মেলাকে ঘিরে ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি

ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকে অমর একুশে বইমেলার উদ্ভব। প্রতি বছরের বইমেলা আমাদের একুশের চেতনা স্নাত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। কালের বিবর্তনে এই বইমেলা আমাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বইমেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব আর মিলনমেলাও। 

দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো মেলার দিনক্ষণ। আজই পর্দা নামবে এবারের বইমেলার। সব মিলিয়ে এবারের বইমেলায় সন্তুষ্টির সঙ্গে, ত্রুটির পাল্লাও বেশ ভারী। এই ত্রুটিগুলো আমলে নিয়ে আগামীতে তা সংশোধন করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পুনর্বিন্যাস করতে হবে মূল নকশা, অংশগ্রহণের নিয়মাবলি এবং স্থান বণ্টনের পদ্ধতিও।

বইমেলায় একাধিক লেখক-পাঠক, দশনার্থী ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে বসে বইমেলা। তবে মেলার মূল প্রাণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কারণ বাংলা একাডেমি চত্বরে শুধু সরকারি-বেসরকারি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল প্রান্তজুড়ে রয়েছে সব প্রকাশনা সংস্থার স্টল। ফলে পাঠক ও দর্শনার্থীর মূল আনাগোনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরেই; কিন্তু উদ্যানে মেলার মাঠকে এত বিস্তীর্ণ করায় ক্ষোভ লেখক-প্রকাশক ও দর্শনার্থীদের। তাদের মতে, এত বড় মেলার মাঠের সব স্টল ঘুরে দেখা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার মেলামাঠ ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ছিল না বসার জন্য যথেষ্ট স্থান। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরের ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে মেলা হলেও, মেলার সাজসজ্জা ছিল খুবই নিম্নমানের। ধুলার ওড়াউড়িতে অতিষ্ঠ ছিলেন সবাই। খাবার পানির ছিল অপ্রতুলতা। ছিল না পর্যাপ্ত টয়েলেটের ব্যবস্থা। আবার মেলায় হাজার হাজার বই প্রকাশ হলেও, বরাবরের মতো মানসম্মত বই ছিল হাতেগোনা। 

লিটলম্যাগ চত্বর ও শিশুচত্বরের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার মৌসুমি ও অপেশাদার প্রকাশনা সংস্থার ছিল ছড়াছড়ি। বইমেলাকে নিয়ে বাংলা একাডেমির প্রচারণাও আরও বাড়ানো উচিত হবে মনে করেন অনেকে।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হকের ভাষ্য মতে, এবারের মেলা আমার কাছে রুচিহীন মনে হয়েছে। আমার কাছে মেলা একদমই ভালো লাগেনি। পরিকল্পনাহীন মেলা মনে হয়েছে। আমাদের মতো মধ্য বয়স্কদের এত বড় মাঠে হাঁটাহাটি করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আবার মেলায় বসার জায়গা নেই বললেই চলে। তাই আমি আশা করব, বাংলা একাডেমি আগামীতে মেলার মাঠকে আরও ছোট করার পাশাপাশি উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করবে। 

তরুণ লেখকদের উদ্দেশে জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি তরুণ লেখকদের বলব, আপনাদের লেখা বই আকারে ছাপানোর আগে ব্লগে লিখেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, সংবাদপত্রে লিখে পরিচিত হন। এসব জায়গায় লিখে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া নেন। পাঠকরা যদি ভালো বলে, তাহলে বই আকারে প্রকাশ করুন। 

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, বইমেলা আমাদের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছিল, যে বইমেলা অন্য দেশের বইমেলা আয়োজকদের জন্য ঈর্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবার বইমেলা প্রকাশকদের সারাবছরের খোরাক জোগানোর স্থান হয়েছিল। সেই বইমেলা আমাদের সামনেই বিবর্ণ রূপ পাবে- এটা আমাদের কারওরই কাম্য নয় নিশ্চয়। তাই এখন থেকেই আমাদের ভাবতে হবে, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে পরবর্তী বইমেলা আয়োজনের জন্য। 

এক মাস বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য বছর মেলা শুরুর সপ্তাখানেক পর থেকে মেলা জমলেও, এবার শুরুর দিন থেকে জমজমাট ছিল মেলা। বিকেলে বইমেলার দুয়ার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ঢল নামে বইপ্রেমীদের। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই সব বয়সী দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের পদধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোর বিকেলে মেলায় তিল ধারণের ঠাঁই মিলত না। মেলায় আসাদের মধ্যে অধিকাংশ তরুণ বয়সী ছিলেন। তরুণদের বইমুখী হওয়ায় আশাবাদী সাহিত্যিকরা। প্রতিদিন মেলায় আসতেন দেশের জনপ্রিয় লেখকরাও। 

পাঠকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল দেশকাল পত্রিকার স্টল

প্রথমবারের মতো বইমেলায় অংশ নিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশকাল পত্রিকা। ত্রৈমাসিক এই ম্যাগাজিনটির লেখার মান, বিষয়, সম্পাদনা ও বিন্যাস দেখে প্রশংসা করেছেন পাঠকরা। কেউ কেউ একটি ম্যাগাজিন কিনে বাসায় গিয়ে পড়ে, পরবর্তীতে আবার ফিরে এসে কিনেছেন পুরনো সংখ্যাগুলো। শতাধিক পাঠক নিজ ঠিকানায় পত্রিকাটি পেতে অগ্রিম গ্রাহক হয়েছেন। এ ছাড়াও দেশের বহুল প্রচারিত শীর্ষ সারির সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকালের প্রশংসা করেছেন অনেকে। প্রতিদিন বিকেলেই দেশকাল স্টলকে ঘিরে বসত লেখক-পাঠকদের জমজমাট আড্ডা।

স্টলের দায়িত্বে থাকা দেশকাল পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক এহসান হায়দার বলেন, আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে আমাদের ত্রৈমাসিক দেশকাল পত্রিকা। এই ম্যাগাজিন নিয়ে মানুষের আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত। আশা করছি, আগামীতেও পাঠকরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //