নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:০৮ পিএম
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৩৭ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:০৮ পিএম
বাংলাদেশের শিল্পকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হলে শিল্পচর্চার পাশাপাশি প্রয়োজন আধুনিক শিল্প বিপণন সম্পর্কে সম্যক ধারনা বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসী তন্তুশিল্পী শফিকুল কবীর চন্দন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে চারুকলা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই কলাকে মার্কেটিং বা বিপণন করার জন্য প্রতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। ফলে আমরা শিল্পচর্চা করলেও তা বিশ্ব দরবারে খুব একটা জায়গা করে নিতে পারছে না।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টায় সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকার নিজস্ব সভা কক্ষে ‘শিল্পদর্শন ও শিল্পচর্চা’ শিরোনামে আয়োজিত 'বৈঠকী'তে তন্তুশিল্পী শফিকুল কবীর চন্দন এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক দেশকাল সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন পলাশের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বের পর শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
শফিকুল কবীর নিজের দেশ, মাটি ও মানুষকে কতটা ভালোবাসেন সেটা প্রতিটি বাক্যে যেন সুস্পষ্ট হচ্ছিল। তিনি শিল্পের দর্শন নিয়ে বলেন- শিল্পী হতে পারেন তারা যাঁরা সত্যিকারের রাজনীতিটা বোঝেন। নিছক ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ এ কথাটার সঙ্গে তিনি সহমত নন, কারণ শিল্পী কীভাবে মানুষকে দেখেন, তার দর্শন কী- এসকল বিষয় জরুরি। অন্যদিকে তিনি নিজেকে একজন কারিগর বলতেই সবচে বেশি আগ্রহ বোধ করেন।
উল্লেখ্য, প্রাচ্যের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে একদা বেড়ে ওঠা ছেলেটি আজ পাশ্চাত্যের শহরগুলোতে বসে তাঁত দিয়ে রঙে, নকশায়, বুননে হাজির করে চলেছে স্মৃতি ও ছবির শৈল্পিক মগ্নতা। সেসব স্মৃতি কথা, স্বপ্ন কথা, গল্প কথারা সুদূর ইউরোপে বাংলার ঐতিহ্যকাহিনী শোনায়। এমন এক ঐতিহ্যের, যা সভ্যতারও অগ্রজ!
বাংলাদেশ ভূখণ্ডে চারুশিল্প চর্চার বয়স ৫০ পেরিয়েছে কিন্তু বয়নশিল্প ঐতিহ্যের বয়স নিরূপণ দুরূহ। কিন্তু তা আধুনিক মননে শিল্প শিক্ষার ক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হয় মাত্র কয়েক দশক আগে। এমন একটি আনকোরা শিল্পমাধ্যমে বয়নভুমি নরসিংদীর সবুজ গ্রামের ছেলেটি গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকের গোড়ায় নিবিষ্ট চিত্তে তার চর্চা শুরু করে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শান্তিনিকেতনের পাঠ শেষে শিল্পচর্চায় পুরোদস্তুর তন্তু নির্ভর হয়ে পড়েন।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে মিলান প্রবাস তাঁর তন্তু চর্চায় বিঘ্ন ঘটাতে তো পারেইনি, উল্টো তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। পাশ্চাত্যের এই বনেদী শিল্পকেন্দ্রে তাঁর শিল্পচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে একথা বলাই বাহুল্য। তার বয়ন দর্শনে যুক্ত হয়েছে নানা আয়োজন ও প্রয়োজনের রসায়ন, আর তা প্রাচ্যের মননভূমির উৎকর্ষে পাশ্চাত্যের সমকালীন মানসকে উচ্চকিত করেই তিনি লালন করেন যেন! বাংলার কোন এক গাঁয়ের ঘরামীর খড় বিচালির জগতটিকে, কিংবা কোনো এক অখ্যাত তাঁতী বউয়ের হাতে জটপাকানো সুতার নলিটিকেই হঠাৎ দেখা যায় চন্দনের বোনা রংয়ের বিবৃতিতে।
শিল্পী শফিকুল কবীর চন্দন চট্টগ্রাম সরকারী চারুকলা কলেজ, তৎকালীন চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ও কলাভবন, শান্তিনিকেতন থেকে শিল্পশিক্ষা গ্রহণ করেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি তন্তু মাধ্যমে শিল্প রচনা করে আসছেন। তার শিল্পকৌশল বাংলার ঐতিহ্যবাহী বয়ন শিল্পধারার উত্তরাধিকার। তার শিল্প মাধ্যম তথা শৈল্পিক প্রয়াস সমকালীন তন্তু-বিশ্বশিল্পের ভাণ্ডারে উল্লেখযোগ্য সংযোজন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
বাংলার চারু-কারু অনুষঙ্গ নিয়ে তাঁর নিত্যভাবনার পাঁচালি, যার মধ্যে বাংলার বয়ন ও কারিগর পেশার অন্ত্যজদের নিয়ে সুলুকসন্ধানে শিল্পী চন্দন বিশেষ উৎসাহী। চন্দন প্রণীত পুস্তকাদি ‘শিল্পমনীষা’ (২০০১), ‘তন্তুকলা ও ট্যাপেস্ট্রি’ (২০০৪), ‘পরনকথা নগরদাইর’, ‘ভিঞ্চি নোটস’, ‘শিল্পদর্শন’ (২০১০), তন্তুবায় স্বরূপ সন্ধান (২০১৪), ‘মানুষ ভজে রং তুলিতে, ‘শিল্পবয়ান' (২০১৯)।
সার্বক্ষণিক তন্তুশিল্পী হিসাবে বর্তমানে ইংল্যান্ডের লিসেস্টার শহরে স্ত্রী ও দুই পুত্রসন্তান নিয়ে বসবাস করছেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh