কোন পথে গ্রুপ থিয়েটার?

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শিল্পকলা চর্চায় নবদিগন্তের উন্মোচন করেছে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নব-জাগরণ তৈরি হয় গ্রুপ থিয়েটার চর্চায়। অবশ্য ষাটের দশকেও গ্রুপ থিয়েটার চর্চা হয়েছে, তবে স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক গ্রুপ থিয়েটারভিত্তিক নাট্যদল। গ্রুপ থিয়েটার চর্চাকে বেগবান করার লক্ষ্য নিয়ে দেশে গড়ে উঠেছে সারাদেশের নাট্য সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম- গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই সংগঠনটি। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা ৩৪৬টি। 

সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ এবং অর্থ সম্পাদক রফিক উল্লাহ সেলিমকে আর্থিক অনিয়মের দায়ে বহিষ্কারের ঘটনাকে ঘিরে বিতর্কের মুখে পড়েছে সংগঠনের কর্মকাণ্ড।

গত ২২ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় পরিষদ সভায় কামাল বায়েজীদকে সর্বসম্মতিক্রমে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে ফেডারেশনের সম্পাদক (প্রচার) মাসুদ আলম বাবুর স্বাক্ষরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। পরে কামাল বায়েজীদ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকী একই সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমিরও মহাপরিচালক এবং শিল্পকলায় কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে লাকীকে দুদকে তলব করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে লাকীর সমালোচনা করায় তিনি লাকীর অনুসারীদের রোষানলে পড়েছেন। 

কামাল বায়েজীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দুদকে একটি অনুসন্ধান চলছে। পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। আমি তাকে একদিন এ বিষয়ে মৌখিকভাবে বলেছিলাম, তিনি যেন কিছুদিন সংগঠনের কাজ থেকে বিরতি নেন। এই কারণে হয়তো তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অব্যাহতি দিয়েছেন। ’

লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং কামাল বায়েজীদকে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বহিষ্কারের ঘটনায় দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন অনেকটাই বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দেশের গ্রুপ থিয়েটার চর্চাও পড়েছে গভীর খাদে। এই অবস্থায় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কর্মকাণ্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রামেন্দু মজুমদার।

অন্যদিকে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ মনে করেন- লিয়াকত আলী লাকী একই সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থেকে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি থাকতে পারেন না। সব মিলিয়ে দেশের নাট্যাঙ্গনে তৈরি হয়েছে বিভক্তি। 

গ্রুপ থিয়েটার চর্চা বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কর্মী সংকট, দক্ষ নাট্যশিল্পীদের জীবিকার প্রয়োজনে অন্য পেশায় যুক্ত হওয়ার মতো নানা ঘটনায় নিয়মিত গ্রুপ থিয়েটার চর্চা করার সক্রিয় দলের সংখ্যা এখন সারা দেশে একশ’র নিচে নেমে এসেছে। তবে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দাবি করে দেশে তিন শতাধিক নাট্যদল এখনো সক্রিয় আছে। গ্রুপ থিয়েটার বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রেপার্টরি নাট্যদল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নাট্যাঙ্গনে তৈরি করেছে অস্থিরতা। 

যদিও লিয়াকত আলী লাকীর অনুসারীরা বলছেন, শিল্পকলা একাডেমির কর্মকা-ের জন্য মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে তার দায় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নয়; কিন্তু মহাপরিচালক এবং ফেডারেশন সভাপতি যেহেতু একই ব্যক্তি, সেই দায় কী এড়াতে পারে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন? সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কী লাকীকে সাময়িকভাবে ফেডারেশনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরতি রাখার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। বরং লাকীর সমালোচনা করায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা ৪০ বছরের পুরনো সংগঠনটির ইতিহাসে প্রথম।

এই অবস্থা থেকে স্থিরতা ফিরতে রামেন্দু মজুমদারের প্রস্তাবে সমর্থন করছেন অগ্রজ নাট্যজনেরা। নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সারা যাকেরসহ অনেকেই বলছেন, সাময়িক সময়ের জন্য গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কর্মকাণ্ড স্থগিত করার জন্য; কিন্তু সেটি মানতে নারাজ ফেডারেশনের বর্তমান কমিটি। সব মিলিয়ে একটা অস্থির সময় পার করছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমান বয়সী নব-নাট্যচর্চা। এ মুহূর্তে সাধারণ নাট্যকর্মীদের মনে একটাই প্রশ্ন, কোন পথে গ্রুপ থিয়েটার?

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //