জীবনানন্দের উপন্যাস : আত্মজৈবনিক উপাদান ও তার সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক বহিঃপ্রকাশ

জীবনানন্দ দাশ উপন্যাস লিখেছেন এ সত্য মানুষ জানতে পারে তাঁর মৃত্যুর পরে। জাদুঘরের মতো কালো ট্রাঙ্ক থেকে বের হয় একে একে তেরটি উপন্যাস। এর মধ্যে ‘নিরুপম যাত্রা’র খাতার শুরুতে ‘a nobel’ বলে লেখা তারপর কাটা, মৃণাল ও বিরাজ ছাপার অক্ষরে ঊনত্রিশ ও সাড়ে তিন পৃষ্ঠা হলেও খাতার উপরে novel লেখা থাকার জন্য উপন্যাস বলে ধরে নেওয়া যায়। পূর্ণিমাও একাধিক খাতাজুড়ে লেখা। এখানেই শেষ নয় হয়তো তিনি আরো বেশি আমাদের কাছে আবিষ্কার হবেন এবং বেরিয়ে আসতে পারে অন্য কোনো বিখ্যাত উপন্যাস।

নানা তথ্য থেকে জানা যায়, জীবনানন্দ বরিশালের বাড়িতে একটি ট্রাঙ্ক ফেলে গেছেন আবার তাঁর কন্যা মঞ্জুশ্রীর কাছ থেকে ট্রেন বদলের সময় আর একটি ট্রাঙ্ক হারিয়ে গেছে, উদ্ধার করা যেতে পারে আরো সাহিত্যকর্ম সে হিসেবে উপন্যাসের এখানেই শেষ বলা যাবে না। জীবনানন্দ তাঁর উপন্যাস কেন প্রকাশ করেননি সে বিষয়ে নানা মন্তব্য থাকলেও আমরা ধরে নিতে পারি তিনি উপন্যাস নিয়ে আরো ভাবছিলেন এবং সুসময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। ট্রাঙ্ক ভর্তি করে লেখাগুলো সাজিয়ে রেখেছিলেন নিশ্চয়ই তা নষ্ট করার বা ফেলে দেওয়ার জন্য নয়।

জীবনানন্দ যে সচেতনভাবে উপন্যাস লেখার কথা ভাবছিলেন, এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর ‘আজকের বাংলা উপন্যাস’ শিরোনামের ইংরেজি প্রবন্ধে। এই প্রবন্ধে তিনি তারাশঙ্কর, মানিক, বিভূতিভূষণের উপন্যাসের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। আর এই সমালোচনা করার শক্তি তিনি পেয়েছিলেন সচেতনতা থেকে।

তাঁর উপন্যাসগুলো হচ্ছে, পূর্ণিমা- নভেম্বর ১৯৩১, কল্যাণী- জুলাই ১৯৩২, বিভা- ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩, মৃণাল- ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩, নিরুপমযাত্রা- মার্চ ১৯৩৩, কারুবাসনা- আগস্ট ১৯৩৩, জীবন প্রণালি- আগস্ট ১৯৩৩, বিরাজ- আগস্ট ১৯৩৩, প্রেতিনীর রূপকথা- আগস্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৩৩, জলপাই হাঁটি- এপ্রিল-মে ১৯৪৮, সুতীর্থ- মে-জুন ১৯৪৮, মাল্যবান- জুন ১৯৪৮, বাসমতির উপাখ্যান- ১৯৪৮।

‘জীবনযাপন’ নামে একটি উপন্যাসধর্মী বড় গল্পও পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও তাঁর ‘সফলতা নিষ্ফলতা’ নামে আরো একটি সাড়া জাগানো উপন্যাস রয়েছে বর্তমানে। জীবনানন্দ দাশের অধিকাংশ উপন্যাস ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে লেখা। ভাবতে অবাক লাগে ১৯৩০ এ রামযশ কলেজ থেকে চলে আসার পর ১৯৩৫-এ বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে টিউটর হিসেবে যোগদানের আগে তাঁর রোজগারের তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা ছিল না।

পিতার ওপর নির্ভর করে স্ত্রী এবং সন্তানের ভরণপোষণ করতে হতো। কারণ ইতিমধ্যে ১৯৩০-এ রোহিণী কুমার গুপ্তের কন্যা লাবণ্যের সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয়। এরকম এক পরিস্থিতিতে জীবনানন্দ দাশের মতো এক মহৎ লেখকের পক্ষেই সম্ভব ছিল একের পর এক উপন্যাস লিখে যাওয়া। কারণ সাহিত্য চর্চাকে তিনি অন্যসব কাজের চেয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের বলে বিবেচনা করেছিলেন। আর তাই এ সময়ের রচনাগুলোর বেশির ভাগই তাঁর আত্মজৈবনিক, কবিতাও তাঁর ব্যতিক্রম নয়।

(চলবে)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //