মনসুর উল করিমের বুনন আর্ট স্পেস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ ৪০ বছরের কর্মজীবন পার করেন শিল্পী মনসুর উল করিম। তিনি সেখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের স্টুডিওতে আঁকতেন। অসংখ্য অ্যাওয়ার্ডও তিনি সে সময়ে পেয়েছেন। তবুও তিনি ফিরে যান রাজবাড়ী, সেখানকারই সন্তান তিনি। শেকড়ের প্রতি ছিলো তার আলাদা একটা টান..


এক.
রঙে রঙে আঁকা চিত্রের মানুষ, মাটির প্রেমে বেড়ে ওঠা শিল্পী মনসুর উল করিম সদ্য বিদায় নিয়েছেন। চলে গিয়েছেন আমাদের ছেড়ে- যে মাটির প্রতি তাঁর সবচেয়ে বেশি টান, যে মাটির সোঁদা গন্ধ তিনি ভালোবাসতেন- রেখায় রেখায় বহুবর্ণে একটু একটু করে তুলির স্পর্শে যিনি গড়ে তুলেছিলেন আপন শিল্পজগত এবং শিল্প ভাবনা। তার শিল্পের প্রতি আবেগ আমাদের চোখে পড়বে, আমরা তাকে আবিষ্কার করবো নতুন রূপে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ ৪০ বছরের কর্মজীবন ছিল তাঁর। তিনি সেখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের স্টুডিওতে আঁকতেন। অসংখ্য অ্যাওয়ার্ডও তিনি সে সময়ে পেয়েছেন। তবুও তিনি ফিরে যান রাজবাড়ী, সেখানকারই সন্তান তিনি। শেকড়ের প্রতি ছিলো তার আলাদা একটা টান। ‘তিনি ভাবতেন রাজবাড়ীকে তাঁর কিছু দেওয়ার আছে। এ কারণে তিনি এখানে বুনন আর্ট স্পেস তৈরি করেছেন। এ অঞ্চলের মাটি-প্রকৃতির রূপ সবটাই তিনি বুননের মাধ্যমেই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তিনি চাইতেন দেশ-বিদেশ থেকে চিত্রশিল্পীরা আসবে এখানে, তারা এসে কাজ করবে, থাকবে। বিদেশি চিত্রশিল্পীরা রাজবাড়ী সম্পর্কে জানবে, বাংলাদেশকে চিনবে- কিন্তু তা আর হলো না, বাবা চলে গিয়েছেন প্রিয় মাটির টানে। বাবার এমন স্বপ্নের কথা বর্ণনা করছিলেন প্রয়াত শিল্পী মনসুর উল করিমের কন্যা সাদিয়া।  



দুই.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী মনসুর উল করিম (ঠান্টু) গত শতকের ৫-এর দশকে রাজবাড়ী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলায় স্নাতক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে অধ্যাপনা শুরু করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর অধ্যাপনার পর তিনি তৃণমূল পর্যায়ে চিত্রশিল্পী গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রাইনগর এলাকায় স্বর্ণশিমুল তলায় নিজ হাতে গড়ে তোলেন ‘বুনন আর্ট স্পেস’। গ্যালারির গেট দিয়ে ঢুকতেই মনসুর উল করিমের তৈরি ‘এ মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তান’ মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য চোখে পড়বে। রয়েছে অন্যান্য ভাস্কর্যও, নানান ধরণের গাছ-গাছালিতে ভরা, পাখির কল-কাকলিতে মুখর, ছোট ঘর, মাছের জন্য ছোট একটা পুকুর- রয়েছে বসার জায়গাও।

দোতলা একটি ভবন, এটিকে তিনি মনের মত করে গড়ে নিয়েছেন। ভবনের নিচ তলায় রয়েছে ফটো গ্যালারি। দোতলায় প্রতিটি কক্ষে রয়েছে তাঁর হাতে তৈরি সুন্দর সুন্দর চিত্র। দোতলার বারান্দায় বসেই তিনি বেশি সময় ছবি আঁকতেন। মনসুর উল করিম আর কখনোই এখানে বসে রংতুলিতে ছবি আঁকবেন না, ভাববেন না জীবন বোধের কিছু রঙের খেলা নিয়ে, ভালোবেসে শিক্ষার্থীদেরও বলবেন না- বাণিজ্যিক শিল্পকলাকে কীভাবে জনশিল্পে পরিণত করতে হয় তার কৌশল।

তবু মৃত্যুই কী একজন মনসুর উল করিমকে কেড়ে নিতে পারে? না তা হয় না, শিল্পীর শিল্প বেঁচে থাকে আজীবন। তাই বোধ হয় তিনি জানতেন সকলে তাঁকে খুঁজতে এসে- দেখে যাবে তাঁর প্রিয় গ্যালারি, তাঁর গড়া-বুনন আর্ট স্পেস।    

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //