হাজংদের খাদ্যাভ্যাস ও ঐতিহ্যবাহী খাবার

প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। মনোরম ভৌগোলিক পরিমণ্ডল, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ আর ঘন সবুজের এই দেশে প্রকৃতির আশীর্বাদে পরিপূর্ণ উর্বর পলিমাটির বিস্তার। ফুল-ফসলের আনন্দে অবগাহন করে এদেশে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ, তাদের সামজিক ও সাংস্কৃতিক বহুবর্ণিল আচার-উৎসব এ দেশকে করেছে বৈচিত্র্যময়। এদেশে যেমন বিভিন্ন জীবন ধারার বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়, তেমনিভাবে এদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও খাবারের ভিন্নতাও বেশ আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের মানুষের রসনাবিলাসী বা ভোজনরসিক হিসেবেও পরিচিতি আছে। বাঙালিদের আত্মপরিচিতির বেশ কিছু অংশ খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। বাঙালি খাবারের ভিন্নতা ও বিচিত্রতা ব্যাপক ও বিশাল। নদী, সমুদ্র, পাহাড়, হাওর ও শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় খাবারের তালিকা পাল্টে যেতে দেখা যায় বাংলাদেশে। অঞ্চলভেদে খাবারের ভিন্নতাও রয়েছে। আবার এদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও রয়েছে খাবারের দারুণ বৈচিত্র্যময় সমাহার।

বাঙালিদের আত্মপরিচিতির বেশ কিছু অংশ খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। বাঙালি খাবারের ভিন্নতা ও বিচিত্রতা ব্যাপক ও বিশাল। নদী, সমুদ্র, পাহাড়, হাওর ও শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় খাবারের তালিকা পাল্টে যেতে দেখা যায় বাংলাদেশে। অঞ্চলভেদে খাবারের ভিন্নতাও রয়েছে। আবার এদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও রয়েছে খাবারের দারুণ বৈচিত্র্যময় সমাহার

বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় পঁয়তাল্লিশটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে হাজং একটি। হাজংদের আছে নিজস্ব ভাষা, পোশাক ও ঐতিহ্য। সুপ্রাচীনকাল থেকেই হাজংরা তাদের আচার-আচরণ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সামাজিক প্রথা, রীতি-নীতি, খাবার-দাবার, পোশাক পরিচ্ছদ সব কিছুতেই আত্মমর্যাদাশীল সমাজ কাঠামো গড়ে তুলেছিল। আত্ম সচেতন, স্বাধীনতাপ্রিয় ও পরিশ্রমী হিসেবেই হাজংরা অধিক পরিচিত। এ সম্প্রদায়ের অধিকাংশই বসবাস করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে, হাজংদের আদিনিবাস উত্তর বার্মায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে হাজংদের পূর্বপুরুষের একটি দল তাদের আদিনিবাস ত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকায় প্রথমে প্রবেশ করে। পরবর্তীকালে তারা সে স্থান পরিত্যাগ করে আসামের কামরূপ জেলার হাজো নামক স্থানে বসতি স্থাপন করে। ধারণা করা হয়, কাচারি শব্দ হাজো থেকে হাজং শব্দের উৎপত্তি। সপ্তদশ শতকে মুগলদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে হাজংরা গারো পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং পরে সমতলভূমিতে বসতি স্থাপন করে। আবার অনেক হাজং মনে করে যে, হাজং নামটি গারো সম্প্রদায়ের দেওয়া। গারো ভাষায় ‘হা’ মানে মাটি এবং ‘জং’ মানে পোকা, অর্থাৎ মাটির পোকা। মাটির সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে এমন নামের উৎপত্তি ঘটে থাকতে পারে। হাজংরা নিজেদের মধ্যে পরস্পর হাজং ভাষাতেই কথা বলে থাকে। তবে হাজং ভাষায় আলাদা কোনো বিদ্যালয় নেই, হাজং ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষাতেই বিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহণ করে এবং অন্য সমাজের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য হাজংরা বাংলা ভাষাই ব্যবহার করে। 

হাজং নারীরা যে কাপড় পরিধান করে সেটিকে তারা ‘পাথিন’ বলে। পাথিন বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে তাঁতে বোনা ডোরাকাটা মোটা কাপড়, যা দৈর্ঘ্যে সাড়ে তিন হাত এবং প্রস্থে আড়াই হাত হয়ে থাকে। হাজং নারীরা বক্ষ বন্ধনী হিসেবেও এটি ব্যবহার করে। হাজং মহিলারা শীতকালে এক ধরনের নিজস্ব ঢংয়ে বোনা চাদর ব্যবহার করে সেটিকে তারা আর্গন বলে। হাজং পুরুষরা সামাজিক উৎসবের সময় ধুতি, তাঁতে বোনা ফতুয়া পরে থাকে। 

ধর্মের দিক থেকে হাজংরা হিন্দুধর্মের অনুসারী হলেও হাজংদের নিজস্ব দেব-দেবী রয়েছে, যেমন বাস্তুদেবী হচ্ছে রক্ষাকর্ত্রী, সম্পদদাত্রী ও রোগশোকের নিরাময়কারিনী। বাস্তুদেবীর জন্য নির্দিষ্ট স্থান বা নির্দিষ্ট দেবীমূর্তি থাকে না, সেখানে কেবল একটি পরিচ্ছন্ন বেদি থাকে। এই বৈশিষ্ট্যটি বেশ আকর্ষণীয় এ কারণেই যে, বেদি আছে কিন্তু দেব-দেবী নেই (এমনও হতে পারে এখানে অলৌকিক দেব-দেবীর পরিবর্তে লৌকিক জগতের যে কাউকে দেব-দেবী হিসেবে কল্পনা করে তার কাছে নিবেদন করা যেতে পারে) সেখানে তারা পূজা উৎসর্গ করে। গৃহদেবতার জন্য নির্দিষ্ট মন্দিরকে হাজংরা দেওঘর বলে। উপরোক্ত দেব-দেবী ছাড়াও হাজংদের আরও দেব-দেবী রয়েছে এবং সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন খাংখাঙী দেও, ময়লাদেও, হাওয়াদেও, পিঠাদেও ও গাঙদেও। হাজংরা খাংখাঙী দেবীর উপাসনা করে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে। হাজংরা হাসিখুশি, আনন্দপ্রিয় ও মিশুক প্রকৃতির হয়। সারাবছর তারা বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে। এই সময় তারা হাজং ভাষায় গান, নাচ করে থাকে। জীবনকে আনন্দঘন করার জন্য হাজং ভাষায় তৈরি হয়েছে সমৃদ্ধ সাহিত্য।

দুই
হাজংদের জীবনধারার বৈচিত্র্যের পাশাপাশি তাদের খাবার-দাবারের মধ্যেও রয়েছে বিচিত্রতা। তাদের খাবার তৈরি প্রক্রিয়াগুলোও বেশ ভিন্ন। পূর্বে হাজংরা জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। নিজেদের চাষ করা শাক সবজি, ফলফলাদি খাবার তালিকায় রাখতেই তারা বেশি পছন্দ করত। বর্তমানে জীবিকা নির্বাহের নানা ক্ষেত্র তৈরি হবার ফলে তারা চাষাবাদ ছাড়াও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।

বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজংরা তৈরি করে থাকে নানা ধরনের খাবার। হাজংদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত।। হাজংরা তিনবেলাই ভাত খেয়ে থাকে। তারা মাছ, কুঁচে বা কুইচ্চা মাছ, বিভিন্ন পশুপাখির মাংস যেমন- খাসি, পাঁঠা, হরিণ, শূকর, ভেড়া, মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কচ্ছপের মাংস খেতে পছন্দ করে। বিন্নি চালের ভাত ও শুঁটকি মাছও তাদের বেশ প্রিয়। সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবে অর্থাৎ বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা, বিয়ে, বছরের প্রথম জমিতে ধান ফলানোর সময় হাজংরা বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে থাকে। প্রাচীন হাজং সংস্কৃতি অনুসারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিন্নি চালের ভাত ও কচ্ছপের মাংসের রান্না থাকতেই হবে। হাজংদের ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার হলো- বুকনী ভাত, বিশি ভাত, হিদুল খারপানি, চুঙসা লিবা, তেল লিবা, খার লিবা, গিজা লিবা, কুসু পাতা, খারপানি, ডাল খারপানি, মান কুসু খারপানি, নাইলৌ পাতা ভাত ঘাটা উল্লেখযোগ্য। এসব খাবার তারা প্রায়ই রান্না করে থাকে। তবে বুকনী ভাত খাবারটি মূলত তৈরি করা হয় সাতা পড়া (অম্বাবাসী) নিয়ম পালনের সময়। এ সময় সাত দিনের জন্য তারা কৃষি কাজ বন্ধ রাখে, এই সাতদিন মাটি খোঁড়াখুঁড়িও ঠিক নয় এই বিশ্বাসের প্রচলন এখনো রয়েছে। অম্বাবাসী নিয়ম পালনের সময় ছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে এই বুকনী ভাত তৈরি করা হয়। এটি তৈরি করতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে আর লাগে বিন্নি ধান। তৈরি করা এই টক-মিষ্টি জাতীয় এই খাবারটিতে লবণ, খই মিশিয়ে পরিবেশন করতে হয়। আগে কোনো বাড়িতে বুকনী ভাত রান্না হলে সে বাড়ির গৃহিণী প্রতিবেশীদের ডেকে খাওয়াতো। তবে বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ব্যস্ততার জন্য এই খাবার তৈরির প্রচলন নেই বললেই চলে। 

বিশি ভাত হচ্ছে বিন্নি ধানের চাল দিয়ে তৈরি ভাত। এটি ভাপ নিয়ে তৈরি করা হয়। স্টিকি রাইসকেই হাজংরা মূলত বিশি ভাত বলে থাকে। এই বিন্নি চালের ভাত হাজংদের নানান উৎসবে যে তৈরি করা হয়, সেটি বোঝা যাবে রহেন্দ্র হাজংয়ের এই কটি লাইন দিয়ে- 

জিহাল মাও, জিহাল মাও/ হুনিক মরবাই আগে/ উগ্রান মাস আহিসে নুয়া খাওয়া লাগে/ পাড়াপুশি হুবাকৌ ডাকাও/ হাঙি হাঙি মদ বাঙাও/ কাচ্ছ মাসাং বিশি বাত/ আরো লিবা হাক।

খাবারের সোডা দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন রকমের খাবারও হাজংরা খেয়ে থাকে। খাবারের সোডার উপকারিতা আমাদের জানা আছে। পেটের সমস্যা দূর করার জন্য, শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য অর্থাৎ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দূরীকরণের জন্য তারা এইসব খাবার তৈরি করে থাকে। খাবারের সোডা দিয়ে রান্না করা তরকারিগুলোকে ক্ষারপানি বলা হয়। যেমন-

হিদুল ক্ষারপানি : চ্যাপা বা সিদল শুঁটকি, খাবারের সোডা, লবণ, কাঁচা মরিচ আর পানি মিশিয়ে এটি রান্না করা হয়।

কুসুপাতা ক্ষারপানি : এটি কচু শাক, খুদে চাল, ছোট মাছ, কাঁচা মরিচ, পানি ও খাবারের সোডা দিয়ে রান্না করে থাকে। 

ডাল ক্ষারপানি : ডাল, ছোট মাছ, কাঁচা মরিচ সেদ্ধ দেওয়ার পর খাবারের সোডা অল্প পরিমাণ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। আর আতপ চাল ঢেঁকিতে গুঁড়া করে, খাবাবের সোডা অথবা তেল দিয়ে যে তরকারি রান্না করা হয় সেগুলোকে লিবা হাক বলে। উল্লেখ্য, হাজংরা তরকারিকে হাক বলে।

চুঙসা লিবা : আতপ চালের গুঁড়া, বিচিকলা গাছের ভেতরের সব থেকে কচি অংশটি কেটে, খাবারের সোডা দিয়ে এটি রান্না করা হয়। 

গিজা লিবা : এটি চালের গুঁড়া, কচি বাঁশের অংশ, খাবারের সোডা দিয়ে রান্না করা হয়। কল্যাণী হাজং তার ছড়াতে লিখেছেন কীভাবে গিজা লিবা তরকারি রান্না করতে হয়। 

কুমলৌ বুড়াবাঁশ গিজা/ হাজংলা মুখনি তানকে মুজা/ গিজা হুতু হুতুকে কাট্যয়ৌ/ লবণ, সুতৌ, কাসা মুরিস দিয়ৌ/ কুইড়ানি ভাপ দিয়ৌ,/ পরিমাণকে পানি দিয়ৌ/ লিবা গুড়া চৌল ফেলয়ে দিয়ৌ/ চাবৌ করচালিদে।/ বেক হিজিলে, মাছ কাঁকড়া দিয়ৌ/ না থাকিলে হিদুল দিয়ৌ/ চুখৌ দেও দিয়ৌ/ খায় পরে ঘর গুষ্ঠি মিলিয়ৌ। (হাজংলা পসন্দ)

আবার কল্যাণী হাজংয়ের ছড়াতে পাওয়া যাবে হাজংদের বিভিন্ন খাবারের নাম, কোন মাসে কি ধরনের খাবার তারা তৈরি করে এ কথাও তিনি ছড়াতে উল্লেখ করেছেন। যেমন : হাজংলা ডাঙর বলমাছ দিয়ৌ/ কালৌই লিবা হাক নারা তানকি মুজা/ হাজংলা কুসুপাতা, চুকৌ পাতা, টকলে পাতা/ ইসা মাছ কাকড়াদেনারা তানকি মুজা/ হাজংলা কাচ্ছৌ মাসাং লাউ দে নারা/ বিনদান চাললৌ বিশিভাত নারা তানকি মুজা/ নালে পাতা, জুলকা লিবারাউ তানকি মুজা/ গুন্দাবা মাছ লগন আলুগুতা নারা/ বাখার বাখার মুজা/ লাউখারপানি বুতথে মাছদে নারা তানকি মুজা/ হাজংলা হিদুল পুতৌ,মাছ পুতৌ, ডিমৌ পুতৌ নারা/ নালি ভেননি নাস্তা খাবা তানকি মুজা/ চেংমাছ পুড়া, লাতথে মাছ পুড়া/ চেকভেক মাছ পালে আরও রঙ অয় উরা/ হাজংলা চেংমাছ পুড়া ভুর্ত্তা বানা/ চেকভেক মাছ নারাও খুবই মুজা/ হাজংলা জোষ্ঠ মাসনি গিজা লিবা নারা/ আষাঢ় মাসনি চুংসা লিবা নারা উদাউ ভালা/ বাগাবম, কুসুবম, চেঙে বম, হিদুল দিয়ৌ/ ধিকরি হাক নারে রঙ হুইয়ৌ।/ হাজংলা ভাদ্র মাসনি মানা কুসু নারা/ তাকা হামুক, ধান হামুক নারা তানকি মুজা/ হাজংলা কুচরি পানা, হাপলা লেয়া/ ইসা মাছ, খুলসৌ মাছ দিয়ৌ নারা তানকি মুজা/ লিকাভাত, মুইনা ভাত, বুকনি ভাত/ হাজংলা বাখার সখলা ভাত। (হাজংলা মুজা লাগা হাক)

নাইলৌ পাতা ক্ষারপানি : এটি পাট শাক, খুদে চাল, খাবারের সোডা দিয়ে তৈরি করা হয়। হাজংরা ভোজনরসিক এবং অন্যদের খাওয়াতে পছন্দ করে। এই খাবার-দাবারের কথা নিয়েও তারা রচনা করেছে নানাবিধ প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া ও গান। হাজংদের খাবার দাবার নিয়ে পীযূষ হাজংয়ের এই গানটিও উল্লেখযোগ্য- আবু ময় হুনিবা চায়/ কুন হাকরা খাইয়ৌ তয় পাশে মুজা/ নাকি জুলকা লিবারা/ আবু কয়.../

হুনিক পাগলি ময় কয়/ বেক হাকলা আলদা আলদা আসে মুজারা/ ধিক্রি হাক ভিতলি পাতা/ আরো বাঁশ গিজারা/ মুজা লাগে তানকে আবু/ মরমরে চুকৌ চঙে ভমরা/ ভিকি তিতৌ, চুনচুনি তিতৌ/ হাপলা পানা লেওয়া/ তানকে ভালা লাগে আবু/ দাহালা বাগা হাকরা/ নালে তিতৌ, দুংকলি তিতৌ/ কুসুপাতা, দংকেলে পাতা/ আরো মুজা লাগে আবু/ পাতলা আলু চুংসারা।

হাজংদের খাদ্য তালিকায় বিন্নি ধানের খইও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন সামাজিক উৎসব ও বিয়ে বাড়িতে বিন্নি ধানের ভাজা খই নিয়ে যাবার প্রচলন এখনো রয়েছে। বিশেষ করে মনসা পূজার সময় হাজংদের প্রত্যেক বাড়িতেই খই, চিড়া, দই খাওয়া হয়। হাজং নারীরা পৌষ ও চৈত্রসংক্রান্তিতে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে এবং এগুলোর নাম মুছি পিঠা, পুনি পিঠা, পাতি পিঠা, ডিকি পিঠা, চা পিঠা, মুয়া পিঠা ইত্যাদি। 

পরিশেষে এই বলা যায় যে, বৈচিত্র্যময় জীবনধারার সঙ্গে সঙ্গে হাজংদের খাবারেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পদ ও পদ্ধতি এবং হরেকরকম স্বাদ ও গন্ধের আনন্দময় সমাহার। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য নিয়ে রচিত তাদের সাহিত্যগুলোও তাদের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র তুলে ধরে। এই সমস্ত বিষয় আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ।

তথ্যসূত্র
তথ্য দিয়ে সার্বিক সহায়তা করেছেন :
পীযূষ হাজং, বগাঝড়া, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ।
কল্যাণী হাজং, বগাঝড়া, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ। 
অশ্বিনী কুমার রায়, লাঙ্গলজোড়া, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ।
জোছনা দেবী, লাঙ্গলজোড়া, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : হাজং খাদ্য

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //