালের ২৩ জুন পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করলে শিল্পী ও প্রগতিবাদী মানুষের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে বঙ্গবন্ধু একাত্ম হন।

১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বক্তৃতা প্রদানকালে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আমরা মির্জা গালিব, সক্রেটিস, শেক্সপিয়ার, এরিস্টটল, দান্তে, লেনিন, মাও সেতুং পড়ি জ্ঞান আহরণের জন্য। আর দেউলিয়া সরকার আমাদের পাঠ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের লেখা, যিনি একজন বাঙালি কবি এবং বাংলায় কবিতা লিখে যিনি বিশ্বকবি হয়েছেন। আমরা এই ব্যবস্থা মানি না- আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়বই, আমরা রবীন্দ্রসংগীত গাইবই এবং রবীন্দ্রসংগীত এই দেশে গীত হবেই’ (মুনতাসীর মামুন ২৯৬)।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের অমোঘ অবস্থান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসংশয়চিত্ত। রবীন্দ্রসাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে সমধিক গুরুত্ব আরোপ করে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডকে রবীন্দ্র-রচনাবলি প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বাংলার শিল্পীদের কণ্ঠে গীত রবীন্দ্রসংগীতের প্রথম রেকর্ড বঙ্গবন্ধুর হাতে অর্পণ করেন কবি বেগম সুফিয়া কামাল।

বঙ্গবন্ধু জানতেন, একটি জাতির ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি দমিত হলে সে জাতি ক্রমান্বয়ে নির্মূল হয়ে পড়ে। তার ভাষায়, ‘একটি জাতিকে পঙ্গু ও পদানত করে রাখার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করা’ (মুনতাসীর মামুন ২৫৬)। 

রবীন্দ্রনাথকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চাকে গতিময় করবার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে রেসকোর্স ময়দানে যখন ভাষণ দান করেন তখন তার সমগ্র সত্তায় অভূতপূর্ব আলোড়ন তরঙ্গিত হয়। তিনি আনন্দ- বেদনামিশ্রিত যে শব্দমালা উচ্চারণ করেন তা রবীন্দ্রানুগ। বাংলার মানুষ, বাংলার মাটি, বাংলার আকাশ, বাংলার আবহাওয়ার সান্নিধ্য তাকে বিহ্বল করে তোলে। তিনি ক্রন্দিত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় বড় ভালোবাসি’।

রবীন্দ্রনাথ ‘বঙ্গমাতা’ কবিতার শেষে লিখেছেন, ‘সাতকোটি সন্তানেরে, হে, মুগ্ধজননী, রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করনি’। বিশ্বকবির এ ক্ষোভের কারণ নস্যাৎ করে বঙ্গবন্ধু প্রকাশ করেন, কবিগুরুর এ কথা মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেছে। কারণ ‘আমার বাঙালি আজ মানুষ। আমার বাঙালি দেখিয়ে দিয়েছে।’ বাস্তুভূমি থেকে বিতাড়িত উপেনের বেদনা বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়; রবীন্দ্রনাথ মাতৃভূমিকে প্রণতি জানাবার জন্য যে অকৃত্রিম শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন তা বঙ্গবন্ধুর আপ্লুত কণ্ঠে ব্যঞ্জিত হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধু তদ্গতচিত্তে উচ্চারণ করেন, ‘নমঃ, নমঃ, নমঃ সুন্দরী মম জননী জন্মভূমি,/গঙ্গার তীর বিমুগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি’। রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার কারণেই বারবার রবীন্দ্রবাণী উচ্চারিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে, তার চেতনার গভীরতম প্রদেশে রবীন্দ্রনাথ অধিষ্ঠিত। শোষণ, বঞ্চনা ও গণহত্যায় ধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু আত্মনিয়োগ করেন। নিঃস্ব ও অবহেলিত মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অপরিসীম মমত্ব ও কর্তব্যবোধ। তিনি চাইতেন দুঃস্থ ও বঞ্চিত মানুষের প্রকৃত অবস্থা আমাদের সাহিত্যে প্রতিফলিত হোক। রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম, অসহায় মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ও তাঁর প্রকৃতিমগ্নতা বঙ্গবন্ধুকে প্রতিনিয়ত প্রাণিত করেছে। রবীন্দ্রনাথের মানবিক চেতনার প্রতিধ্বনি বঙ্গবন্ধুর চৈতন্যে সঞ্চারিত। 

তিনি সদ্যস্বাধীন দেশের অগণন গ্রামবাসীর অকৃত্রিম জীবনাচরণকে সাহিত্যের উপজীব্য করে তোলার জন্য দেশের সাহিত্যিকগণকে আহ্বান জানান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে উপস্থিত শ্রোতা ও সাহিত্যসেবীগণের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেন, ‘আমি সাহিত্যিক নই, শিল্পী নই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনোদিন কোন মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। আমি সারাজীবন জনগণকে সাথে নিয়েই সংগ্রাম করেছি, এখনও করছি ভবিষ্যতেও যা কিছু করবো, জনগণকে নিয়েই করবো।

সুধী বন্ধুরা, আপনাদের কাছে আমার আবেদন, আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি যেন শুধু শহরের পাকা দালানেই আবদ্ধ না হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গ্রাম-গ্রামান্তরের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দনও যেন তাতে প্রতিফলিত হয়। আজকের সাহিত্য সম্মেলনে যদি এসবের সঠিক মূল্যায়ন হয়, তবে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হব...’ (মুনতাসীর মামুন ৪২)। 

রবীন্দ্রনাথ সমবায়নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে গ্রাম বা সমাজভিত্তিক উন্নয়নের জন্য চিরদিন স্বপ্ন দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের মতো পল্লী পুনর্গঠনে তৎপর থাকেন। উপরন্তু নতুন একটি দেশের স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু নির্বিকল্প দায়িত্ব পালন করেন। বিধ্বস্ত বাংলার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য তাঁকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে এবং দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়েছে। ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৭৩-৭৮ প্রকাশিত হয়।

গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র- রাষ্ট্র পরিচালনার এ মূলনীতিগুলোর ভিত্তিতে প্রণীত হয় পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু এ পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। রবীন্দ্রপ্রেমী বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তার উন্নয়ন-পরিকল্পনা পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। 

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একনিষ্ঠ পক্ষাবলম্বী ফরাসি ঔপন্যাসিক ও রাজনীতিক অঁদ্রে মালরো ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হয়ে এলে উপাচার্য অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ নতুন রাষ্ট্র নির্মাণে বঙ্গবন্ধুর সক্ষমতা সম্পর্কে তার অভিমত প্রত্যাশা করেছিলেন। মালরো সদর্থক উত্তর জ্ঞাপন করে বলেছিলেন- ‘অবশ্যই যদি না আপনারা শিক্ষিতরা, বুদ্ধিজীবীরা তাঁকে মেরে ফেলেন। মালরোর আশঙ্কা অপ্রতিকার্য হয়ে ওঠে; ঘাতকচক্র এই মহামানবকে এবং তার স্বপ্নকে নিষ্পন্দ করে দেয়। ‘অশ্রুভরা বেদনা দিকে দিকে জাগে’, গভীর বিষণ্ণতা বোধের ভেতর তার অক্ষয় ত্যাগ ও মুক্তিসাধনা আমাদের প্রতিনিয়ত পথ দেখায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //