হুমায়ূন আহমেদ, ছোটগল্পের বাঁশিওয়ালা

জীবন কী? এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে, গল্প। জীবন একটি গল্প। সভ্যতার প্রথম সকালে প্রথম মানুষটি প্রথম চোখ মেলে দেখেছিল, জীবনের চারপাশে ছড়িয়ে আছে রাশি রাশি গল্প। বিচিত্র গল্প। সীমাহীন গল্প। বেদনার গল্প। হাসির গল্প। মাতাল গল্প। রুটির গল্প। পাখির গল্প। প্রাকৃতিক গল্প। হরর গল্প। সুন্দর গল্প। অসুন্দর গল্প। রাত ভাঙা জ্যোৎস্নার গল্প। কৃষকের গল্প। একটি গল্পে অজস্র আখ্যান। অনেক প্রতিশ্রুতি। লক্ষ চরিত্র। সেইসব আখ্যান চার চরিত্ররা হাত ধরাধরি করে মানুষের সংবেদি আত্মার ভেতর দিয়ে হাজার কোটি দিনরাত্রি পার হয়ে আজ মানুষের প্রতিদিনের প্রতিধ্বনি। আশার উদ্বোধনী সংগীত। প্রেরণার করুণাসিন্ধু। ডুব সাঁতারের অথৈ জলে ঘূর্ণিপাকের তাণ্ডব। সৃষ্টি ও সৃজনের বিস্ময়কর কারুকাজ এবং গল্প।

আমরা যেদিকে তাকাই গল্প দেখতে পাই। গল্প কালের স্রোত, জীবনের রুদ্ধ আবেগ, সৌন্দর্যের অশ্রুপাত, প্রেমের মহালগ্ন, বিরহের সাতকাহন, মিলনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, বিপ্লব ও বিদ্রোহের মুষ্টিবদ্ধ হাত- সব কিছুর ভেতর গল্প নিজের জায়গা করে নিয়েছে অবাক দক্ষতায়। জীবনের গতি যেখানে থেমে যায়, গল্প তার বাস্তব শরীর নিয়ে চেতন ও অবচেতনের দুয়ার খুলে সেখানে অনায়াসে হাজির হয়। জানান দেয়, আমি আছি। আমি থাকব। আমাকে ছাড়া মানবজীবন অচল। গল্পের এই সার্বভৌম রূপ ও রূপান্তর একজন গল্পকারের শ্রেষ্ঠ শক্তি।

  • গল্পকার হুমায়ূন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে চলা গল্পের পথটাকে আচমকা আমূল পাল্টে দিলেন। চমক দেখালেন। গল্পের জন্য আঁকলেন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক জগৎ। গল্পকাররা তো বটেই পাঠকও তার সঙ্গে দ্বিধাহীন স্রোতে যেতে শুরু করলেন। এবং সেই যাত্রা এখনো অব্যাহত। সব স্রোত, সব মোহ, সব ক্ষোভ, সব মিছিল, সব আরতি মিলিত হয়েছে তার সঙ্গে, তার গল্পে। তার গল্পের সৃষ্ট অনবদ্য সব চরিত্রের ভেতরে আমরা একটা কুহকের জগৎ পাই।

সেই শক্তির সম্পূর্ণ আধার নিয়ে বাংলা গল্পের পৃথিবীতে এসেছেন হুমায়ূন আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাগল্প চলে আসছিল একটা ম্যাড়মেড়ে কাদা থকথকে ভাব নিয়ে ক্লান্ত আর আশ্রয়হীন পথিকের মতো, গল্পকার হুমায়ূন আহমেদ এলেন মেরে কেটে তেড়ে, নিজস্ব ঘরানার মীড়ে গল্পকে দিলেন নতুন বিন্যাস, আনলেন গল্পের শরীরে তুমুল পরিবর্তন। দিলেন নতুন বাঁক, গড়লেন বাংলা গল্পের নতুন প্রতিমা। বাংলা গল্পের প্রথম মুক্তিদাতা সার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ, তার দেখানো পথ ধরে বাংলা গল্প প্রায় একশ’ বছর বিচিত্র ধারায় এগিয়ে গেছে অনেক অনেক পথ। রবীন্দ্র-পরবর্তী নিবিষ্ট গল্পকাররা জগদীশ গুপ্ত, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শওকত ওসমান, আনিস চৌধুরী, আবু রুশদ, সরদার জয়েনউদ্দীন, জহির রায়হান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং আরও অনেক গল্পকারের হাতে গল্প এগিয়ে চলছিল। কিন্তু গল্পকার হুমায়ূন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে চলা গল্পের পথটাকে আচমকা আমূল পাল্টে দিলেন। চমক দেখালেন। গল্পের জন্য আঁকলেন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক জগৎ।

গল্পকাররা তো বটেই পাঠকও তার সঙ্গে দ্বিধাহীন স্রোতে যেতে শুরু করলেন। এবং সেই যাত্রা এখনো অব্যাহত। সব স্রোত, সব মোহ, সব ক্ষোভ, সব মিছিল, সব আরতি মিলিত হয়েছে তার সঙ্গে, তার গল্পে। তার গল্পের সৃষ্ট অনবদ্য সব চরিত্রের ভেতরে আমরা একটা কুহকের জগৎ পাই। নতুন দিনের নতুন পাঠকদের জন্য ভিন্ন বৈশিষ্ট্য, আলাদা ও স্বাতন্ত্র্য ঘরানায় একজন বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদ এলেন, তার আগমনের জন্য বাংলা সাহিত্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ছিল, তিনি সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন। বাংলা গল্পে আনলেন নতুন দিন। পাষাণে দিলেন প্রাণ। বাঙালি পাঠকের চিত্ত নেচে উঠল অনির্বচনীয় আনন্দে ও সুখে। এই আনন্দ ও সুখ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, চলমান থাকবে। একজন গল্পকারের এই স্বয়ম্ভূ প্রবল ক্ষমতার কাছে আনত না হয়ে পারা যায় না। বরং কথাটা আমরা এভাবে বলতে পারি, এই আনত হওয়ার মধ্যে গৌরব আছে। বাঙালির গৌরবের শতকিয়া খুব কম। সেখানে একজন গল্পকার হুমায়ূন আহমেদ আমাদের জন্য গৌরবের স্মারক। আনন্দের উৎস। পালার প্রধান পালাকার। রূপান্তরের শ্রেষ্ঠ কারিগর।

এবারে দেখা যাক কী আছে হুমায়ূন আহমেদের গল্পে? তার গল্পের প্রধান আকর্ষণ বৈঠকি ঢং বা আয়োজন। আমাদের অধিকাংশ গল্পকারদের মধ্যে প্রবল ইচ্ছে থাকে, পাঠকদের জানান দেওয়া, যে তিনি মেধাবী একজন গল্পকার। চিন্তায় তিনি গভীর চেতনা সম্পন্ন। তার গল্প পাঠ করতে হলে অভিধান নিয়ে বসতে হবে। কেননা তিনি গল্পই লেখেন না, করেন নিরীক্ষাও। আর নিরীক্ষা করতে অবোধিত শব্দ ব্যবহার জরুরি। গল্প, গল্পের কাঠামো বা আখ্যানকে কঠিন থেকে কঠিনতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আরও জরুরি। না হলে পাণ্ডিত্য প্রকাশ পায় না। নিজেকে জাহির করা যায় না। এইসব করতে করতে গল্পকেই গিলোটিনের তলায় সপে দিয়েছেন। পাঠক প্রায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সেখানে গল্পকার হুমায়ূন আহমেদ একেবারে উল্টো। তিনি তার গল্প, গল্পের চরিত্র আর আখ্যান বা কাঠামোকে সরল অভিব্যক্তিতে, নিপুণ দক্ষতায় পাঠকের অস্তিত্বের আস্তিনে সাঁটিয়ে দেন চেতনার রঙকে পান্নার ঢংয়ে সাজিয়ে। সেখানে থাকে না কোনো পাণ্ডিত্য, থাকে না কাঠিন্য, থাকে না নিজেকে উপস্থাপন করার প্রবল ঝোঁক। গল্প, গল্পের আখ্যান, চরিত্র আর শব্দাবলি নিয়ে অবাক রাজত্ব তৈরি করেন তিনি। যে রাজত্বে একজন পাঠক অনায়াসে ডুব দিতে পারেন। এমন কী নিজেকে হারিয়েও ফেলতে পারেন। ডুব দেওয়া ও হারিয়ে ফেলতে পারার মধ্যেই পাঠক পেয়ে যান তার স্বপ্নালোকের চাবি। যে চাবির জন্য পাঠক দিন-রাত হাতড়ে বেড়ান। হুমায়ূন তার পাঠকের কাছে খুব যত্নের সঙ্গে খুঁজতে থাকা চাবির গোছা তুলে দেন। এইভাবেই তিনি তার গল্পের জগৎ তৈরি করেন। অতিলৌকিক গল্পও তার নতুন উপস্থাপন কৌশলে পাঠক পেয়ে যায় ভিন্ন এক স্বাদ। হয়তো ভয়ে গা ছমছম করছে, তারপরও নিষিদ্ধ গন্ধমের মতো হুমায়ূন আহমেদের গল্প তাকে পাঠ করতে হচ্ছে।

হুমায়ূন আহমেদের বড় কৃতিত্ব, তিনি খুব সাধারণ বা তুচ্ছ একটা বিষয়কে অসামান্য দক্ষতায় একটি মানবিক গল্পে রূপান্তরিত করতে পারেন। তুচ্ছ বা অতি সাধারণ বিষয়কে সার্থক একটি গল্পে পরিণত করার নির্মোহ ক্ষমতার ভেতরেই গল্পকারের প্রাণ-প্রাচুর্য, ক্ষমতার তরবারির ধার প্রমাণ রাখতে পারেন। হুমায়ূন আহমেদ সেই প্রমাণ রেখেছেন অজস্রবার। তিনি ছোট প্রাণে বড় প্রাণের চাষ করেন, অবশ্যই শিল্পমানকে যথাযথ রেখে। ছোট্ট টলটলায়মান পুকুরকে বিশাল জলদীঘিতে রূপান্তর করায় অসম্ভব দক্ষ তিনি। গল্পে গল্পে সেই শিল্পকলাকে বিন্যাস করতে পেরেছেন, কারণ, তার চেতন সত্তায় গল্প শিল্পকলার সমস্ত ছালবাকল নিয়ে বিরাজমান।

বাবা সংসারের কর্তা। তিনি তো মাছ তরিতরকারি কিনে আনবেনই। হ্যাঁ বাবা বেচারা সময় সুযোগ পেলে, হঠাৎ হাতে টাকা এলে একদিন একটা বড় মাছও কিনে আনতে পারেন। তাই বলে এই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে একটা হৃদয় মোচড়ানো গল্প লেখা সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। কারণ, গল্পকার যে হুমায়ূন আহমেদ!
জরী, দীপু, পরী, তিন ভাইবোন। তাদের মা হাসিনা আর বাবা। বাবা ছোট্ট একটা চাকরি করেন। হাত টানাটানি থাকেই। ছেলেমেয়েদের ছোটখাটো আবদার পূরণ করতে পারেন না বাবা। তার বড় কষ্ট। সেই বাবা এক রাতে বাসায় এসেছে অনেক রাত করে। ছেলেমেয়েরা ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। বাবা বড় একটা মাছ এনেছে। ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে এসেছে। হাসিনা মাছ বড় বড় করে কেটে ভাজছে। আজ সবাই আবার ভাত খাবে। ছোট্ট বাড়িটায় উৎসব।

গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু শেষ হলো না, কারণ গল্পকার যে হুমায়ূন আহমেদ, আপনার আত্মার দুয়ার ধরে টান দেবেন যে!

গল্পের শেষ তিনটি লাইন : ‘বাসন কোসন কলতলায় রাখতে গিয়ে হাসিনা অবাক হয়ে দেখে মেঘ কেটে অপরূপ জ্যোৎস্না উঠেছে। বৃষ্টিভেজা গাছপালায় ফুটফুটে জ্যোৎস্না। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকে সেদিকে। অকারণেই তার চোখে জল এসে যায়।’

আমি নিশ্চিত পাঠক, আপনার চোখে জল না এলেও আপনার সংবেদনশীল মন আপনাকে আমূল নাড়া দিয়ে গেছে। এই জন্যই হুমায়ূন আহমেদ অনন্য গল্পকার।

অবদমন, আত্মদমন মানুষের মনোজগতকে কতখানি বিষাক্ত, আগ্রাসী করতে পারে, আত্মহননের কারুকাজে মানুষ কতটা নিজের কবর খুঁড়তে পারে, গল্পের মায়াভুবনে তারই বিস্তার করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। গল্পের নাম ‘জ্বীন কফিল’। তার লেখার ব্যাকরণ অনুসারে তিনি গল্পটি শুরু করেছেন। পড়তে পড়তে পাঠক এগিয়ে যাচ্ছেন। ক্রমে ক্রমে পাঠক গল্পটির ভেতর ঢুকতে ঢুকতে এক অজানা জগতে প্রবেশ করে। গল্পকার উত্তম পুরুষে গল্পটি বলছেন। সাধু কালু খাঁ নামক এক অবাক মানুষের সঙ্গে দেখা করার জন্য গল্পকার অনেক দূরের এক গ্রামে গেলেন। সেখানে যাবার পর রাত কাটানোর জন্য একটি মসজিদে উঠলেন। গ্রামীণ মসজিদ। মসজিদের ইমাম তাদের সাদরে গ্রহণ করলেন। তারপরই গল্পের প্লট থেকে হারিয়ে গেল সাধু কালু খাঁ এবং গল্পকারের বন্ধু। গল্পে অবতীর্ণ হলেন মসজিদের ইমাম এবং তার স্ত্রী লতিফা। রাতে ঘুমুতে যাবার সময়ে ইমাম তার ও তার স্ত্রী লতিফার ঘটনা বলল গল্পকারকে।

গল্পটা বেশ বড়। হুমায়ূন আহমেদের গল্প খুব বড় হয় না। কিন্তু ঘটনা আর গল্পের টানাপড়েনের ঘনঘটায় এই গল্পটি বড়। তো গল্পকার সেই সকালে ঢাকা চলে এলেন। গল্পকারের জীবনের নানা ধরনের ঘটনা তিনি মিসির আলিকে বলেন। মিসির আলি মনোবিদ। তিনি যুক্তির মাপকাঠিতে সব ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করেন, সমাধান দেন। এই গল্পেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইমাম আর লতিফার ঘটনা দুইবার শুনলেন মিসির আলি। তারপর তিনি ‘জ্বীন কফিল’ গল্পের প্রধান কুশীলব লতিফার চরিত্রের ব্যাখ্যা দিলেন।

‘তিনি হাসিমুখে বললেন, আমি দু’জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বাবা। সেভেনটিওয়ানে আমার দুটি ছেলে মারা গেছে’- ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ গল্পটি এইভাবে শুরু করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। আমার ধারণায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করে যত লেখা হয়েছে, ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ গল্পটি চেতনাগত প্রবাহের কারণে শ্রেষ্ঠতম একটি গল্প। হুমায়ূন আহমেদ তার নিজস্ব ঢংয়ে গল্পটি শুরু করেছেন। গল্পটি পাঠ করতে করতে যত গভীরে প্রবেশ করেন পাঠক, তার নিজের চেতনাপ্রবাহ, গল্পের চরিত্র জলিল সাহেবের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। প্রতিজন পাঠকের মনে হবে, তিনিই জলিল। একাত্তরে সন্তান হত্যার নিঃসীম বেদনা ধারণ করে দাঁতে দাঁত কামড়ে বিচারের আশায় বসে আছেন, যার একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার দুটি সন্তান নিহত হয়েছেন। জলিল সাহেব এই বাংলার মাটি ও জলের ত্রিশ লক্ষ পিতার স্মারকস্তম্ভ।

জলিল সাহেব গল্পকারের বাসায় এসেছেন। সঙ্গে চৌদ্দ হাজার তিনশত সিগনেচার ফাইল। জলিল সাহেব তার পিটিশন ফাইলটি এগিয়ে দিলেন গল্পকারের কাছে। গল্পকার পাঠ করতে শুরু করলেন। পিটিশন জলিল সাহেব লিখেছেন- ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দশ লাখ ইহুদি মারা গিয়েছিল। সেই অপরাধে অপরাধীদের প্রত্যেকের বিচার করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু এদেশে ত্রিশ লক্ষ মানুষ মেরে অপরাধীরা পার পেয়ে গেল কেন এ নিয়ে আজ কেউ কোনো কথা বলছে না? জলিল সাহেব তার দীর্ঘ পিটিশনে সরকারের কাছে আবেদন করেছে যেন এদের বিচার করা হয়।... জলিল সাহেব পানের কৌটা বের করে পান সাজাতে বসলেন। শান্ত স্বরে বলেন, আপনি কি মনে করেছেন আমি ছেড়ে দেব? ছাড়ব না। আমার দুই ছেলে ফাইট দিয়েছে। আমিও দেব। মৃত্যু পর্যন্ত ফাইট দেব। দরকার হলে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের সিগনেচার জোগাড় করব। ত্রিশ লক্ষ লোক মারা গেল আর কেউ কোনো শব্দ করল না? আমরা মানুষ না অন্য কিছু বলেন দেখি?’

এই পোড়া অভাগা দেশে হুমায়ূন আহমেদ আছেন বলে জলিল সাহেবদের জন্ম হচ্ছে। ফলে জলিল সাহেব চেতনার সলতেটাকে নিবু নিবু করে হলেও জ্বালিয়ে রেখেছেন, গল্পের চরিত্রের অহংকারে। গল্পে আমরা দেখতে পাই, গল্পকারের সঙ্গে জলিল সাহেবের একটা হার্দিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মাঝে মাঝে জলিল সাহেবের বাসায়ও যান গল্পকার। জলিল সাহেবের নাতি বলে- ‘দাদার খাতা লেখা শেষ হলে যারা আমার বাবাকে মেরেছে তাদের বিচার হবে।’

‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ গল্পের শেষটুকু পাঠ করলে এই গল্পের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আমাদের সামনে উন্মোচন হবে।

হুমায়ূন আহমেদের গল্প আমাদের এই ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। আমাদের বাংলা গল্পের সেই বাঁশিওয়ালা তিনি, যিনি সাগরের অথৈ জলে আগুন জ্বালাতে পারেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //